বঙ্গের এক জনপ্রিয় কবি প্রকাশ্যে বারবার দাবী করেন, মেয়েরা কবিতা লিখতে পারে না। কারণ? – তাঁর মতে মেয়েদের নাকি কোনও বিদ্রোহ নেই। স্বয়ং মার্কসই আমাদের শ্রমকে স্বীকার করেননি তো কবিমশাই কিংবা রাম-শ্যাম-যদু মধু আর কীই বা বলবেন নতুন করে! তবে কিনা এভাবে জনসমক্ষে বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা আদতে নিজেরই হীনমন্যতার পরিচয়! আপনাদের কাছ থেকে কি ভব্যতার আশা করাও যায় না? বলুন?
আমাদের নিয়ে আপনাদের সমস্যায় সীমা নেই। আমরা চাকরি করলে, আপনাদের মনে হয় ফ্যাশান। চাকরি না করলে, ‘কিছু না করা’। সকাল থেকে রাত আপনাদের সেবা লাগি যা যা আমরা করে থাকি, তা কিছু ‘করা’ বলে মনে করতে শেখেন নি আপনা্রা আজও। এখনও আমরা মুখ খুললে ‘বকাটে’, চুপ করে থাকলে ‘ভিজে বেড়াল’ আর যুক্তি দিলে ‘দজ্জাল’ উপাধি পাই – আপনাদের কাছ থেকেই। আপনাদের শেখানো হয়েছে, আপনার প্রমোশন হয় মেহনত থেকে, আর আমাদের ‘মেয়ে’ বলে। আপনি হাত্তালি পান যোগ্যতায়, আর আমরা ‘দেখতে ভাল্লাগছে’ তাই। তাই আমাদের আরো মহার্ঘ্য গাড়ি কেনা দেখলে আপনারা ‘রহস্য’ খুঁজে পান। আমাদের কেনা বাড়িতে থাকাও আপনাদের কাছে অপমানজনক। হুজুর মা – বাপ, কখনও ভেবে দেখেছেন, আমরা না থাকলে, আপনাদের ল্যাজ, কতখানি গোবরে ডুবে থাকতো? আপনারা নিজের ভাত রেঁধে-বেড়ে-খেয়ে আপিস করতে গেলেই আধ-হাত জিভ বের করে ফেলেন – সেখানে আমাদের কী না করতে হয়? না – এখন আর আমাদের কাজের ফিরিস্তি লিখে আপনাদের বোর করবো না। ওসব আপনারা জম্মভোর দেখে আসছেন! নতুন কিছু তো নয়। মাক্কালি, সকাল আটটায় ঘুম থেকে উঠে, স্যান্ডউইচ খেয়ে, দুকাপ চায়ের দ্বিতীয়টিকে এবং চারটে খবরের কাগজের চতুর্থতমটিকে কমোডে বসে পড়ে ফেলে, আমাদের এগিয়ে দেওয়া শার্ট-ট্রাউজার-সেলফোন-পাওয়ার ব্যাঙ্ক-জলের বোতল নিয়ে, আপনাদের ‘এত্ত পরিশ্রম’ করে আপিস পৌঁছানো দেখে, না পারি হাসতে, না পারি হাসি চেপে রাখতে। আমাদের পরিশ্রম, যোগ্যতা নিয়ে যেমন আপনাদের সন্দেহ খুব, তেমনই আমাদের পোষাক নিয়ে আপনাদের ‘প্রচুর’ মাথাব্যথা। এবং সে বিষয়ে আপনাদের নিদান শুনে হাসব না কাঁদব – বুঝতে পারি না। দুনিয়ার সক্কলে মানে পোষাকের সঙ্গে শারিরীক অত্যাচারের যোগ নেই – তবু আপনাদের থামায় কে? আপানাদের মতে অধিকাংশ ধর্ষণের অভিযোগের মূল কারণ ‘দরে না পোষানো’। এই তো দিন কয়েক আগে,আপনাদের মধ্যে কিছু বিজ্ঞজন বলতে লাগলেন, সতীত্বই নারীর একমাত্র সম্পদ। তা ভাই সকল, ‘সতীত্ব’ ধুয়ে জল খেতে দিব্যি লাগে আপনাদের, আমাগো জানা আছে। তবে একখান প্রশ্ন আছিল। আপনারা কি জানেন, আপনাদের কৌমার্য নিয়ে কিন্তু আমরা মাথা ঘামাই না কেন? কারণ, আমরা সমগ্র ‘আপনাদের’ নিয়ে ভাবি – শরীরের একটি ‘বিশেষ’ অঙ্গের ব্যবহার কতবার করেছেন এই নিয়ে মনুষ্যত্ব বিচার করতে বসি না। তবে হৃদয়বত্তার ব্যাপারে আবার আপনাদের দৌড় বেশি দূর নয়। এ তথ্য আমাদের জ্ঞাত। সে আপনারা যতই বৃষ্টির দিনে ও শীতের রাতে কোট খুলে পরান না কেন!
মাত্র তো কিছুদিনের তো অবস্থান – তার মধ্যে এতো বিদ্বেষ রেখে লাভ কী বলুন দেখি? একসঙ্গে চলা যাক বরং –
আপানাদের পরবর্তী প্রজন্মকে আলো দেখায় যারা, তারা, কেবল আপনাদের ‘Sperm’-ই নয়, আপনাদের শ্রদ্ধা, মনোযোগ (ভালবাসা শব্দটা বড্ড বেশি হয়ে যাবে বলে আর উল্লেখ করা হল না) দাবী করে। এবার ভুলভাল কথা কম বলুন- ভাবা প্রাকটিস করা গেলে কেমন হয় ? আমাদের এক কবি তো লিখেইছেন সেই কবে -” পরের জন্মে অর্জুন গাছ হয়ে কৃষ্ণচূড়াকে বন্ধুর মতো দেখ” –