যা শুনলাম তাতে বুঝলাম বাসটা আমায় রাস্তায় ছিটকে পড়তে দেখে আমার মাথার কয়েক ফুটের মধ্যে এসে দাঁড়িয়ে যায়। তাই আমি ভাগ্যের জোরে বেঁচে যাই। কিন্তু শ্রেয়ান ছিটকে গিয়ে লাইট পোস্টে ধাক্কা খায়। হেলমেট ছিঁড়ে মাথা থেকে খসে যায় আর মাথাটা গিয়ে ঠুকে যায় কোনো পাথর বা ডিভাইডারের শক্ত স্ল্যাবে। পুলিশ এসেছিলো আমার বয়ান নিতে। আমি জগার কথা কিছু বললাম না। দেখতে চাইছিলাম পুলিশ নিজে থেকে কিছু বলে কিনা। হয়তো মিসেস বিজয়ন সবটা জানেন না। কিন্তু পুলিশ তৃতীয় ব্যক্তির কোনো উল্লেখ করলো না। আমার বেশ ধাঁধা লেগে গেলো। তাহলে জগাকে কি কেউ দেখতে পেলো না? ওর যা অবস্থা ছিল, ওর তো ওখানে থেকে পালানো সম্ভব ছিল না। তাহলে সে গেল কোথায়?অ্যাক্সিডেন্টের পরের দিন সন্ধ্যেবেলা। আমার কোমরে এমন একটা কিছু লাগানো হয়েছে যে আমি এক ইঞ্চিও নড়তে পারছি না। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম তিনদিন এভাবে থাকতে হবে তারপর অন্য ব্যবস্থা। বাল্মীকি এসেছে দেখা করতে। মিসেস বিজয়ন ও এসেছেন তার ছেলে নিয়ে দেখা করতে। বাল্মীকি আগে এসেছিলো। ওর ছোট রেডিওটা আমাকে দিয়ে বললো, “দাদাবাবু এটা শুনবেন এফ এম আছে। খানিকটা সময় কাটবে। “বাল্মীকি খুব ঘাবড়ে গেছে। ও বেশ উদ্বেগেও আছে। বলল শ্রেয়ান কে দেখতে দেওয়া হয়নি। বাল্মীকি চলে যাওয়ার পর এসেছিলেন মিসেস বিজয়ন। ওনার ছেলেটা বেডের ধরে এসে আমাকে অবাক হয়ে দেখছে। আমি গালটা টিপে আদর করে বাচ্চাটা হাসলো। মিসেস বিজয়ন জিজ্ঞাসা করলেন, “এখন কেমন আছেন মিঃ চৌধুরী? “আমি বললাম,”ভালো
কিন্তু আপনি অকারণে এতো কষ্ট করছেন কেন মিসেস বিজয়ন?” উনি কপট রাগ দেখিয়ে বললেন, ” আমায় প্লিজ লুলিয়া বলে ডাকবেন। ওটাই আমার ডাক নাম। আর আমি কষ্ট করছি আমার কেষ্ট কে পাওয়ার জন্য।আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠে আমার কেষ্ট কে খুঁজে দিন।
আমি মৃদু হেসে বললাম, “নিশ্চই “। একথা ভেবে ভালো লাগলো যে ওনার সেন্স অব হিউমার ভালো। এতো কঠিন সময়ও উনি কতটা স্পোর্টিং। আমি বললাম, “মিসেস বিজয়ন ও সরি লুলিয়া পারবো কিনা জানিনা তবে যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আচ্ছা শ্রেয়ান কেমন আছে? ‘ লুলিয়া বললো, “একই রকম। ওর কাকা এসেছে দিল্লি থেকে। আমি কথা বলতে গিয়েছিলাম বাট মানুষটা খুব রুড। সেভাবে কথাই বলল না। দেখলাম হসপিটালের লোকেদের সাথে খুব খারাপ বিহেভ করছিলো। চিৎকার চেঁচামেচি করছিলো।”আমি বললাম, “তাই নাকি? আমার সঙ্গে তো দেখা করতে এলেননা? অবশ্য আমরা একে অপরকে চাক্ষুষভাবে চিনি না। কিন্তু শ্রেয়ান নিশ্চই আমার সমন্ধে বলেছিলো ওনাকে। আর এখানে এসেও নিশ্চয়ই শুনেছেন যে অ্যাক্সিডেন্টের সময় আমরা দুজন একসঙ্গেই ছিলাম। লুলিয়া আপনি প্লিজ ওনাকে একবার আমার সঙ্গে দেখা করতে রিকোয়েস্ট করবেন? ‘লুলিয়া মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বলল, “ওকে আই উইল ট্রাই”। আমরা এখন চলি। প্লিজ তাকে কেয়ার। কাল আবার আসবো।”ওরা চলে গেল।
লুলিয়া চলে যাওয়ার পর হঠাৎই শ্রেয়ান এর জন্য মনটা খুব খারাপ করতে লাগলো। আমার জন্যই আজ ওর এই অবস্থা। শ্রেয়ান অকারণেই আমার ব্যাপার গুলোর সাথে জড়িয়ে পড়লো। পরিণামে বিরাট একটা অ্যাক্সিডেন্ট, জীবনহানির আশঙ্কা। ওর কিছু হলে নিজেকে সারা জীবন ক্ষমা করতে পারবো না। ভগবানও মানিনা, মানলে তার কাছে প্রার্থণা করতাম যেন ও সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু ও যদি সুস্থ না হয় !কিছু একটা হয়ে গেলে!না ছিঃ !কি সব ভাবছি। ওর কিছু হবে না, হতে পারে না। ও জাত লড়াকু ছেলে। ও ঠিক ভালো হয়ে যাবে। হাত বাড়িয়ে বাল্মীকির দেওয়া রেডিওটা চালালাম চালু করতেই শুনি আমাদের জাতীয় সংগীত বাজছে। হায় হায় !কি দুর্ভাগ্য আমার। ন্যাশনাল এন থেম চলছে আর আমি সম্মান জানাতে উঠে দাঁড়াতে পারছিনা। মনে মনে বললাম হে ভারতমাতা আমাকে ক্ষমা কর।