• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় সন্দীপ গাঙ্গুলী

নতুন দিগন্তে

আজ পয়লা বৈশাখ। দক্ষিণের খোলা জানালায় দাঁড়িয়ে অপালা।তার এক চোখে খেলা করে শৈশবের স্বপ্ন, ডাক্তার হওয়ার সাধ আর অন্য চোখে বাবার ভস্মীভূত মুখ।
সে নিজের অজান্তেই গেয়ে ওঠে ‘চোখের জলে লাগল জোয়ার’- এটা তীর্থবাবুর খুব প্রিয় গান ছিল। রাতের অন্ধকারে অনেকবার ওর বাবাকে এই গান গাইতে শুনেছে অপালা, হয়তো মায়ের উদ্দেশ্যে। যদিও মায়ের কোন অস্তিত্ব নেই তার জীবনে। শুনেছে মা তাদের ছেড়ে চলে গেছেন যখন সে এক বছরের, তাই ‘মা’ কথাটা অপালার কাছে মূল্যহীন শব্দ ব্যতীত আর কিছু নয়। তীর্থবাবু তার কাছে ছিলেন শৈশবের অভিভাবক, যৌবনের চেতনা। গতকাল চৈত্র অবসানের পড়ন্ত বিকালে তীর্থবাবু চলে গেলেন – রেখে গেলেন এক মুঠো যন্ত্রণা। বাবার মৃত্যুর খবর অপালা পায় দূরাভাষের মাধ্যমে। বাবার মৃতদেহ সৎকারে তার কোন অধিকার নেই জেনে, সে আর কাউকে বিব্রত করেনি।

অপালা পড়াশোনায় প্রথম থেকেই সামনের সারিতে থাকত।বাবাই ছিলো তার কাছে সবচেয়ে কাছের মানুষ। সেই বাবার সঙ্গেই বারো ক্লাসে পড়ার সময় তার একটা দূরত্ব তৈরী হতে থাকে।অত্যন্ত দূরদর্শী মানুষ ছিলেন তীর্থবাবু , তাই তাঁর অনুমান সত্যে পরিণত হতে বেশি সময় লাগেনি। একদিন স্কুল থেকে ফিরে আপালা তার বাবাকে সৌনাভের কথা বলে- তীর্থবাবু বাধা দেননি। কিন্তু অপালার এই প্রথম যৌবনের ভালোলাগা ভালোবাসায় পরিণত হওয়ার আগেই সৌনাভের সঙ্গে সম্পর্কে পলি পড়ে যায়। উচ্চমাধ্যমিকের পর সৌনাভ চলে যায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চেন্নাই আর অপালা তার শৈশবের স্বপ্ন ডাক্তারি পড়তে দিল্লি।

দীর্ঘ আট বছর পর গত ২ এপ্রিল হাসপাতালের বিছানায় দেখে অপালা তার প্রথম ভালোলাগা সৌনাভকে। অপালা এখন কলকাতার এক সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। সৌনাভ আক্রান্ত এক অচেনা ব্যাধিতে। টানা বাহাত্তর ঘন্টা ধরে অপালার প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে এক গোধূলির চুরি যাওয়া আলোয় তার অপূর্ণ প্রেম পাড়ি দিল অমৃতলোকে। সৌনাভ চলে গেল! রেখে গেল বাহাত্তর ঘন্টার এক দুঃসহ স্মৃতি।

একরাশ স্তব্ধতার মধ্যে অপালার কানে এলো গানের আওয়াজ, হয়তো পাশের কোন বাড়ির দূরদর্শনের- We shall overcome….we shall overcome….
সজলনয়নে অপালা অপেক্ষমাণ সেই দিনের, যেদিন সে মুক্ত হবে হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে- সে আবার নিজেকে খুঁজে পাবে নতুন জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার আনন্দে।।

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!