• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকা -তে সৌরভ বর্ধন (পর্ব – ৭)

কবিতায় আমি কলার তুলতে চাই (পর্ব – ৭)

গাছপালারা প্রায়ই অচেতন হয়ে পড়ে, তবে বেশিরভাগ সময় সচেতন থাকে, বারবার উড়ে যায় পাতা, আঘ্রাণ নিয়ে ফিরে আসে, ঘোর লেগে যায়, উন্মত্ত হয়ে শেষে লুটিয়ে পড়ে গাছ তলায়। তখন সে উদ্ভিদের শ্বসনকার্য দেখতে পায়, দেখতে পায় কী নির্মমভাবে একটা গাছ একটা পাখির পাশাপাশি উড়তে পারে।’কবিদের কবিবন্ধু থাকে না কোনওদিন। মিথ্যে কিন্তু উজ্জ্বল মিথ্যে। কবি নিজেই নিজের বন্ধু, নিজেই নিজের শত্রু।’ একথা আমাকে কোনোদিন কানে কানে এসে বলে যাননি ফল্গু বসু, অথচ আমার বাড়ির খুব কাছে এই কবির বাড়ি হওয়ায় ছোটো থেকেই তাঁর সম্বন্ধে শুনতাম – নতুনহাটের মুখেই অজস্র ফুল গাছে ঢাকা এই বাড়িটাতে এক কবি থাকেন, লুঙ্গি পরে জামার বোতাম খোলা রেখে ঠোঁটের একদিকে রাখা সিগারেটে মৃদু চাপ দিয়ে বাজার করতে যেতেন দেখেছি বহুবার, কোনোদিনও কথা হয়নি, বাবা বলত উনি নকশালপন্থী, পরে শুনেছি অতটা সক্রিয় নন, যদিও ‘শামুক’ কবিতাতে নিজেই লিখেছেন ‘প্রাক্তন নকশাল বলে কেউ আর সমীহ করে না।’, শুনেছি ফুল ফোঁটা দেখবেন বলে সারারাত জেগে থাকতেন গাছের পাশে। আমিও রাত জাগতে পারি, নিশ্চয় একজন জাগানিয়াকে আমায় ঘিরে থাকতে হবে, যদিও তাকে গান শোনাতে আমি পারব না, কারণ ‘আমার কাছে আমি ব্যতীত সব কিছুই বিষয়। আমিকে আমার থেকে আলাদা করতে পারলে – এই আমিও একটা বিষয়। আমিকে আমার থেকে আলাদা করতে পারাও একটা সাধনা।’ মৃত্যুর আগে এসব কিছুই আমায় তিনি বলে যাননি, তবুও আমি জেনে ফেলেছি ‘আমি তত্ত্ব দিয়ে কবিতাকে বুঝি না, কবিতা দিয়ে তত্ত্বকে বুঝতে চাই।’ এতো সব জানার পরেই তো আমার মনে হলো আরও অনেক আগে উচিত ছিল মৃন্ময় ভৌমিকের সাথে আমার দ্যাখা হওয়া যিনি শ্রীজাত’র কবিতাসমগ্র সরিয়ে আমার হাতে তুলে দেবেন সুধীর দত্তের ‘রসুইঘর ও দক্ষিন অগ্নি’। তারপর একদিন একদিন করে বহুদিন কৃষ্ণনগর জাজ কোর্টের চায়ের ঝুপড়িতে লিকার হয়ে বসবো আমরা মুখোমুখি, আমার সামনে কবিতা বদলে যাবে, আমার মাথা খারাপ হয়ে যাবে, আমি শিখে যাব আমি তোমাকে ভালোবাসি খুব সহজ বলতে, এখন নবান্নের দিন এলে আমি দ্রোণফুল ভেবে দাঁড়াশ চুষি, অসংলগ্ন শব্দমূর্তির কোলাজ আঁকি – যেখানে কোনো গল্প থাকে না, ঘটনা থাকে না, দর্শন বা তত্ত্বকথাও থাকে না, সমাজকে বদলানোর সংস্কার থাকে না, কিছু গন্ধ, কিছু রং, কিছু রাগ, খানিকটা বিরক্তি, পরিমাণ মতো প্রেম, কিঞ্চিৎ বেদনা আর ভবঘুরে সোঁদা কামনা নিয়ে বেড়ে ওঠে আমার লেখ্যমাটি, যেখানে মুক্তির আশা, যেখানে নতুনের হাতছানি সেখানেই বিশ্বপ্রকৃতি সেখানেই কবিতা…
কিন্তু কবিতা কি শুধুই লেখবার, পড়বার কিংবা অনুভব করবার জিনিস? কবিতা কি গোটা গায়ে মাখবার জিনিস নয় ? কবিতাকে দুমুঠো ভাতের সাথে কি মেখে খাওয়া যায় না ? তাহলে প্রভাত চৌধুরী কেন বললেন ‘মানুষ যতদিন পর্যন্ত স্বপ্ন দেখবে ততদিন কবিতাও থাকবে’! একবার আমার একটা ‘ভাট-কবিতা’য় আমি লিখেছিলাম বা প্রভাত চৌধুরীর ভাষায় বললে নির্মাণ করেছিলাম ‘বোধয় একটা চাপা বেদনা ওকে ধীরে ধীরে রাত বানিয়ে দিচ্ছিল। সব কাজ কবিতা দিয়ে করা যাবে? অকপটে বাঁধ পাহারা দেওয়া? ওটাই আসল।’ যদিও আসল নকলের ধার কবিতা ধারে না, সে তার নিজের পথে চলমান, অন্য কারো দিকে তাকানোর সময় বা প্রয়োজন তার নেই, আমারও নেই তোমারও নেই। কারণ আমরা জানি কবিতা জীবন থেকে উঠে আসে আর মৃত্যুকে ক্রমশ প্রলভিত করে। কারণ, কবিতা জীবন ও মৃত্যুর মধ্যবর্তী অবস্থা নয়, বরং জীবনের আগের ও মৃত্যুর পরের একটা অবস্থা যা শব্দহীন।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।