শিল্পীকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন
ইরফান খান, এক অনির্বাণ জ্যোতি…
লিখেছেন শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়
১৯৬৭ সালের ৭ই জানুয়ারি রাজস্থানের এক সাধারণ ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মেছিলেন ইরফান৷ ছাত্রজীবনে তিনি অত্যন্ত ভালো ক্রিকেট খেলতেন, তারপর সি.কে নাইডু টুর্নামেন্টের জন্য নির্বাচিতও হন৷ জাতীয় ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটের দিকে বেশ কিছুদূর এগিয়ে গিয়েও সরে এসেছিলেন ইরফান, পারিবারিক আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে। তাতে অবশ্য এক অর্থে ভালোই হয়েছিল বলা যায়, নাহলে চলচ্চিত্র ও অভিনয়ের জগৎ হয়ত ইরফানকে পেতোই না। নাটকে অভিনয়ের ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছিলেন ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার স্কলারশিপ,তারপরেও মুম্বই এসে এয়ার কন্ডিশনার মেরামত করে দিন গুজরান করতেন বলে জানা যায়। এসবের মাঝেই কীভাবে কীভাবে যেন অভিনয়ের জগতে আসেন,হয়ত এই অসামান্য প্রতিভাকে অনিবার্যভাবেই বিশ্বের দর্শকদের সামনে আসতে হতো বলেই।
শুরুর দিকের প্রতিকূলতার ঢেউ পেরিয়ে টেলিভিশনের পর্দায় অভিনয় শুরু করলেন.. ধীরে ধীরে উঠে এলেন বড়পর্দায়। চলচ্চিত্র জগতে প্রতিষ্ঠা পাবার নানান ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন একমেবাদ্বিতীয়ম ইরফান খান৷ শুধুমাত্র চোখের ভাষা যে অভিনয়ের কত বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে, তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন তিনি,নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছিলেন চরিত্রাভিনেতা হিসেবে৷ হলিউডের ব্রিটিশ-আমেরিকান নির্দেশক খ্রিস্টোফার নোলানের সিনেমাতেও অভিনয়ের জন্য আমন্ত্রণ পান তিনি,কিন্তু সেসময় শ্যুটিং চলছিল ডি.ডে এবং লাঞ্চবক্স ছবির৷ সেই কারণেই ওইরকম বড়ো সুযোগ তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন৷ অবশ্য আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের মানচিত্রে বেশ কয়েকটি ইংরেজি ছবিতে দারুণ স্বচ্ছন্দ অভিনয় করতে দেখা গেছে ইরফানকে,যার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য লাইফ অফ পাই। মারণরোগ ক্যান্সারের সঙ্গে তাঁর গত দু’বছরের লড়াই শেষ হল আজ সকালে, যখন সারা দেশ তথা সারা পৃথিবীই প্রায় গৃহবন্দী অবস্থায়,অতিমারীর সংক্রমণের আতঙ্কে উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে।অসুস্থতার কারণেই ইরফান ভালোভাবে করে যেতে পারেননি সাম্প্রতিককালে মুক্তি পাওয়া ছবি আংরেজি মিডিয়াম ছবিটির প্রচারের কাজ,সে আক্ষেপও উঠে এসেছে তাঁর অসম্ভব ইতিবাচক একটি অডিও বার্তায়। বড় অসময়ে চলে যেতে হল আপনাকে,আমরাও কীভাবে এই ক্ষতি মানিয়ে নিতে পারবো জানি না। তবু যেখানেই থাকুন,ভালো থাকবেন ইরফান…