উঠে দাড়ানোর শক্তি শেষ। হামাগুড়ি দিয়ে কোনরকমে ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরের বাগানের ঝোপঝাড়ের দিকে এগুলো সে। অন্ধকার চারদিকে। থারো জানে, তামোর ছোটখাট বৌটি কিছুক্ষণের মধ্যেই তার জন্য তৈরি সুস্বাদু গরম খাবার এনে দেবে। কিন্তু সেই পার্থিব বস্তু দিয়ে সে তার প্রভুকে সন্তুষ্ট করতে পারবেনা কিছুতেই, আর প্রভুকে অভুক্ত রাখলে উৎকৃষ্টতর খাদ্যও তাকে এতটুকু শক্তি দেবে না। নিজের বাড়ির চৌহদ্দি পেরিয়ে থারো নিজেকে হিঁচরে টেনে পৌঁছে গেল পাশের বাড়িতে। বাড়ির সামনের পুকুরে হাঁস গুলো তখনও প্যাঁক প্যাঁক করছে। তার উপস্থিতি হয়তো ওরা অনুভব করে থাকবে। বাড়িটা তামোর বন্ধু কোইজাম বীরার। পঞ্চাশ বছরের স্বাস্থ্যবান যুবক সে। খুব কষ্টে বাড়ির কাঠের গেট টা ধরে উঠে দাঁড়ালো থারো। তার সমস্ত পেশি আর অস্থি তাকে জানান দিলো তাদের অতিভঙ্গুর অবস্থা। কিন্তু তার মুখে এখন উজ্জ্বল ক্রুর হাসি। বাড়িটি অরক্ষিত।বাগানে বা গেটের মুখে কোথাও কোন মোমবাতি জ্বলছে না। তার নাভি এখন মুক্ত। মুখে অবোধ্য মন্ত্রচ্চারণ। আঙ্গুল ক্রশ করা ।
ফিরতি পথে দেখা হয়ে গেল বৌটির সাথে। হাতে খাবারের প্লেট। আশ্চর্য হয়ে তামোর বউ দেখল থারো এখন প্রায় সোজা হয়ে হাটছে আর তার চোখের মনি যে কোন চতুষ্পদ প্রাণীর মতো এই অন্ধকারেও জ্বলছে। কয়েকমুহূর্ত দুজনে দুজনের দিকে অপলক চেয়ে থাকে।পরক্ষণেই মেয়েটি হাতের প্লেট কোনরকমে নির্দিষ্ট জায়গায় নামিয়ে রেখে দৌড়ে ঢুকে পরে নিজের কোটরে।
বহুদিন পরে যন্ত্রণাহীন একটা রাত কেটেছে থারোর। সুখনিদ্রার রাত। সকালের সূর্য তখনও ছোট্ট উঠোনটায় পৌঁছায়নি, তুমুল হাহাকার আর কান্নায় ঘুম ভেঙে গেল থারোর। নানা রকম আওয়াজের থেকে তামোর গলাকে আলাদা করা যাচ্ছে সহজেই কারণ ও দাঁড়িয়ে আছে থারোর দরজার ঠিক সামনে।
” অ্যাবক থারো, এই মুহূর্তে বাইরে এসো শয়তানি মানুষখেকো বুড়ি।” সাদা শোকের পোশাকে তামোর কষ্ট ক্রমশ রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছিল প্রচন্ড রাগে।
” তুমি.. তুমি আমাকে মেরে ফেলতে পারতে… আমার বন্ধু… বীরা.. বীরা… ওঃ.. আজ আমি তোমাকে শেষ করে ফেলব ডাইনি কোথাকার।” থারো বিছানায় তখনও নিশ্চল। তামোর সব কথা শুনতে না পেলেও নির্ভুল বুঝলো যে তার শিকারকে তার প্রভু গ্রহণ করেছেন। নিশ্চিন্তে সে পাশ ফিরল।
” কি করছো টা কি তুমি!” তামোর তরুণী বউটি আর থাকতে পারলোনা। তামোর হাত ধরে চেষ্টা করলো তাকে তার বৃদ্ধা প্রপিতামহীর বেষ্টনীর বাইরে বের করে আনতে।
“ছাড়ো, ছাড়ো আমায়। বুড়িটা সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ওকে আর ক্ষমা করা যায় না। শয়তানি… ও শয়তানি ডাইনি একটা।”
” লোকে তোমায় পাগল বলবে তামো। কি প্রমাণ আছে যে বীরার মৃত্যুর জন্য ও ই দায়ী?”
” কেন, তুমিই তো বললে যে কাল সন্ধ্যায় ওকে দেখেছ আমার বন্ধুর বাড়ির দিক থেকে আসতে। বলোনি তুমি দেখেছো ওকে? বলো, বলো নি ?”
“হ্যাঁ তা দেখেছি কিন্তু এই নিয়ে কি থারোর সাথে ঝগড়া করবে তুমি? তোমার ভয় করে না ?”
“ভয়! আমার প্রানের বন্ধু কে মেরে ফেলেছে ও । বীরা আর আমি গত কালও একসাথে ইয়ো আর শুওরের মাংস খেয়েছি। কত কথা হল আমাদের। ওর বদলে কেন আমায় খেলোনা রাক্ষুসী টা!” কান্নায় গলা ধরে আসে তামোর।
” কি সব বলছ তামো! তুমি আমার কথা, আমাদের বাচ্চাদের কথা একটুও ভাবো না, না? আমার দিব্যি, তুমি ঘরে চলো। একটু শান্ত হও।”