• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ১২) 

বল্টুদার ট্রাভেল এজেন্সি – ১২

বিষয়টাযে এমনভাবে ঘুরে যাবে কেউ ভাবে নি। সবাই রীতিমতো অবাক আর কি। থানায় ডায়েরি করতে গিয়েছিলেন বল্টুদা,সেখানে হঠাৎ করে চেনা গলার চিৎকার। প্রায় দৌড়ে বল্টুদা পৌছে গেলো কয়েদীদের রাখার গারদের সামনে। কি সাংঘাতিক,,, এ যে বল্টুদার বৌ,নিজের বিয়ে করা খাটি বৌ। যে বল্টুদা আপাতদৃষ্টিতে একেবারে নিরীহ প্রকৃতির, যিনি বা বৌদি কোনো কালে থানার কদম গাছটার ছারা পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখেননি, সেই বল্টুদা বৌদিকে খুঁজে পেলেন পুরীর থানার গারদের সামনে! আরো অদ্ভুত,বৌদি কেমন যেন নির্বিকার। বল্টুদাকে দেখে অবাক হলেন না, কান্না জুড়লেন না, চিৎকার করলেন না,নালিশ করলেন না, বরং বললেন “দেখোতো,কি খারাপ খাবার দিয়েছে এরা, এখানে নিয়ে আসার পর যাচ্ছেতাই একটা চা আর দুটো প্রায় শুকিয়ে যাওয়া পাউরুটি দিয়েছিলো, পেট ভরে বলোতো?এতক্ষন সমুদ্রে স্নান করে ক্ষিদেতে পেট জ্বলছে আগুনের মত,আর এই বাজে সব খাবার। ওদের বলে দাও আমি খাবো না, এই আমি প্রতিবাদে ধর্ণায় বসলাম।”
এবং সত্যিসত্যি বৌদি গারদের ভিতরে অনশনে বসে গেলেন। কিচ্ছু খাবেন না তিনি। বল্টুদা উত্তেজিত। গুহবাবু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছেন, বিষয়টা কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না। বরং নদী কাজের কাজ করলো। থানার বড়বাবুর টেবিলের কাছে গিয়ে বললো…”কি হয়েছে বলুন তো?কেন এমন নীরিহ একজন মহিলাকে আটকে রেখেছেন?”
থানার বড়বাবু প্রায় কার্টুন চরিত্রের ভদ্রলোক। গোঁফের ফাঁক দিয়ে মিটমিটে হাসি,সে হাসি ভালো না খারাপ এ বুঝবে কারো সাধ্য নেই। নদীর কাছে পুরো ঘটনাটা খুলে বললেন বড়বাবু।
আসলে হয়েছিলো কি,আজ দুপুরে পা থেকে জুতো সবাই একটা ডাবওয়ালার কাছে রেখে নেমে গিয়েছিলো সমুদ্রে স্নান কররে। সবাই বলতে বল্টুদার ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে ঘুরতে আসা মানুষজন। এমনিতে বৌদির সমুদ্রস্নান বাতিক রয়েছে। অন্যসময় হলে বল্টুদা ঠায় জুতো পাহাড়া দেন আর বৌদি সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পরেন। সমুদ্রস্নানের সময় সময়জ্ঞান থাকেনা বৌদির। বল্টদার রাগ হয় অসম্ভব। কিন্তু বাড়ি তো তাকে ফিরে যেতে হবে,সেই ভয়ে কিছুই বলেন না।
এদিনও হয়েছে তাই। বৌদি সমুদ্রে স্নান করছেন তো করছেনই। প্রথমদিকে চারিপাশে বেরাতে আসা দলের সবাই ঘিরে ছিলো,আস্তে আস্তে সব ফাঁকা হতে শুরু করে। বৌদি যেহেতু অরগানাইজারের বৌ,তাকে কিছু বলতেও ইতস্তত করছিলেন বাকী সবাই। এদিকে স্নান করা প্রায় দু ঘন্টা হয়ে গেছে। আস্তে-ধীরে সবাই উঠে এলেন জল থেকে। যে যার মত জুত গলিয়ে আর টাওয়েল গায়ে ফিরে গেলেন হোটেলে। বৌদি কিন্তু তখনও নিশ্চিন্তে স্নান করে যাচ্ছেন।
একেবারে শেষ যিনি উঠলেন,বৌদিকে বলে গেলেন…”বৌদি আমি উঠলাম,আপনিও উঠে পরুন।”
বৌদি তখনও স্নানে মশগুল,প্রায় গলা সমান জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে আকাশ আর ঢেউ দেখছেন।

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *