পরদিন সকালে আমার উঠতে বেশ দেরি হল। চোখ খুলে দেখি দেওয়াল ঘড়িতে এগারোটা বাজে। ও হো ! সকালের ভিসিটিং আওয়ারও তো শেষ হওয়ার মুখে। আমাকে ঘুমোতে দেখে হয়তো কেউ জাগায়নি। নাকি কেউ দেখা করতেই আসেনি। ঠিক তখনি এক ওয়ার্ড বয় দরজার কাছ দিয়ে উঁকি মেরে আমাকে দেখে চলে গেলো। তার কিছুক্ষন পরেই দরজা নক করে লুলিয়া ঢুকলো। কিন্তু কেন বুঝলাম না ওর মুখে হাসি নেই। টুলটা টেনে আমার বেডের পাশে বসলো। জিজ্ঞাসা করলো, “কেমন আছেন অর্ক?”আমি হেসে বললাম, ” ভালো, শ্রেয়ান কেমন আছে? “লুলিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ওর কন্ডিশন ইম্প্রুভ করেনি।তাই বন্ডে সই করে ওনার কাকা ওনাকে নিয়ে গেছেন আজ ই সকালে।”আমি ভীষণ ঘাবড়ে গেলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, “ওতো এখন আনকনশাস। কোথায় নেওয়া হলো ওকে? কিভাবেই বা নিলো? আমাকে কেউ কিছু জানালো না? “আমি উত্তেজিত হয়ে ঘাড় উঠিয়ে ওঠার চেষ্টা করলাম। লুলিয়া তাড়াতাড়ি আমাকে ধরে শুইয়ে দিয়ে বলল, “না অর্ক একদম না। আপনি কিছুতেই উঠবেন না। ওনাকে চেন্নাই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রপার মেডিকেল গাইডেন্সেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আপনি চিন্তা করবেননা প্লিজ। “আমার মেজাজ টা গরম হয়ে আছে। সঙ্গে দুশ্চিন্তাও রয়েছে। মাথার শিরা গুলো দপ দপ করছে। লুলিয়া হয়তো আমার মনের কথা বুঝতে পেরেছে তাই কথা ঘোরানোর চেষ্টা করলো। লুলিয়া বললো, “আজ আপনার কোমরের ট্রাকশান খুলে দেওয়া হবে। ভালো আছেন বুঝলে আজ ডাক্তার আপনাকে রিলিজ করে দিতে পারে। “কথাটা কিছুটা মলমের কাজ করল। তার পর আরো কিছুক্ষণ আমাদের মধ্যে সাধারণ কথা বার্তা হল। ভিসিটিংআওয়ার শেষ হতে লুলিয়া চলে গেলো।
শ্রেয়ানকে নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছি। মনকে এই বলে সান্ত্বনা দিলাম যে ওর সঙ্গে ওর কাকা আছে। শুনেছি উনি অনেক বড় প্রভাবশালী। নিশ্চই শ্রেয়ানকে সেরা চিকিৎসার ব্যাবস্থাই করবেন। ও ঠিক ভালো হয়ে যাবে। ব্রেকফাস্ট আর খেলাম না আজ। একেবারে লাঞ্চই খাবো। যা অখাদ্য খাবার এই মুডে খেতেও ইচ্ছা করছে না। রেডিওটা চালিয়ে গান শুনতে লাগলাম। মনে হল একবার শ্রেয়ানকে ফোন করলে হত। কিন্তু আমার ফোনটা পুলিশএর কাছে জমা আছে। সদ্য কেনা ফোনটার জন্য মায়াও হল। থানায় গেলে ফোনটা নিশ্চই পাওয়া যাবে। কিন্তু শ্রেয়ানকে হসপিটালের ফোন থেকে ফোন করেও তো লাভ নেই। ওর ফোনটা ওর কাছে নেই নিশ্চই। ওর কাকার ফোন নাম্বার বা নাম কিছুই জানিনা।আমি দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে সিডির ছড়াটা মনে মনে আওড়াতে থাকলাম। কিন্তু দূর ছাই কিছুই তো মাথায় আসছে না। আর ফোল্ডারগুলো। সে গুলোই বা কিসের ভেতরের রেক্ট্রনগুলার ডিসাইনগুলো কিসের সংকেত? চোখ বন্ধ করে মনে মনে এই সব কথাই ভাবছিলাম। হঠাৎ মনে হল আরে ফোল্ডারের নামগুলো তো জায়গায় নাম দিয়েছিল। মত কটা ফোল্ডার ছিল এখন আর মনে পড়ছে না, কিন্তু এটা মনে পড়ছে যেন সেগুলো অ্যালফাবেটিক্যাল অর্ডারে ছিল। আর খুব সম্ভবত অ্যালফাবেটের বিভিন্ন লেটার দিয়ে ছিল। আরো গভীরভাবে ভাবতে ভাবতে লাগলাম। ফোল্ডার গুলো আদৌ অর্ডারে ছিল না। তাই খেয়ালে পড়েনি। এখন মনে হচ্ছে A থেকে Z দিয়ে বিভিন্ন জায়গার নাম দিয়ে ফোল্ডার গুলোর নামকরণ করা হয়েছে। তাহলে কি কবিতার ইংলিশ চিঠি গুলো মানে ইংলিশ অ্যালফাবেটের লেটার? চিঠি মানেই তো লেটার। গুড। আমি এটলিস্ট একটা ডিরেক্শন তো পাচ্ছি। চিঠি মানেই লেটার আর সেগুলো দিয়েই ফোল্ডার গুলোর নাম আরো ভাবতে হবে। তার আগে কনফার্ম করতে হবে যে ফোল্ডারগুলো ছাব্বিশটাই আছে আর A থেকে Z এর এক একটা লেটার দিয়ে এক একটা ফোল্ডারের নাম হয়েছে। নার্স এসে ঢুকলো ঘরে। বলল, “ডাক্তারবাবু আসছেন আপনাকে দেখতে। “