• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব – ২৩)

সোনা ধানের সিঁড়ি

৫০
প্রায় ত্রিশ বছর লেখালিখির সঙ্গে ঘর করার পর মনে হল, আমি লিখতে পড়তে দুটোই ভালোবাসি। লেখা ছাপানোর থেকে লেখা লিখতেই আমি বেশি খুশি হই। আমি সবসময় বলি, লিখে আমি যে আনন্দ পাই, সেই আনন্দ আমাকে কেউ কোনদিন দিতে পারবে না। এতদিন সাহিত্যের সঙ্গে ওঠাবসা করার পর বুঝতে পারলাম, এটা একটা এমন জগৎ যেখানে থাকে সম্পূর্ণ নিজের একটা পৃথিবী। দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা যেখানে প্রবেশ করতে পারে না। ঠিক পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে আসা যায়। কে কত বড় কবি সে তো সময় বলবে। কিন্তু একটা জিনিস পেয়েছি ——- হাজার না পাওয়ার মাঝেও নিজের মধ্যে পরিপূর্ণতার একটা স্বাদ। এজন্য সাহিত্যের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
৫১
অনেক বছর পরে ছোটবেলার হাত ধরে একটু বেরিয়েছিলাম আমার জন্মগ্রামের রাস্তা দিয়ে। আমি পায়ে পায়ে পথ ভুল করছি। কিছুতেই একটানা পথ চলতে পারছি না। কতবার যে থামতে হচ্ছে তা গুণে শেষ করা যাবে না। ভাগ্যিস ও সামনে ছিল তাই, না হলে যে কি হতো! নিজস্বতাকে কি কেউ এইভাবে খেয়ে নিতে পারে ? কিছুতেই চিনতে পারছিলাম না। শুধু বাড়ি আর বাড়ি। একটা গাছ নেই। ছোটবেলায় যাদেরকে খুব কাছ থেকে চিনতাম তারা আজ একজনও নেই। পথের মেজাজটাই নষ্ট হয়ে গেছে। কতবার এই পথ ধরে হেঁটে গেছি। কত কষ্টয় গাছের নিচে এসে দাঁড়িয়েছি। কখনও বসেও পড়েছি। গাছকে জড়িয়ে সামনে তাকিয়েছি। প্রখর দুপুরে গাছ প্রকৃত পিতার মতো বিছিয়ে দিয়েছে তার ছায়া। আজ কোথায় তারা! মনে আজ স্বজন হারানোর বেদনা। যেদিকেই তাকাই সারি সারি বাড়ির বন্ধ দরজা। চারিদিকে শুধু সন্দেহ আর বিদ্বেষের বিষবাষ্প। মানুষগুলোও কত বদলে গেছে। এদের একজনকেও আমি ঠিক চিনি না। আগে রাস্তায় দাঁড়ালে কত লোক হাত বাড়াত। এখন সব জানলা দরজা বন্ধ। কোনো কোনো বাড়ির অনেক উঁচুতে একটা জানলা হয়ত খোলা। তাও সেখানে কোনো মুখ নেই। অন্ধকারের মতো একটা গর্ত হয়ে আছে।
ক্রমশ…
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *