• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকা -তে সৌরভ বর্ধন (পর্ব – ৬)

কবিতায় আমি কলার তুলতে চাই (পর্ব – ৬)

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আমি কেবল ফালগুনী রায় পড়ছি, নেশাগ্রস্তের মতো পড়ে যাচ্ছি, আর পড়ছি রবীন্দ্রনাথের কয়েকটা ছিন্ন পত্র ইন্দিরা দেবীকে লেখা, ফালগুনী আর রবীন্দ্রনাথ মিশিয়ে মিশিয়ে পড়তে বেশ লাগছে কিন্তু, অথচ ফালগুনী রায় কখনও রবীন্দ্রনাথ হতে চাননি, রঘু ডাকাতও না, তবুও তাঁর প্রতিটা লাইন পড়ে চমকে উঠছি আর মনে হচ্ছে তিনি প্রকৃত অর্থেই শুধু ফালগুনী রায় হতে পেরেছেন। যাইহোক, এই তারিখটা সামলে রাখতে আর ২০ মিনিট সময় হাতে আছে, ঘরের মধ্যে লাইট অফ্ করে বসে আছি মরিবার তরে পাখা গজানো পিপীলিকার ভয়ে, আর ফোন ঘাঁটছি, মাঝে একটা রবীন্দ্র সঙ্গীত, একটা লালনগীতি, একটা কাজী আমির উদ্দিনের গান আর একটা শাহ আব্দুল করিমের গান শুনেছি, তারপর আবার ফালগুনী রায় পড়েছি, আবার রবীন্দ্রনাথ পড়েছি। বৃষ্টি হওয়াতে দুটো কেঁচো একটা চ্যালা কয়েকটা ছোট ছোট ব্যাঙ আমার সাথে দ্যাখা করতে এসেছিল, খোশগল্প না করে শুধু পত্রখানি পাঠ করেই বিদায় করেছি, কিন্তু টিকটিকিগুলোকে কিছু বলি না, ওদের সাথে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে সময় কাটে অনেক সময়, ওদের কন্ঠস্বর ভারী ভালো লাগে আমার। অবশেষে দিনটাকে হারালাম চির জীবনের মতো, একদিন আমি আর বাপি বসেছিলাম আমাদের শ্মশানের কাছে কালভার্টটার ওপর, পূর্ণিমাঘন সন্ধেবেলা, অনেকক্ষণ আকাশে চেয়ে আছি দুজনে, হঠাৎ একটি উড়োজাহাজ চাঁদের কলঙ্ক ভেদ করে ছুটে গ্যালো, অনবীকরণযোগ্য একটি দৃশ্য আমাদের জীবন থেকে মুছে গ্যালো চিরতরে, কোথায় গ্যালো তা আমরা কেউ জানি না। আজও যখন মাঝে মাঝে ওই কালভার্টটার ওপরে গিয়ে বসি বাপি অমনি মনে করায় সেই দিনের কথা, আমার মনে পড়ে শেষের কবিতা, এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে কোনো কিছুই স্থানুস্থাবর নয়, সবই পরিবর্তনশীল, বিশাল ব্যাপ্ত এই স্থান-কালের পৃথিবীতে ধীরেধীরে তৈরি হয়েছে প্রাণের উপযোগী পরিবেশ, সেই পরিবেশকে যত দীর্ঘ সময় ধরে রাখা যায় ততদিনই প্রাণের অস্তিত্ব, মানুষের জীবনযাপন, সভ্যতার পথ চলা, তাতেই আমাদের “প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ, আত্মার শান্তি” এবং গ্রাম শহরের পথচলা, চলবে…
পাখিদের ছায়া তোলবার জন্য বসে থাকব ঠাঁই টালির চালার পাশে, ধার করা ক্লোরোফিল এনে ছিটিয়ে দেবো কভারে, এখন খাদ্য আসবে, তৈরি হবে জীবনদায়ী চুম্বন, আরও বেশি জুম করলে কাছে তো আসে কিন্তু পিক্সেল ফেটে যায়, ঘুম চলে আসে সম্পর্কের, আগে ঘুম থেকে উঠে হনুমান দেখতে পেতাম, এখন দেখি পাখপাখালি, ফলে গাছগাছালিগুলো তরতাজা হয়ে বাড়ছে, অমিত রে বসে আছেন গঙ্গার ধারে, ঘন কালো পূঞ্জীভূত স্তব্ধতার উপরে চাঁদ উঠল, সঙ্গে আছেন লিলি গাঙ্গুলি, গঙ্গার ওপারে ঐ নতুন চাঁদ আর এপারে তুমি-আমি এমন সমাবেশটি অনন্তকালের মধ্যে কোনোদিনই আর হবে না, এইমাত্র যে ব্যাঙটা টপ করে জলে লাফিয়ে পড়ল এটাও বেটোফেনের ঐকতানিক সৃষ্টি সেই পরিচিত চন্দ্রালোক-গীতিকার বাইরে নয়, তবুও ক্ষণকালের ঘোর-লাগা থেকে ঠেলা দিয়ে উঠে বুদবুদের উপরকার বর্ণচ্ছটাকে বললাম দাঁড়াও! কলারটা তুলে নিই, আর অমনি দিলাম সেটা ফেসবুকের জলে ফেলে, এবার তাকে সবাই খুঁজে পাবে, তারপর কোটি কোটি যুগ পরে হঠাৎ একদিন মেমোরি হিসাবে আমার নোটিফিকেশন বেজে উঠবে, ক্লিক করে দেখবো মঙ্গল গ্রহের লাল অরণ্যের ছায়ায় কোনো এক হাজার-ক্রোশী খালের ধারে পড়ে আছে আমার দাড়িওয়ালা শান্ত সাদা কলারটি, চমকে উঠে মুখ চাওয়াচাওয়ি করব, তার পরে কী হবে ভেবে দেখো…

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।