• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সীমন্তি চ্যাটার্জি (পর্ব – ১)

স্রোতের কথা

পর্ব ১

আজ সকাল থেকেই একটা অস্বস্তি শুরু হয়েছিল। বুঝতে পারছিলাম না কেন….সর্দিকাশি তো কদিন ধরেই চলছিল।আজ থেকে দেখছি ভিশন্ প্রবলেম হচ্ছে।।বুক টা তো সর্দিতে জ্যাম হয়ে আছে কয়েকদিন থেকেই।আর কাশি….বাপরে্।যেন মনে হচ্ছে ভিতর টা ওলোটপালট করে কিছু একটা বেরিয়ে আসতে চাইছে।এই 4030 সালে আমরা আর কেউ ভাইরাস জনিত রোগ নিয়ে মাথাই ঘামাই না।জাস্ট একটা মিরাসেফ ট্যাবলেটই সব রকম অসুখ সারাতে যথেষ্ট। কিন্তু আমার যে প্রতিদিন একটা করে খেয়েও সারছেনা,সেটা আমি ডিসক্লোজ্ ও তো করতে পারছি না। আমাকে যদি ল্যাবে পাঠিয়ে দেয়?।আর এটা তো খুবই অসম্ভব ব্যাপার। আমার মতো একটা সতেরো বছরের মেয়ে,যার অসীম, অনন্ত ইমিউনিটি থাকার কথা।সে একশো বছরের বুড়োদের মতো এই রকম
সর্দি কাশি তে ভূগছে!!!!!আজ এমিল আবার স্কুলে যাওয়ার আগে আমার দিকে খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল…ও টেক্সাসের মেয়ে। আমেরিকান মেয়েগুলো একটু বোকাসোকা ই হয়। আমাদের ইন্ডিয়ান বা আফ্রিকানদের মতো ওদের আইকিউ অতো বেশি হয়না।ও মনের কথা চেপে রাখার মতো চালাক নয়।তা বললো।_তোমার কি হয়েছে স্রোত?ইউ আর রেডিয়েটিং। তোমার গা থেকে যেন একটা আলো বেরোচ্ছে। আমি অবাক হলেও,সেটা ওর কাছে প্রকাশ করতে যাবো কেন?তাই হেসে (হাসতে গিয়ে কেশেও ফেলেছিলাম)। বললাম, আমি স্পেশাল স্পা করিয়েছি,শৌনকের সাথে এই উইকেন্ডে আমার ডেট আছে।ও ভালোমানুষ মেয়ে,আমাকে কনগ্রাচুলেট করে স্কুলে বেরিয়ে গেল।যাওয়ার আগে আমাকে লিফ্টের কথাও বলেছিল। কিন্তু আমি কিছুটা সময়, নিজের সঙ্গে থাকতে চাইছি,তাই ওকে না বলে, আমার ছোট্ট হ্যাচ ব্যাক গাড়ি টা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম,এই গাড়িটা আমার ভীষন ভীষন প্রিয়। আমার ষোলোতম জন্মদিনে আমার দিম্মার গিফ্ট।আর তখনই বুঝলাম যে আমার দেখতেও অসুবিধে হচ্ছে।এমন নয় যে একদম দেখতে পাচ্ছি না,ঐ যেন চোখের সামনে একটা আবছা পর্দা মত পড়ে আছে। আমি এই নিয়েই কাশতে কাশতে ড্রাইভ করতে লাগলাম, মাঝেমাঝে ই টিস্যু দিয়ে নাক মুছতে হচ্ছিল।উফ্ ভগবান,কি যে হোলো আমার।যাই হোক,স্কুলে পার্কিং এ পৌঁছে আস্তে আস্তে গাড়ী টা পার্ক করে নামতেই বলবীরের সঙ্গে ধাক্কা লাগল।এই ছেলে টা সবসময় তাড়াহুড়ো করে। অবাক হয়ে দেখলাম, আমার সাথে ধাক্কা লাগতেই বলবীর জাস্ট উড়ে দিয়ে প্রায় দশ হাত দূরে ছিটকে পড়লো।কি রে বাবা,এর নৌটঙ্কি দেখেই কি আজ স্কুল শুরু হবে।!!!বলবীর উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো_ক্যায়া রে ইয়ার,ইয়ে তুম লেড়কি লোগোকা নয়ি ফ্যাশন হ্যায় ক্যায়া?ইলেকট্রিক মলকে আগয়ি??!!!! আমি হেসে উঠলাম,খুদ‌কো সম্ভাল নহী পাতা,অউর দোষ লেড়কী ও কা??।যাই হোক, এমনিতে ই দেরি হয়ে গেছে,বলবীর কে স্যরি বলতে বলতেই ছুট লাগালাম। ক্লাসে গিয়ে বসতে বসতেই প্রনীতা ম্যাম চলে এলেন। ওনার ক্লাস টা আমরা সবাই খুব এনজয় করি। উনি ভার্চুয়ালি ক্লাস নেন খুব কম। নিজে এসে পড়াতেই ভালো বাসেন।বেশ লেকচারে ডুবে গিয়েছিলাম। আজ শৌনক আসেনি,ওর অন্য হাউসে আ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার ডেট আছে।কথা আছে রিসেসে আমরা একসাথে কাফেটেরিয়া তে লাঞ্চ করবো। কিন্তু আমার যা শরীরের অবস্থা।এইসব ভাবনা আর পড়ার মধ্যে ই ডুবে গিয়েছিলাম। হঠাৎ মাথার মধ্যে কি রকম করে উঠলো।প্রনীতা ম্যাম যে ডায়াসে দাঁড়িয়ে আছেন সেটা এভাবে দুলছে কেন?নাকি আমার চোখের সমস্যার জন্য এরকম দেখছি…লন্ডনের এই জায়গাটাতে আর্থকোয়েক খুব কমন্। সেটাই কি হচ্ছে??তাহলে তো আমাদের সবাইকে সেফ্ জোনে যেতে হবে।আ্যালার্মও বাজবে আগে থেকেই।কই কিছু বাজেনি তো। কিন্তু আর্থ কোয়েক হচ্ছে,প্রনীতা ম্যাম ইস্ ইন ডেন্জার।এটা ভাবার সাথে সাথেই আমি উঠে দাঁড়ালাম,আর তারপরেই ঘটলো সেই ঘটনা। আমি এক ভগ্নাংশ সেকেন্ডের মধ্যেই প্রনীতা ম্যামের কাছে পৌঁছে বি সেফ্ ম্যাম বলে চিৎকার করে উঠতেই প্রনীতা ম্যাম প্রায় সিলিং এর কাছে উড়ে গেলেন।তারপর আমার হাতের ইশারা অনুযায়ী একটা ফাঁকা ডেস্কের উপর বসে পড়লেন।গোটা ক্লাস স্তব্ধ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে।প্রনীতা ম্যাম ও।আর ঠিক তখনই প্রচন্ড দুলুনিতে ছিটকে পড়লো ডায়াস।ট্যাঁ ট্যাঁ করে বেজে উঠলো আর্থকোয়েক আ্যালার্ম। আমার দিকে তাকাতে তাকাতে ই সবাই ছুটলো সেফ্ জোনের উদ্দেশ্যে।প্রনীতা ম্যাম ও।যাওয়ার আগে আমার কাছে এসে আমাকে থ্যাংকস্ আর কাম্।এই দুটো কথা বলতে পারলেন। আরো কিছু বলবেন আমি জানি,সময় পেলেই বলবেন, অবশ্যই আজকের ঘটনা নিয়ে। কিন্তু তার আগেই আমি বুঝতে পেরেছি, আমার সাথে একটা বিশাল কোনো গন্ডগোল হয়েছে।আমাকেও যেতে হবে, আমার সেফ্ জোনে।যে সেফ।জোন একান্ত আমার।যেখানে আমি আমার মন প্রাণ সব উজাড় করে দিতে পারি, আমার সব চিন্তা, আশঙ্কা সুখ দুঃখের কথা নিঃসঙ্কোচে বলতে।পারি। পার্কিং জোনে গিয়ে একসাথে নাক মুছতে মুছতে আর এক হাতে গাড়ি স্টার্ট দিলাম,কাশির দমক টাও বেড়ে চলেছে ধীরে ধীরে।শৌনক অপেক্ষা করবে…. করুক।ওকে পরে ফোন করে নেবো। কিন্তু এখন আমাকে যতদূর সম্ভব তাড়াতাড়ি দিম্মার কাছে পৌঁছতে হবে।যে শুধু আমার দিম্মা তো নয়…. আমার না দেখা বাবা, অবহেলা ছুঁড়ে দেওয়া মা, আমার বন্ধু আমার প্রাণ…অথবা এই সব কিছুর চেয়ে অনেক অনেক বেশি।গাড়ি চালাতে চালাতে চোখ টা বন্ধ করে আবার খুললাম,ভিশন্ টা যদি আর একটু ক্লিয়ার হয়।দিম্মার
ভালোবাসা মাখানো মুখ টা মনের আয়নায় ভেসে উঠলো। আমি আসছি দিম্মা তোমার কাছে।

ক্রমশ….

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।