• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ৬)

বল্টুদার বেড়াতে যাওয়া – ৬

বাস দারুন গতিতে ছুটছে। মুখ ধুয়ে, চা টা খেয়ে সবাই বেশ তরতাজা। ভূবনেশ্বর পর্যন্ত ন্যাশানাল হাইওয়ে বেশ চওড়া,কিন্তু ভুবনেশ্বর থেকে পুরীর রাস্তাটা জনবহুল। সকাল হতেই রাস্তায় ভীড় বাড়ছে। রাস্তার পাশে মাঝেমাঝেই বড় বড় বিল্ডিং। এগুলো ডিজাস্টার সেন্টার। সমুদ্রে প্রবল ঝড় এলে সমুদ্রের আশেপাশের সমস্ত বসতি এখানে এসে আশ্রয় নেয়। পাশের রাজ্য হলেও রাস্তার চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা সবটাই চেনা ছবি। সবার চোখ জানলায়। কখন দেখা যাবে সমুদ্র। ট্রেনে এলে এই উৎসাহটা অন্যরকম হয়,বাসে অন্যরকম। আগেকার দিন হলে অনেক আগে থেকেই সমুদ্র দেখা যেত। এখন মেরিন ড্রাইভে না উঠলে প্রায় দেখা যায় না।
সকালের জলখাবার হোটেলে গিয়ে বানানো হবে। রান্নার ঠাকুর সব কাটাকাটি করে রেখেছে। ময়দাও মেখে রেখেছে সঙ্গে খাবার সোডা মিশিয়ে। লুচিগুলো এতে বেশ ফোলাফোলা আর তরতাজা হয়। সঙ্গে আলুর দম করার কথা ছিলো। কিন্তু অনেকেই দম না করে কালোজিরা দেওয়া আলুর তরকারি করতে বলেছে। গরম লুচির সঙ্গে দারুন জমে। বল্টুদা আবার এর সঙ্গে গরম গরম বেগুন ভাজাও করতে বলেছেন। আহা…যারা অতি উৎসাহী এবং মেনু জানেন জলখাবারের,তারা বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন আর মনে মনে স্বাদ আস্বদনের ভাবনা ভেবে চলেছেন।
বাসের ড্রাইভার চিৎকার করে উঠলো,”জয় জগন্নাথ”। সবাই বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন সামনে সমুদ্র। ঢেউ খুব একটা নেই। শীতের সমুদ্রে ঢেউ বেশী থাকে না। কিন্তু তাতেও যারা নিউ দীঘা আর বকখালির সমুদ্র দেখতে অভ্যস্ত তারা একটু চমকে গেলেন। প্রথম বার সমুদ্র দেখা গুহ বাবু আনন্দে কেঁদে ফেললেন,সাংঘাতিক আবেগ তাড়িত হয়ে সকলের সঙ্গে চেঁচিয়ে বলে উঠলেন..জয় জগন্নাথ।
কিছুটা গিয়ে বাস একটা জায়গায় এসে দাঁড়ালো। একপাশে সমুদ্র,অন্যদিকে হোটেলের সারি। ওদের হোটেলটা একটু ভিতরের দিকে,কিছুটা হেঁটে যেতে হবে৷ যে যার মত নেমে পড়লেন। সবাইকে হোটেলে চলে যেতে বলা হলো। বাস চলে যাবে গ্যারেজে। বল্টুদা লাগেজ বইবার জন্যে লোক রেখেছিলেন। ব্যাগ এক এক করে বাইরে এনে হোটেলে পৌঁছে দেওয়া শুরু হলো। এরই মধ্যে দু-তিন জন অন্যের হাতে লাগেজ ছাড়তে চাইলেন না। তারা নিজেদের লাগেজ নামিয়ে নিজেরাই হাঁটা দিলেন।
হোটেলটা খারাপ নয়। নতুন হয়েছে। হোটেল না বলে একে বরং গেস্ট হাউস বলা ভালো। সমুদ্রের পাশের এই সমস্ত গলির মধ্যে আজ থেকে বছর তিরিশ-পয়ত্রিশ আগে বালি ছড়িয়ে থাকতো। এখন সবটাই কংক্রিট আর পীচের রাস্তা। প্রায় গোটা কুড়ি ঘর রয়েছে এই হোটেলটিতে। সমুদ্র সরাসরি দেখা যায় না,কিন্তু সমুদ্র থেকে হেঁটে মিনিট পাঁচ মাত্র।
বল্টুদা সবার আগে হোটেলে ঢুকেছেন। বাড়িটার নাম লাহিড়ী নিবাস, বাঙালি মালিক। বহুকালের পুরোনো। কিন্তু ভেঙে নতুন করে করা হয়েছে। প্রত্যেকটা হোটেলের মতই রুমের পার্থক্য এই হোটেলেও আছে। আর এই রুম নিয়েই সবাই লাফালাফি করবে বলে বল্টুদা ঠিক করলেন লটারি করবেন।

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।