• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকা -তে সৌরভ বর্ধন (পর্ব – ১৯)

কবিতায় আমি কলার তুলতে চাই (পর্ব – ১৯)

ইলেকট্রিকের তার অথবা সাজানো বসার জায়গার চেয়ে ছোটো বড়ো গাছের ডাল পাখিরা অনেক বেশি ভালোবাসে ; কেননা স্বচ্ছন্দ চুম্বন এখানেই সম্ভব  —  এ কথা বোঝার বহু আগেই আমি পার্কের বেঞ্চ থেকে নেমে ঘাসের ওপর পা ছড়িয়ে বসেছি। একটি পার্কে একটি বেঞ্চের গুরুত্ব যে কতটা, তা প্রায় ঘাসেরই সমান, এ জিনিস বুঝতে আমার ঢের সময় লেগে গেলো। এখন আমি প্রেম ব্যাপারটাকে খুব সাধারণভাবে দেখছি, নরনারীর এই অবশ্যম্ভাবী মিলন তেমন অসাধারণ কিছু নয়। একটু হাত ধরার জন্য কতটা ব্যাকুলতা প্রয়োজন, কতটা জ্যাম রাস্তায় হলে হাতধরা তীব্র হয়ে পড়ে, কোন কোন সীমা লঙ্ঘন করলে বলা যায় আমায় তুমি অসীম করেছো — এসব যুঝে নেওয়া দস্তুর ; অথচ এমন কতিপয় অস্থিরতা আছে যা প্রকাশ করলে মানুষ সহজেই মানুষ হয়ে উঠতে পারে এবং জানতে পারে কোন কোন দুর্লঙ্ঘ দুর্বলতা জাহির করলেই একটি সম্পর্ক প্রেম হয়ে দাঁড়ায় আর কোন কোন কৌতূহল নিবারণের জন্য আরেকটি আঁতাত প্রয়োজন হয়ে পড়ে : আমি তাদের সকলকে স্বীকার করেছি, কারণ স্বীকৃতি না দিলে সমস্ত কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কিন্তু কেন জানি না, ইদানীং আমার কিছুই করা হচ্ছে না, কেবলই শান্ত সমাহিত হতে ইচ্ছে করছে, চুপচাপ বসে থাকতে মন চাইছে; যেমন সেবার বাঁকুড়া গিয়ে কংসাবতী নদীবাঁধের যে অপরূপ চাহনি, উত্তাল হাওয়ার মাঝে বসেছিলাম দীর্ঘক্ষণ ছোটো একটা দ্বীপে, তখন লেখার ভাবনা নয়, চমৎকার কিছু করে ফেলবার বাসনা নয়, শুধুই বসে থাকা প্রকৃতির নিবিড় মুখোমুখি। তারপর সকলকেই উঠে আসতে হয়, সবখান থেকে… আমাকেও মুক্তির আশা ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়।
সেইদিন ছিল পৃথিবীর অনুসূর অবস্থান, সেদিন থেকেই ধীরে ধীরে আমরা দূরত্ব বাড়াচ্ছিলাম, আগামী ছয় মাস নিষ্ঠুরতম হয়ে একদিন কান্নায় ভেঙে পড়বো দুজনে, মিলনের সুতীব্র ইচ্ছা নিয়ে তোলপাড় করে দেবো ব্রহ্মারণ্য; কাছে আসতে চাইলে চোখের জল, দেহের ওম ব্যাকুল হয়ে উঠবে। তবু দূরত্ব আমাদের যোজন যোজন ব্যর্থতা হয়ে আটকে দেবে ডিসপ্লে কভারে, আমি দেখবো তোমার ডিপিতে আমার মুণ্ডুকাটা দেহ ঝুলে আছে, তুমি অন্য দিকে তাকিয়ে হাসছো, ভাবছো ইলিউশন, ভাবছো প্রচারিত প্রেমের শেষ পদক্ষেপ আমাদের গোঁ ধরে আছে অবলীলায়; এই অশান্ত সময়ে আমরা যারা তবুও ফুলের মতো স্বপ্ন দেখি আকাশের রং প্রাকৃতিক হবে একদিন, একদিন জড়োয়ার কাচ ভেঙে জলবিভাজিকার ভুলগুলো প্রবাহিত হয়ে যাবে আশেপাশের পাহাড়ি গ্রামে, যেখানে কিছু জলাশয় প্রয়োজন সেখানে স্থির হবো কেউ কেউ, কেউ এগিয়ে যাবে বিনির্মাণে মুখ থুবড়ে পড়ার জন্য, আবার আমাদেরই কেউ দীর্ঘ জঙ্গলের মাঝে হারিয়ে ফেলবে পথ। এবং একদিন এই সমস্ত কথাই নথিহীন অতীত হয়ে ঘুরপাক খাবে স্মৃতিতে। আসলে ফুলের কোনো কথাই শোনে না মানুষ, ফুল বললে তার মনে শুধু সুন্দর ঘুণ ধরা পড়ে; ফুল ফুটলে মা বলে, গাছটা কেমন আলো হয়ে আছে দ্যাখ! আমি দেখি, এপিডারমিসের নীচে গুটিয়ে থাকা লোম, উষ্ণ বোরোলীনের ভেতর ঘুমিয়ে থাকা আবিষ্কার।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *