• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ১৬)

বল্টুদার ট্রাভেল এজেন্সি – ১৬

কেউ বোকা বানিয়ে দিলে বড্ড রাগ ধরে নিজের উপর। সকালবেলা সমুদ্রের ঘটনা,তারপর জেলে যাওয়া পর্যন্ত কেমন একটা ঘোরের মধ্যে কাটছিলো বৌদির। কিন্তু থানা থেকে ফেরার পথে বলটুদার সঙ্গে জুত কিনতে গিয়েই সাংঘাতিক রাগ হয়ে গেলো নিজের উপর। কি আর করা। দোকানদারের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দিকেন বৌদি….ইয়ার্কি করতা হ্যায় তুম লোক? হামারা জুতা হামকোই কিননা পরেগা? মামদোবাজি হ্যায় কেয়া? “—বৌদি রেগে গেলে হিন্দি বলেন…আর ফুরফুরে হিন্দি বলার পর বৌদি কেমন নিজে নিজেই মনে মনে খুশী খুশী হয়ে যান। একটা বোঝা যেন নেমে যায় মাথা থেকে। এক্ষেত্রেও প্রায় তাই। কিন্তু বোঝা আর নামলো না। এসব হিন্দি শুনে জুতোর দোকানদার বলে উঠলো…” বৌদি,এই সব অল্প পুরনো জুত কিছু লোকজন এসে বিক্রি করে যায়। এখন সেসব জুত কোথা থেকে এসেছে আমরা জানবো কোথা থেকে বলুন তো? আমাদের একেবারে কড়কড়ে টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে এ জুত,সুতরাং আপনাকেও তাই হবে। “
এরপর বল্টুদা বা বৌদির খুব একটা কিছু বলার ছিলো না। বল্টুদা বৌদিকে বললে,”রাগ করো কেন? রবীন্দ্রনাথকেও নিজের বায়রন সমগ্র কলেজস্ট্রিটের ফুটপাত থেকে আবার কিনে আনতে হয়েছিলো। সেই পুরনো বইয়ের উপরে সুন্দর করে তার নিজের হাতে নামটা লেখা ছিলো। তবুও পুরনো বইয়ের দোকান থেকে কিনতে হয়েছিলো নিজের বইটিকেই।”
টাকা মিটিয়ে নিজের জুত পুনরায় কিনে এবং পায়ে গলিয়ে রিক্সায় গিয়ে বসলেন বৌদি। রাত হয়েছে। পুরীর সি বিচে মানুষের ভীড়। চায়েদ দোকান গুলোতে আড্ডা চলছে। কেউ বসে সমুদ্রতীরে বালির মধ্যে। কারো হাতে ঝালমুড়ি,কারো চানাচুর। মাছ আর কাঁকড়া ভেজে বিক্রি হচ্ছে সমুদ্রের ধারের দোকানে।
যদিও এসব দিকে খুব একটা নজর নেই ওদের। রান্নার লোকেদের ফোন করে বলা হয়ে গেছে রাতের মেনু। বল্টুদা নিশ্চিন্ত। যাদের নিয়ে এসেছেন তাদের যেন একেবারেই কোন অসুবিধ্ব না হয়,সেদিকে সবসময় নজর বল্টুদার। বৌদিকে নিয়ে দুপুরের পর থেকে টেনশানে থাকার জন্য তাদের দিকেও খুব একটা নজর দেওয়া হয় নি।
হোটেল ফিরে এসেছেন সবাই। বৌদিকে দেখে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো অনেকে। মাত্র কয়েকঘন্টার আলাপ,তার মধ্যেই কত কাছের হয়ে গেছে একে অপরের। বৌদি হোটেলে ফিরে আগে ফ্রেশ হয়ে নিলেন ভালো করে। তারপর আড্ডায় বসলেন সকলে। বৌদি তার অভিজ্ঞতার বর্ননা দিচ্ছেন। একে একে চা,হাল্কা স্নাকস আসতে থাকলো নিয়মিত। রাত হচ্ছে। খাবার রেডি। আজ বৌদির অনারে গ্রেট ফিস্ট।
রাতে শুয়ে শুয়ে বৌদি সারাদিনের হিসেব করছেন। খটকা লাগছে কিছু। উত্তর চাই। প্রশ্ন অনেক। কি করে জুত চুরি হল? সমুদ্র থেকে উঠে অন্য একটা জুত পায়ে দিয়ে চলে আসায় খুব সহজেই জুত কেড়ে রেখে দিতে পারত ওরা। কিন্তু এই সামান্য বিষয়ের জন্যে থানায় কেন দেওয়া হলো তাকে,এ কথার মানে কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছে না বৌদি। ফেরার পথে জুতর দোকান,সেখানে আবার পুরনো জুত। পুরনো জুতর আড়ালে চুরির জুত পাওয়া যায় ওখানে। এটা কি সত্যি সেই দোকানের লোকজন জা এ না? নাকি জেনেও কিছু বলে না,লাভ বেশী থাকায়। বৌদি কোথায় একটা যেন পড়েছিলো পুরীর মন্দির,সমুদ্রতীর এসব মিলিয়ে প্রায় হাজার চারেক জুত চুরি হয় প্রতি মাসে। যার আনুমানিক মূল্য কয়েক লক্ষ টাকা। কি রহস্য লুকিয়ে আছে এর মধ্যে? ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলো বৌদি।
রাত হয়েছে। চারিদিকে স্তব্ধতা। বৌদি ঘুমোচ্ছে। বল্টুদা খরচের হিসেব নিয়ে বসলেন। আগামীকাল মেনু কি হবে,সেটাও ঠিক করে নেবেন আজ।

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।