অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় অমিয়কুমার সেনগুপ্ত
by
·
Published
· Updated
পশুরা বনে
‘ভোরের বাঁশি’ পত্রিকার বার্ষিক অনুষ্ঠান সম্পাদকের গ্রামেই ।
কবিসম্মেলনে আমন্ত্রিত জেলার প্রায় সমস্ত কবিরাই।
প্রধান অতিথি ওই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ক্লাস সেভেন-পাশ বাণেশ্বর সহিস।
প্রধান অতিথির নাম শুনে প্রথমে অনুষ্ঠানে যেতেই সম্মত হননি জেলার বিখ্যাত ও জনপ্রিয় কবি অমৃত দাশগুপ্ত । তিনি বলেছেন, বার্ষিক সাহিত্য অনুষ্ঠানের সভাপতি হওয়া তো দূরঅস্ত , ওই অনুষ্ঠানেই তিনি যাবেন না । যতই হোক, উনি তো পলিটিক্যাল ম্যান! সেখানে তাঁর যাওয়াটা মানায় না ।
শেষে অনেক অনুনয়-বিনয় করে তাঁকে রাজি করিয়েছেন পত্রিকার সম্পাদক গণেশ দোলুই।
সম্পাদকের বাণেশ্বর সহিসকে প্রধান অতিথি না করলে আর হয়তো পত্রিকাই বেরোবে না । বাণেশ্বরবাবু তাঁর পঞ্চায়েত সমিতির বিজ্ঞাপনই শুধু দেন না, তাঁর পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে সব গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিরও বিজ্ঞাপন দেওয়া করান। অধিকন্তু, তিনিই পত্রিকাটির প্রধান উপদেষ্টা । খানিকটা বাধ্যবাধকতার তাগিদেই বাণেশ্বরবাবুকেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি করতে হয়েছে । এই অনুষ্ঠানের মুখ্য অর্থদাতাও তিনিই।
অনুষ্ঠানে আগত সব কবিরাই স্বরচিত কবিতা পাঠ করলেন । সকলের সঙ্গে হাততালি দিলেন বাণেশ্বরবাবুও।
আগেই যেহেতু সম্পাদক দুপুরের আহারের ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করেছেন, তাই সব কবিই কবিতা পাঠ করে ফের নিজ-নিজ চেয়ারে বসে আছেন ।
এ বার ভাষণ দেওয়ার পালা প্রধান অতিথি বাণেশ্বর সহিসের।
আগত কবিদের উদ্দেশে তিনি বললেন : এখনকার কবিরা মানুষের কথা বলেন না । শুধুই প্যানপ্যান করেন। কেউ বোঝেন না বা পড়েন না তাঁদের কবিতা । কোনও পড়াশোনা বা রাজনৈতিক জ্ঞান তাঁদের নেই । আমাদের মতন ওঁরা মানুষের সঙ্গে কথা বলেন না, মেলামেশাও করেন না। কাজেই, ওঁদের দিয়ে সমাজের কোনও কাজ হবে না ….
ইনিয়ে-বিনিয়ে কয়েক মিনিট বলে বসে পড়তেই কবিদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হল ।
অমৃত দাশগুপ্ত সব বুঝতে পেরে হাত-ইশারায় কবিদের আশ্বস্ত করলেন । প্রধান অতিথি ‘কাজ আছে’ বলে চলে যেতে চাইলেও অনুষ্ঠানের সভাপতি তাঁকে অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত বসে থাকার নির্দেশ দিলেন । এবং উঠলেন কিছু বলার জন্য —-
…. সাধে কি আর রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন : ‘পশুরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’? বনের পশুকে মাতৃক্রোড়ে বসিয়ে দিলে যা হয় তা-ই হচ্ছে । … কবিরা, এতে অত কষ্ট পাচ্ছেন কেন?