• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব – ১৮)

সোনা ধানের সিঁড়ি

৪০
সকালবেলাটা তোমার আমার কারও নয়। সকালবেলাটা সকালবেলার। একেবারেই প্রকৃতির। কতবার ভোরের জানলা খুলে বাইরেটা দেখেই মন ভালো হয়ে গেছে। ভুলে গেছি সব। রাতের অশান্তি মাথা থেকে হাওয়া। একবার এক আত্মীয়ের বিয়ে উপলক্ষে দুর্গাপুর গিয়েছিলাম শুধু এই শর্তে যে বিয়ের পরদিন ভোরবেলা কাউকে কিছু না জানিয়েই বেরিয়ে আসব। কারণ ভোর দেখা। দেখেছিলাম। একবারের জন্যও তাকে আমার ইস্পাতনগরী বলে মনে হয় নি। সদ্য ঘুম থেকে ওঠা একজন মানুষ। চারপাশ কেমন যেন অগোছালো। এটাই তো আসল রূপ। গুছিয়ে নিলেই তো একটা আরোপিত অস্তিত্ব যেন কোথা থেকে এসে জুটে যায়। যা নেই তাকেও টেনে আনার ইচ্ছা আমাদেরকে গ্রাস করে। আর তখনই নষ্ট হয়ে যায় স্বাভাবিকতা। ভোর এসব কিছুর ঊর্দ্ধে। মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথের সেই অমোঘ উচ্চারণ —— ” প্রভাত আসে তাহার কাছে আলোক ভিক্ষা নিতে……”। তাই তো ভোরের এই শুদ্ধতা। বাসের জানলা দিয়ে ভোর দেখতে দেখতে স্টেশন পৌঁছেছিলাম।
৪১
আজ পর্যন্ত জীবনে ক’টা মানুষ আমার কাঁধে এসে হাত রেখেছে? আঙুলের গাঁট গুনতে গুনতে সামান্য এগিয়েই থেমে যেতে হয়। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে কারও দিকে আঙুল তোলার কোনো অধিকারই আমার নেই। ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা ছাড়া অন্য আর কার সাথে মেশার জন্য এগিয়ে গেছি? জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই তো চারদেয়ালের মধ্যে ছাত্র পড়িয়ে কেটে গেল। যতটুকু সময় হাতে পেয়েছি তার বেশিরভাগটাই পড়ে লিখে কেটেছে। আর বাকিটা হয় কোনো পরিত্যক্ত মন্দির, না হয় কোনো নির্জন রেলস্টেশন, আর না হয় কোনো গাছতলা। এদের পেরিয়ে এসে ক’টা মানুষের সঙ্গে মিশতে পেরেছি? আমি যখন বলেছি, জায়গাটা দারুণ, তখন আমার ছাত্রছাত্রীরা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠেছে, স্যারের পছন্দ মানেই একটা বড় ফাঁকা জায়গা। খুবই সত্যি কথা। কত কত দিন যে নির্জন স্টেশনে কেটে গেল তা গুনে শেষ করা যাবে না। কথা না বলেই তো বেশি ভালো থেকেছি। তাই হাতে গোনা যে ক’টা মানুষ কাছে আছে তাদের নিয়েই আমায় খুশি থাকতে হবে। হাতে গোনা সংখ্যাও যদি কমে তাহলেও আমার কিছু বলার নেই। হাতের সব ক’টা আঙুল আমি আমার নিজের দিকেই তুলি। কারণ তাতে নিজেকে অনেক কিছু শেখানো যায়।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।