[ পরের দিন মোহনা একটা ছবি পাঠালো… তার গায়ে ওর লেখনীর রেশমী বুনোনে একটি মখমলী আত্মকথন :
“ছায়া দোলে তারি ছায়া দোলে… দিবা নিশি ধরি”
…. সে ছায়ায় আমার জীবনযৌবন আবৃত হয়,..আমি সুর হই…ছন্দ হই… প্রগলভা হওয়ার স্পর্ধা দেখাই অনায়াসে… আয়নার সামনে নিজেকে পাওয়ার মত…! তাকে আমার রূপে বাঁধতে হয় না… তাই, রহস্যটুকুকে আর আড়ালে রেখে তাদের গুরুত্ব বর্ধন করতে হয় না… তারা খোলা হাওয়ায় সহজপাঠ শেখে…!
বিস্ময়াবিষ্ট চোখে অর্কপ্রভ তাকিয়ে থাকে ছবিটির দিকে!… মনেহল, হেমকুণ্ড যাবার পথে পাহাড়ী রাস্তায় এভাবেই দেখেছিল… ‘বিপজ্জনক খাদের পাশে vally of flowers ‘!!… সেই গভীর খাদ!… তার চারপাশে রঙীন ফুলের বিচিত্র সমারোহ … কোথাও ভ্রূযুগলের অহৈতুকী বিস্ময়, ঠোঁটের কোণে অস্ফুট রক্তিম আভাস, বাঁধনহারা উপচে পড়া শরীরী হিল্লোল, ”অন্ধকার বিদিশার নিশার” মত ঘন কেশের প্রগাঢ় উচ্ছ্বাস, আবার কোথাও ছায়াঘেরা বিস্তীর্ণ অনাবৃত রহস্যাঞ্চল !!
মো….. না…… লি…… সা….. , অস্ফূটে টেনে টেনে উচ্চারণ করল অর্কপ্রভ। মোহনার দাদু তো দেখছি নামটির উৎস সম্বন্ধে বেশ সচেতন ছিলেন!!… গজদন্ত ঢাকা চাপা ঠোঁট … ঠিক সেই হাসি!!… যুগ যুগ ধরে যার উত্তর খুঁজে বেড়াবে মানুষ! মোহময়ী!!
‘রদ্যাঁ’র ভাস্কর্যও দেখা আছে!… কোলকাতায় এসেছিল। উফ্!!… মোহনার এ ছবি যেন সে নারীমূর্তির প্রিন্ট আউট!! ]
( কিছুক্ষণ পরে অর্কপ্রভ মেসেজ করলো )
অঃ : ওঃ হো!… কী যে ছবি পাঠিয়েছ !! 😲
মোনালিসা, তুমি শুধু তোমার দাদুর নও, ‘দ্য ভিঞ্চি’রও!!
‘রদ্যাঁ’র ভাস্কর্য তুমি হয়তো দেখোনি, কিন্তু গ্রীকস্থাপত্যের ভেনাসের মূর্তি তো দেখেছ!! কিংবা, স্পিলবার্গের ‘টাইটানিক’ চলচ্চিত্রের সেই ছবি আঁকার দৃশ্যটি!!… বার বার ভেসে উঠছে চোখে।
তোমার পাঠানো এ ছবি, আমার জীবনে এপর্যন্ত পাওয়া উপহারগুলির মধ্যে একমেবাদ্বিতীয়ম্।
মহাকবি কালিদাস হলে আর একটি ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম্’ লিখে ফেলতেন।
রবিঠাকুর ছাড়া প্রেমের বিষয়ে কিছু বলার আভিজাত্য থাকে না, সে আমাকে যতই ‘প্রাচীন’ ভাবো… উনি হয়তো, তোমাকে নিয়ে আরেকবার ‘শেষের কবিতা’ লিখতেন!!
তোমার এ ছবির উপযুক্ত লেখার, আমার আর কী ক্ষমতা আছে, বলো!! তবু, বিজ্ঞাপিত চাকচিক্যে ভরা গড়পড়তা জীবনের ভাষায় যা লিখলাম তা তোমার সৌন্দর্যের পক্ষে নেহাতই বেমানান :
মোঃ : ভালবাসা জ্বাল দিতে দিতে যে আদর উথলে পড়তে চায়!! 😊
অঃ : বাঃ… কী যে সুন্দর করে বলতে পারো !!… তার অন্য কোন মানে হয় তো হোক না!! 😊
জানো, এই নিয়ে আমার একটা টীপ্পনী আছে!
মোঃ : কী রকম!?
অঃ : বলেছিলাম না, তোমার ভাবনা ও লেখনীতে আমার ছায়া পাই!! দেখো :
ভালবাসা হল দুধের মত।… জ্বাল দিলে, উথলে ওঠার সময়টা হল আবেগ… চলকে পড়তে চায়!… ক্রমশঃ, থিতু হয়ে ঘন হয়, সর পড়ে, তখন সেটা প্রেম।… তারপরেও ফোটালে আরো ঘন হতে হতে ভালবাসা জমে ক্ষীর… তখন সে আর দুধ থাকে না… মিষ্টি তৈরী করা যায়… দেবভোগ্য!
এ পর্যন্ত সব গতানুগতিক… ঠিকই ছিল। কিন্তু, ফুটতে থাকা দুধে যদি একটু বাইরের কিছু মেশে, দুধ কেটে ছানা হয়ে যাবে! সেটা কী হতে পারে, বলতে পার !? 😊
মোঃ : পরকীয়া!! 😃😆
অঃ : হ্যাঁ… Good girl… হা,হা,হা… ক্ষীরের চেয়ে ছানার মিষ্টিই সবাই বেশী ভালবাসে!! তাই না!? 😃😃
মোঃ : হা,হা, হা, হা,…..
মোঃ : জানি না যে, ডাক্তারবাবু!… শুধু, চাইতে পারার স্বাধীনতাটুকু আছে!
অঃ : বেশ, তাহলে অনলাইনেই অর্ডার দিও, অনলাইনেই পৌঁছে যাবে ; শুধু, মাঝপথে আদর বদলে যদি শূন্য প্যাকেট পৌঁছয়, কোম্পানী দায়ী হবে না!! 😆
মোঃ : সে আমি বুঝে নেবো… কোম্পানীর থেকে আদায় করেই ছাড়ব। 😂😂
অঃ : বেশ।
তাহলে কথা বলা দিয়ে শুরু করা যেতে পারে !… কোন সময় কথা বলা যাবে ?
মোঃ : হ্যাঁ… এটা একটা কাজের কথা বটে…
কথা বলার সময়টা আপাতত বলি… সবচেয়ে নিরাপদ নিশ্চিন্ত সময় আমার জন্য… ওই দুপুর ৩টে থেকে ৫ টার মধ্যে… সোম থেকে শুক্র… ওই সময়টায় ঘরে আমি একাই থাকি… 🙂
অঃ : অমন করে বোলো না… একা থাকার সময় জানালে তো তোমার কাছে চলে যেতে ইচ্ছে করবে!! 😃😃… যে সম্মান আমার কাছে গচ্ছিত রাখলে তার দেখভাল করতে যে মন উতলা হবে!!… হবে না!?
মোঃ : হ্যাঁ তো!!
অঃ : 😊😊… ছবিটা তোলায় কিন্ত বেশ মুন্সীয়ানা আছে! তুমি কি photography শিখেছ!?
মোঃ : না তো!!
অঃ : তোমার ছবি বা ছায়াবার্তা দেখে মনেহয়, কোন পেশাগতভাবে দক্ষ ক্যামেরাম্যানের কাছে শেখা। বেশ ভাল conception আছে কিন্তু তোমার!!
মোঃ : উঁ….., এসব কথা ভাল্লাগছে না।
অঃ: আচ্ছা, বলব না। …তবে, অন্য কথা বলি… কোথায়, কখন, কিভাবে বেরোবে বলো!?
মোঃ : উঁ……. সেটাও না হয় পরে বলবো!?
অঃ: বেশ… তবে, বলতে হবে… না বললে কিন্তু এই নিয়ে আর কথা বলার আড়ম্বর করা চলবে না। 🙂
মোঃ : তবে তো বলতে হয়…
” নহি দেবী, আমি সামান্যা নারী… ” 😃
অঃ : কেন!?… বদমাস্!!… আগের সব কথা উড়ে গেল!? 😊
তোমাকে তো আমি “সামান্যা” হিসেবে দেখিনি 🙂
মোঃ : বেরোনোটা তো সময় এবং সুযোগ দুজনের দেখা হলে তবেই হবে… 🙂…
একটা কথা বলি… আমি কিন্তু ভারি নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ… তাই অন্য অনেকের মতো ইচ্ছে হলেই আমি অনেক কিছু করতে পারি না… এই যেমন ইচ্ছে হলেই বেরোতে পারি না… আমায় জবাবদিহি করতে হয়…
এমন মানুষের সান্নিধ্যে হাঁফিয়ে উঠবেন না তো…!?
জানিয়ে রাখলাম… 🙂
অঃ : ব্রেক কষছো!!… অথচ, আক্রমণ করার বেলায় তিনি কত সাহসী, কতটা বেপরোয়া, কতটা উদ্দাম হতে পারেন সেটা জেনে নিতে চাও!! 🙂
মোঃ : কে আক্রমণ করবে…!?
আমেরিকা না চীন…!? 😃😃
অঃ : জানো না, সময় ও সুযোগের মধ্যে বিশেষ মুখ দেখাদেখি হয় না!?😊
ফিউজ হলে গেলে চলবে কেন!?
তোমাকে যে আমার আদর করতে ইচ্ছে করছে।… বলো, তা কিভাবে হবে!!… তুমিই তো চেয়েছিলে!!…আমি কথা রেখেছি, এবার তোমার কথা রাখার পালা। 😀। তোমার প্রগলভতা, উচ্ছ্বাস, আবেদন সব কিছুকে আমি তো মর্যাদা দিয়েছি, অসম্মান করিনি,… সে আবেদনে তো সাড়া দিয়েছি!!
তবে, শুধুমাত্র পুতুল কিনে এনে সাজিয়ে রাখার বাসনা মনেহলে, আমি কিন্তু থাকবো না।
যতদিন না, সে সময় বার করতে পারছ, এই নিয়ে আর বড় বড় কথা বোল না।… মুরোদ তো বোঝা গেছে। 😎
মোঃ : থাকবেন না…!?
আটকে রেখে তো ভালোবাসানো যায় না… !! 😒
অঃ : পুতুল খেলার মত ছেলেমানুষ তো কেউ নই!… এই বয়সে মনটা যে কোথাও স্থির হতে চায়!! খেলার মধ্যেও যে মনের involvement থেকে যায়!!… ফুটবল, ক্রিকেটে দেখো না!! 😊
মোঃ : জানি তো আপনি ছেলেমানুষ নন…
আমারও তো গন্ডী কাটা… হয়তো সাহচর্য টুকু ছাড়া আর কিছুই আমার দেওয়ার ক্ষমতা নেই..
ভেবে দেখবেন… নিতান্তই পুতুল খেলা মনে হলে… আমি সরে আসা শ্রেয় মনে করি
অঃ : বেশ তো!… খেলা না হলে খেলা মনে করবো কেন !!…
কিন্তু, এখন, আমার যে তোমায় খুব পেতে ইচ্ছে করছে!!… নিদেনপক্ষে, ভিডিও কল যদি করতে!!
মোঃ : ভুল হয়ে গেছে খুব…
আমি নিতান্তই সামান্য একটি মানুষ… ক্ষমতাও তাই সামান্যই… হয়তো বা নেই-ই…. কাজেই কিচ্ছুর বড়াই আমি করছি না… করি না কখনো।
অঃ : : কেন ভুল হয়ে গেছে, বলছ? তোমাকে যে সত্যি আমার আদর কর্তে ইচ্ছে করছে!!… এ তো তোমার দাবী ছিল !!… 🙂
মোঃ : ভুল হয়েছে… কারণ নিজের ক্ষমতা (বা মুরোদ) সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল নই… তাই
অঃ : আমাকে কি বাজিয়ে দেখছিলে?
পুতুলখেলা যে চাও না, সেটা তো তুমিই বললে!
তাহলে, এখন সরে যাওয়ার কথা বলছ কেন!?
মোঃ : সেরকম স্বভাব আমার নয় যে… আমি তো সুদের কারবারি নই… আমি শুধু হৃদয় বুঝি….
তাতে যে এত দেনা পাওনাও থাকে… সেটা ভুলে যাই
অঃ : আমি তো দেনা পাওনার কথা বলিনি!!… তুমি কিছু পেতে চেয়েছিলে… আমাকে উদ্দীপিত করতে চেয়েছিলে!!
মোঃ : আপনি বললেন যে… আমার মুরোদ নেই… সত্যিই আমার ক্ষমতা খুব সামান্য…
অঃ: আমি তো দিতে চেয়েছি!… কিছু পেতে চাওয়ার কথা তো বলিনি!… ভাবিনিও…
কিন্তু, তোমার অন্তরে যে সত্যি মুক্তোর খুঁজে পেয়েছিলাম!… তুমি তো সেভাবেই আমার কাছে ধরা দিলে!! সব ঝিনুকে তো মুক্তো পাওয়া যায় না! পেয়েছি যখন, তখন তার একমাত্র দাবীদারও তো আমারই হওয়ার কথা!!..
তোমার এই বোধ, এত সুন্দর লেখনী, রোমাঞ্চকর অভিযাত্রী হবার বাসনা!…
এখন তুমি কী বলছ!?
মোঃ : জানিনা… কেমন যেন সব এলোমেলো হয়ে গেলো….
কষ্ট হচ্ছে কেমন…
ধরুন…. এই সাহচর্যটুকু ছাড়া সহজলভ্যতায় আমার আর কিছু দেওয়ার সামর্থ নেই… ভেবে দেখে নিন ভালো করে… বন্ধুত্ব করা যায় কি….!?
তারপর বলবেন না হয়…!
অঃ : এখন আমার তোমাকে ভীষণভাবে আদর করতে ইচ্ছে করছে, ব্যস !!! তুমি কেন সেটা নেবে না!… ‘উদ্দাম ভালবাসা সামলানো’র কথা তুমিই তো বলেছিলে!!
আমি যখন এগিয়েছি, তখন তোমার পিছিয়ে যাওয়া তো চলবে না!!
মোঃ : আমি যাচ্ছি…
আমি কোনদিন কাউকে বাধ্য করিনি… আপনাকেও করবো না…
স্বচ্ছন্দে ত্যাগ করতে পারেন…!
অঃ : কী বলছ !!… তুমি কি আমার কাছ থেকে সরে যেতে চাইছ !?
তোমার এত mood swing হলে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকবে যে!!… আর, তা ক্রমশঃ সম্পর্কের ওপর বুঝি বোঝা হয়ে বসবে!… সে বোঝা ভারী হলে সম্পর্ক যদি তা বইতে না পারে!?
মোঃ : আপনি আমায় কষ্ট দিলেন যে…!
অঃ : আমি কী কষ্ট দিলাম?
(অনেকক্ষণ কোন উত্তর না পেয়ে)
অঃ : এটা আমার প্রাপ্য ছিল না। এটা তুমি কী করলে! তুমি আশ্রয় চেয়েছিলে, আমি নির্দ্বিধায় আমার হৃদয়ে তোমাকে স্থান দিয়েছিলাম। তুমি তোমার অতৃপ্তির কথা বলছিলে, অনেক আদর পেতে চেয়েছিলে। আমি তো তা ভাবিইনি। ভাবিনি বলে তুমি কিছু ক্ষোভ, অভিমান উগরে দিয়েছিলে। আমি সেটাও প্রশমিত করায় রাজী হয়েছিলাম।
তারপরে, আর কিছু মেলাতে পারছি না।
‘ এ কেমন ভালবাসা কে জানে, কী ভেবে গো ব্যথা দিলে এ প্রাণে…. ‘😒
মোঃ : আমি তো কোন অতৃপ্তির কথা বলিনি…
ক্ষোভ বা অভিমানের তো প্রশ্নই নেই…
ভালোবাসলে আদর পেতে বা করতে ইচ্ছে করে.. সেটা কোন অতৃপ্তি থেকে নয়….
আপনারা পুরুষ মানুষরা শরীর ছাড়া কিচ্ছু বোঝেন না….!?
অঃ: What nonsense !! সাবধানে কথা বলবে।
একথা আমায় বলতে পারলে? অন্যায় হবে না!?
তাহলে তো, তোমাদের মত মহিলাদের কোন পুরুষবন্ধু করাই উচিত নয়!!
মোঃ : বেশ… ভারি অন্যায় হয়েছে আমার
পারলে ক্ষমা করে দেবেন..!
শুভরাত্রি !
অঃ : হ্যাঁ, শুভরাত্রি।…শুধু একটা কথা বলে রাখি… ইচ্ছে হলে, কাল উত্তর দিও…
আগে বলেছিলে, ‘আমি যে খারাপ আছি…তেমনটা বললে যে অন্যায় হবে…. …. …. ভালবাসা তো গণ্ডীবদ্ধ জিনিস নয় যে, তাকে নিয়ম-কানুন মেনেই চলতে হবে!!…. ‘
এসব বলে তাহলে কী বোঝাতে চেয়েছিলে!?? কেন বলেছিলে???