• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় যুগান্তর মিত্র

খিদে

তিনদিন ধরে কারেন্ট নেই। মোমবাতি জ্বালিয়ে খেতে বসেছিল ওরা তিনজন।
ভাড়া থেকে পড়ে গিয়ে রঙ মিস্ত্রি নিতাইয়ের ডান হাতের কনুই ঘুরে গিয়েছিল। প্লাস্টার, ওষুধপত্র, ডাক্তার… অনেক খরচ হয়েছে। খোকন ধাক্কা দিয়েছিল, বুঝতে পেরেছিল নিতাই। খোকন কিন্তু স্বীকার করেনি।
আবার কাজ শুরু করেছে, কিন্তু পাওনা টাকা থেকে ধার শুধতেই বেরিয়ে যায় কিছুটা।
ওবেলা মাড়ভাত খেয়েছে। এবেলা
মঞ্জু পুঁইমুচুড়ি জোগাড় করে কড়াইতে নেড়েচেড়ে নিয়েছে।
মাখাভাত মুখের কাছে এনেও হাত নামিয়ে নেয় নিতাই। মুখে তুলতে পারে না। থালায় নাড়েচাড়ে নিশব্দে। আড়চোখে তাকায় মঞ্জু আর বুলির দিকে।
হারামি খোকন রেলে কাটা পড়েছিল। বেশ হয়েছে। ভগবান কঠিন শাস্তি দিয়েছে ব্যাটাকে। কাটা খোকনের কালচে লাল রক্তের রঙ অনেকটা থালার ভাতের মতোই।
বুলিও আড়চোখে দেখে বাবা-মাকে। পুলকের সাইকেলে লুকিয়ে ঘুরে এসেছে মাঠপাড়ার দিকে। লাল-কালো ছোপ ছোপ টেরিলিনের একটা জামা পরেছিল আজ। ভাতের রঙ সেইরকমই প্রায়। তারও হাত থেমে আছে।
দুজনকে ভাত মুখে তুলতে না-দেখে অবাক মঞ্জু ভাবে, রান্না ভালো হয়নি? হরিদের পচা  ডোবার পাশ থেকে পুঁইমুচুড়ি এনেছিলাম। গন্ধ লেগে আছে নাকি? ঠিক এইরকম একটা বাটিক প্রিন্টের শাড়ি ছিল মঞ্জুর। মনে পড়ে যায় আচমকা।
আড়চোখে বাকি দুজনকে দেখতে গিয়ে কেউ খেয়াল করে না মোম গলতে গলতে সলতে-তে পৌঁছেছে। দপদপ করছে। আলো নেভার আগেই সবাই খেয়ে নেয় চটপট।
খিদে ভুলিয়ে দেয় তাদের কল্পনার বিলাসিতা।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।