• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সীমন্তি চ্যাটার্জি (পর্ব – ২)

স্রোতের কথা

পর্ব ২

রাস্তাটা ফাঁকা আর আজকের ওয়েদার একেবারে সানি।তাই দেখার অসুবিধেটা অতটা হচ্ছিলো না।অথবা দিম্মাকে দেখবো,এই চিন্তাটাই এতটা আরামদায়ক যে সব প্রতিকূলতাই হয়তো ফিকে হয়ে যাচ্ছিল।এমনিতে দিম্মার বাড়ি আমার স্কুল থেকে এক থেকে দেড় ঘন্টার ড্রাইভ।দিম্মা প্রপার লন্ডনে থাকেনা।থাকে ইস্টলে বলে হ্যাম্পশায়ারের একটা ছোট্ট টাউনে।দিম্মার কাজের জন্য একেবারে আদর্শ। আমার দিম্মা একটা ছোট্ট ওয়েলনেস্ ব্র্যান্ডের মালিক,যা নানারকম ভেষজ ওষুধ, প্রসাধনী ও গৃহ পরিচর্যার সামগ্রী তৈরী করে।ভূমিসূতা বসুমল্লিক গোটা পৃথিবীতেই এক খুব বিস্ময় সৃষ্টিকারী নাম।এক অসাধারণ ট্যালেন্টেড ও বিখ্যাত সায়েন্টিস্ট কিভাবে সব ছেড়ে দিয়ে নিজের ছোট্ট ভেষজ ফার্ম নিয়ে এত খুশি হয়ে জীবন কাটাচ্ছে,তা নিয়ে দেশে বিদেশে জার্নালিস্ট রা আজও দিম্মার ইন্টারভিউ নিতে আসে।দিম্মা অবশ্য তাদের মিষ্টি হাসি আর নিজের তৈরী এককাপ হ্যাপিনেস টি উইথ ড্রাইফ্রুট কুকি ছাড়া আর কিছুই দেয় না। তবু একবার আমার প্রশ্নের উত্তরে আমায় বলেছিল কারণ টা।সেটাও আমার দিম্মার মতই স্পেশাল। আমার মাথার লালচে বাদামি চুলে নিজের তৈরী হেয়ার অয়েল মাখাতে মাখাতে বলেছিল জানিস তো সার্সী(জানিনা কেন দিম্মা আমাকে এই নামে ডাকে, আমার স্রোতস্বিনী নামটাও কিন্তু দিম্মার ই দেওয়া)জীবনে কোনো একটা সময়ে নিজের জন্য, পৃথিবীর জন্য বাঁচতে হয়।আর সেটা যখন কেউ ঠিকঠাক করতে পারে,তার আনন্দের কাছে সমস্ত নাম ,যশ,অর্থ মিথ্যে হয়ে যায়। সত্যি কথা বলতে এতো কিছু আমি বুঝিনি। কারণ দিম্মার সেই অপার্থিব সুন্দর গন্ধের তেল আর স্বর্গের আরাম দেওয়া মালিশেই বুঁদ হয়ে ছিলাম। কিন্তু এটুকু খুব ভালোই বুঝেছিলাম, আমার দিম্মার কাছে সেই মন্ত্রটা আছে,যে মন্ত্রে নিজেকে আর অপরকেও খুশী রাখা যায়।দিম্মার বাড়ি যাওয়ার সুন্দর রাস্তা টা ধরে যেতে যেতেই যেন মনটা ঠিক হতে শুরু করলো।এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের বিন্দুমাত্র চিন্হও নেই,দুপাশের ফুলে ভরা আয়নার মত পরিস্কার রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে নিজের ঝাপসা হয়ে আসা চোখ বারবার খোলা বন্ধ করতে করতেই গুনগুন করে দিম্মার শেখানো এক গান করতে শুরু করেছিলাম সবে।আর ঠিক তখনই তাকে দেখলাম,এই নিয়ে পঞ্চম বার।একদম রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে।ওকে কেউ একবার দেখলে জীবনে ভূলতে পারবে না। আমার মতো ইয়ং মেয়েরা তো নয়ই।এতো সুন্দর যে কোনো ছেলে হতে পারে, তাই ই তো ভাবতে পারিনা। আমাদের স্কুলে শৌনক কে সবাই মোস্ট হ্যান্ডসম্ গাই বলে। কিন্তু এই ছেলেটার চারদিকে যেন এক অপার্থিব আলোর বলয়।আর সবচেয়ে অদ্ভুত ওর পোষাক।এর আগে কোনো ছেলেকে এরকম রোব পরে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে কখনো দেখিনি।ওকে যেন বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা কোনো কেলটিক গড্ এর মতো লাগে। প্রথম বার দেখি এক হাইপার মার্কেটে। একটা র্্যাকের উপর পিঠ ঠেকিয়ে একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমারও চোখ চুম্বকের মতো টেনে নিয়েছিল ওর ঐ অপার্থিব রূপ আর অদ্ভুত ড্রেস। কতক্ষন তাকিয়ে ছিলাম জানিনা। হঠাৎ শৌনক ডাকতেই চমকে গেছিলাম।শৌনককে ওকে দেখাবো বলে ফিরতেই দেখি,ও আর সেখানে নেই……দ্বিতীয় বার দেখেছিলাম স্কুল লাইব্রেরী তে।একটা আ্যাসাইনমেন্ট কমপ্লিশনের জন্য খুব খাটতে হচ্ছিলো। অনেকক্ষন লাইব্রেরি ওয়ার্ক করতে হতো। এরকমই এক শেষ বিকেলে আমার ডেস্কের উল্টোদিকে ওকে বসে থাকতে দেখেছিলাম।ম্লান বিকেলের আলোয় ম্রিয়মান লাইব্রেরী যেন ওর রূপের আভায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল।ও আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল,যেন কিছু বলতে চায়। আমিও কতক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম জানিনা, হঠাৎ লাইব্রেরিয়ানের ডাকে চমক ভেঙে ওনার দিকে দেখে আবার ওর দিকে তাকাতেই দেখি….. কেউ নেই……. এই ভাবেই আরো দু’বার যথাক্রমে আমার হোস্টেলের সামনে এবং নাইটক্লাবে ও দেখেছি। নাইটক্লাবে তো আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিলোও।আর এখন এই রাস্তায়….. নাঃ এই অবস্থায় আমার এই ঝাপসা ভিশনেও আমি ভূল দেখছি না।ও ই দাঁড়িয়ে আছে।তবে যা ই হোক,এখন আমি প্রেম বা রহস্য কোনো মুডেই নেই।তাই ও যে ই হোক আর যতই দাঁড়িয়ে থাক আগে আমি দিম্মার কাছে যাব।এ্যাক্সিলেটরে চাপ দিয়ে,ফ্লাইট মোড্ অন করলাম,ওর ঠিক উপর দিয়ে আমার গাড়ি টা ওকে পেরিয়ে উড়ে গেল,তারপর ফ্লাইট মোড্ অফ করতেই গাড়িটা মসৃণ ভাবে মাটি ছুঁলো।যেতে যেতে একবার পিছন ফিরে দেখলাম অদ্ভুত!!!!…..হাত নাড়ছে ,মুখে হাসি!!!!আর না তাকিয়ে যতটা পারলাম, স্পীডে দিম্মার বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলাম,আর দশ মিনিট, তারপর ই আমার দিম্মার “ভালোবাসা”।

ক্রমশ….

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।