• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৮০)

পর্ব – ৮০

৭৯

শ‍্যামলী সোজা গিয়ে কারখানার অফিসঘরে ঢুকল। সে চেয়ারে বসে দেখল হেডমিস্ত্রি অফিস ঘরের বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে। শ‍্যামলী তার মুখের দিকে তাকালো। মিস্ত্রি বলল, ছোড়দি ভেতরে আসব?
শ‍্যামলী জানত তার ক‍্যাশবুক আপডেট করা বাকি আছে। গতকাল মজুরেরা টাকা ক’টা ঠিক ঠিক বুঝিয়ে দিলেও, হিসাব লিখেছে আলাদা কাগজে, আর হস্তলিপি খুব খারাপ। ওদের দিয়ে ক‍্যাশব‌ই লেখানো যাবে না। ক‍্যাশ ব‌ই কি করে লিখতে হয়, কেন লিখতে হয়, সে ব‍্যাপারে হেডমিস্ত্রি ছাড়া অন‍্য মজুরদের কোনো ধারণাই নেই।
হেডমিস্ত্রিকে পুরোনো কাজে কিছুতেই ঢুকতে দেব না, এই গোঁ নিয়ে থাকলে তাকে নিজেকে খাতা লিখতে হবে। পড়ে থাকতে হবে কারখানায়। বাবা তাঁর সোনালি দিনগুলোতে তাই করতেন। কারখানায় পড়ে থেকে এমনকি গাড়ির নিচে নিজে ঢুকে বাবা কাজ করেছেন। আর একটা একটা দক্ষ মিস্ত্রি তৈরি করেছেন। নিজের অন‍্য সমস্ত কাজ ছুঁড়ে ফেলে কারখানায় না পড়ে থাকলে তিনি শহরের বুকে দোতলা একটা বাড়ি করতে পারতেন না।   কাজেই শ‍্যামলী মনে মনে ভেবে নিল, কাজ চালানোর জন্য তার সামনে হেডমিস্ত্রির কোনো বিকল্প নেই। অথচ এই মুহূর্তে মিস্ত্রিকে বুঝতে দেওয়া যাবে না যে পাল অটোমোবাইলে সে অপরিহার্য।
হেডমিস্ত্রি যখন জানতে চাইল যে ভেতরে আসবে কি না, তখন পরিস্থিতির যতটা ফায়দা টানা যায়, শ‍্যামলী সেই কথাটা ভাবল। মিস্ত্রিকে বলল, বলুন কি বলবেন?
মিস্ত্রি বলল, বড়বাবু আমায় ক্ষমা করেছেন। কথা দিয়েছেন, আমার কাজ বজায় রাখবেন।
অ। তাই?
হেডমিস্ত্রি মাথা নিচু করে বলে, এবার আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। কাজে লেগে যাই।
শ‍্যামলী বলল, আমি আপনাকে শোকজ করেছিলাম, সেকথা আপনার মনে আছে?
মাথা নিচু করে র‌ইল মিস্ত্রি। শ‍্যামলী সেই দিকে তাকিয়ে বলল, কাজে আবার আপনাকে নিয়ে নিচ্ছি। তবে আপনার একটা ব‍্যবহার আমার খুব খুউব খারাপ লেগেছে।
সশঙ্কিত হয়ে মিস্ত্রি বলল, আমি আবার কি অন‍্যায় করলাম।
শ‍্যামলী বলল, আপনি দোষ করেছেন, দায়িত্ব পালন না করে চলে গিয়েছিলেন, এটার জন‍্য আমি শোকজ করেছি, আপনি কারবারের মালিকের কাছে গিয়ে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন, এতে আমি দোষ দেখি না। কিন্তু নিজের ব‌উটাকে বাচ্চাটাকে পর্যন্ত মালিকের পায়ে ধরিয়ে আপনি অত্যন্ত অন‍্যায় কাজ করেছেন। নিজের স্ত্রীর সম্মান আপনি দেন নি। খুব কষ্ট পেয়েছি আপনার এই আচরণে। দোষ করলেন আপনি। অথচ দোষ না করে ক্ষমা চাইতে বাধ‍্য করলেন ব‌উটাকে। ছি ছি, অত্যন্ত নিন্দনীয় লোক মশাই আপনি।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *