জন্মস্থান – পুরুলিয়া
পেশা – সরকারি চাকরি
প্রকাশিত কবিতা বই :-
১) ডানায় সে চুম্বকত্ব আছে
২) উন্মাদ অন্ধকারের ভিতর
৩) ভিতরে বাইরে
৪) পোড়া নক্ষত্রের কাঙাল
৫) মুসলপর্বের স্বরলিপি
৬) কৃষ্ণগহ্বর
৭) শরীরে সরীসৃপ
৮) প্রেমের কবিতা
৯) পোড়ামাটির ঈশ্বর
১০) ঈর্ষা ক্রোমোজোম
উপন্যাস
১) কৃষ্ণগহ্বর
পূর্ব প্রকাকাশিতের পর…
রাকা সেই দাঁড়িয়ে আছে তো আছেই। তুলি দোকান থেকে এখনও বেরোইনি নাকি কেনাকাটা করে চলে গেছে রাকা লক্ষ্যই করেনি! মোবাইলে দেখা যাচ্ছে, রাত দশটা কুড়ি। আর থাকা যায় না। বাড়িতে মা একা। খিদেও পাচ্ছে। রাকা ঘরে না ঢোকা পর্যন্ত মাও না খেয়ে থাকবে। মায়ের জন্য একটা টিভি কিনতে হবে। কিস্তিতে পাওয়া যায় কিনা খোঁজ নিতে হবে।
বাজারের ভিড় আস্তে আস্তে পাতলা হচ্ছে। দোকান গুলিও গুটিয়ে নিচ্ছে। দু’চারটে দোকানের শাটার পড়তেও শুরু হল। রাকা সাইকেলে উঠে প্যাডেলে চাপ দেয়। অন্যমনষ্ক থাকার জন্যই একটি মোটর বাইকের সামনে পড়ে যায়।
-‘আরে রাকা! এতো রাতে কোথায় গেছলি?’
-‘সুনয়দা তুমি! আমি একটু কাজে আটকে গেছলাম।’
-‘সে ঠিক আছে। কিন্তু এত অন্যমনষ্ক কেন!’
-‘দেরি হয়েছে তাই হয়ত হবে! দাদা, আজ চলি পরে কথা হবে।’
– আরে শোন, শোন সাবধানে যাবি। আর একটা বলি, শোন।’
-‘বল।’ হন্তসন্ত হয়ে ওঠে রাকা। ভিতর থেকে তাড়া লাগায়।
-‘একটা গ্রুপে তোকে জয়েন করাব আজ রাতে।’
-‘ ওকে দাদা, চললাম।’
রাকা হুস করে বেরিয়ে যায়। সুনয় ওর মিলিয়ে যাওয়া দেখতে থাকে।
স্বাগত রাকা।
মেসেজ আসে মোবাইলের হোয়াটসএপ। এখন রাত বারোটা বেজে পাঁচ। গ্রুপের নাম ‘আমরা সবাই বন্ধু জন’।
মিনিট তিনেক পরেই একটা মেসেজ আসে। ১. তুলসি পাতা দিয়ে শাঁখ পুজো করলে দারিদ্র দূর হয়। ২. দক্ষিণাবর্তী শাঁখে দুধ ভরে শালীগ্রামের অভিষেক করে সেই দুধ নিঃসন্তান মহিলাকে খাওয়ালে সন্তানবতী হয়।
রাকা বুঝতে পারে না। এরপর ও কি লিখবে বুঝতে পারে না। একটু সময় নেয়।
ততক্ষণে অনেক মেসেজ এসে গেছে। সব পড়া সম্ভব নয়। কিন্তু বেশ ভালই লাগছে। কিন্তু একি তুলসি পাতা দিয়ে শাঁখ পুজো করলে দারিদ্র দূর হবে! মা তো কত ঠাকুরের পুজো করে। রাকাও মাকালির ভক্ত। রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়ে মাঝে মাঝে ধ্যান করত। কিন্তু মন পড়ে থাকত সেই তুলির জন্য। তাই আর যাওয়া হয় না আর এই অর্ণবদার গ্যারেজে কাজে ভর্তি হওয়ার পর তো আর বিকেলে সময়ই থাকে না। কিন্তু ওই মেসেজটির বিপ্রতীপ উত্তর দিতেই হবে।
রাকা মাধ্যমিক পরীক্ষাও দিতে পারেনি। তাই বকে সেকি বোকা নাকি! সে কেন এই আজগুবি কথায় বিশ্বাস করবে!
রাকা খুব যত্ন করে লিখল- ১) তুলসি দিয়ে শাঁখ পুজো আপনি করতেই পারেন। আমার মাও অনেক ঠাকুরের পুজো করে। কিন্তু এই পুজো করলেই আপনার দারিদ্র দূর হবে না। পুজো করলেই যদি দারিদ্র দূর হত তাহলে আমার মা এতদিন দরিদ্র থাকত না। পুজো করুন সঙ্গে সঙ্গে নিজের কাজও করুন। পরিশ্রম করুন। দারিদ্র দূর হবে।
ওই পুজো করে আপনার কি মনে হয় টাকা আসবে?
টাকা না এলে দারিদ্র কী করে দূর হবে! স্যার, আমাকে যদি এই বিষয়টি একটু বুঝিয়ে দেন খুব ভাল হবে। ২) দক্ষিণাবর্তী শাঁখে দুধ ভরে শালীগ্রামের অভিষেক করার পর সেই দুধ নিঃসন্তান মহিলাকে পান করালেই তিনি সন্তানের জন্ম দেবেন এটা একটু বেশি গাঁজাখুরি হয়ে গেল না!
সন্তানের জন্ম কীভাবে হয় আপনি খুব ভাল করেই জানেন। না জানলে আমার সঙ্গে দেখা করুন শিখিয়ে দেব। শেষ বাক্যটি লিখেও কেটে দিল।
মেসেজটি সেন্ড করে রাকা তৃপ্তির নিঃশ্বাস নিল।
সঙ্গে সঙ্গে তিনটা মেসেজ এল। তিনটাতেই লাইক চিহ্ন। তার মধ্যে একটা নং সুনয়দার। অন্য দুটির নং অজানা কারো।