• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৭৮)

পর্ব – ৭৮

৭৭

ঘর থেকে বের হবার আগে মা বাবার সাথে দেখা করতে গেল শ‍্যামলী।
আজ ষষ্ঠীর দিনে সে পরেছে বসন্তী রঙের একটা শাড়ি। তাকে তার মা জিজ্ঞাসা করলেন, ওরে, এই শাড়িটা তো গত বছরের। আজ এটা পরলি কেন?
শ‍্যামলী বলল, তা হোক্ মা, শাড়িটা বেশ নতুন‌ই আছে।
বাসন্তীবালা বললেন, ওরে, ষষ্ঠীতে নতুন কিছু পরতে হয়।
শ‍্যামলী বলল, মা, আমি কারখানায় যাচ্ছি। কাজের কথা থাকলে বলো।
তার মা বললেন, এতো দেরি করে টাকা দিলি, কাপড় চোপড় কেনার সময় পেলাম না।
শ‍্যামলী বলল, তাতে কি হয়েছে? আজ কিনে নাও।
বাসন্তীবালা বললেন, কাকে নিয়ে যাব কিনতে?
শ‍্যামলী বলল, কেন, সবিতা পিসিকে নিয়ে যাও।
বাসন্তীবালা বললেন, সে কি হয় রে? দুজনেই বেরিয়ে পড়লে তোর বাবাকে দেখবে কে?
শ‍্যামলী বলল, এক কাজ করো, একটা তালিকা তৈরি করে সবিতা পিসির হাতে দিয়ে দাও, ও কিনে নিয়ে আসুক। ওর পছন্দ খারাপ অন্ততঃ হবে না।
বাসন্তীবালা বললেন, তুই যে কাল একটা নতুন শাড়ি পরে এলি, কথায় কথায় জিজ্ঞেস করতে ভুলে গিয়েছি, ওটা কবে কিনেছিস? খুব ভাল শাড়িটা। কত নিয়েছে রে?
শ‍্যামলী বলল, কিনি নি মা। বাবা যেদিন সুস্থ হয়ে দোকানে গিয়ে কিনে দেবে, সেদিন আমি বাবার সঙ্গে গিয়ে কিনব। এটা গিফট। একজন দিয়েছে।
বাসন্তীবালা বললেন, কে রে? রমানাথ বুঝি?
শ‍্যামলী বলল,  মা আমি তাঁর সাথে রাস্তাঘাটে যোগাযোগ করি না। তাঁর বাড়িতেও যাই না। তিনি কখনও ফোন করলে করেন। কিন্তু আমি করি না। তিনি কাপড় গিফট করলেই বা আমি নেব কেন?
বাসন্তীবালা বললেন, বাব্বা! একটা কথা বললে, তোর একবুড়ি কথা! তোকে সে পছন্দ করে, তাই জিজ্ঞাসা করলাম।
বাবা বললেন, তোর আত্মসম্মানবোধটা আমার ভাল লাগে। কিন্তু তুই শাড়িটা পেলি কার কাছে?
শ‍্যামলী বলল, গোবিন্দকাকা যাঁর গাড়ি চালায়। অ্যাডভোকেট অনসূয়া চ‍্যাটার্জি।
তার মা বললেন, অ, একটা উকিল দিলে শাড়ি হাত পেতে নিতে তোর লজ্জা নেই। রমানাথ দিলে তখন তোর যত অসুবিধা।
শ‍্যামলী বলল, মা, তোমার কথার উত্তর দুখানা। প্রথমতঃ, অনসূয়াদি আমার মামলা লড়ে আমায় জিতিয়েছেন। এক পয়সা ফি নেন নি। আমায় খুব ভালবাসেন। আর দ্বিতীয়তঃ, রমানাথ আমাকে বিয়ের জন‍্য দেখতে এসেছিলেন, কিন্তু আমি বিয়ে নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি, এখনই নেবার কোনো কারণ আছে বলেও মনে করিনি। অনসূয়াদি আর রমানাথবাবু, দুটো সম্পর্ক একেবারেই আলাদা রকমের। তুলনার প্রশ্ন আসে না।
তার বাবা বললেন, তুই কলেজের ম‍্যাডামকে বললি উকিল বাড়ি যাওয়ার কাজ ছিল। সেকি চ‍্যাটার্জি উকিলদের বাড়ি?
শ‍্যামলী স্পষ্ট সরল গলায় বলল, হ‍্যাঁ বাবা।
শশাঙ্ক পাল বললেন,  তুই তো আমার কাছে সে নিয়ে কিছুই বলিস নি।
শ‍্যামলী বলল, সময় পাইনি বাবা। আর দিদির ওখানে আলোচনা করে তেমন কিছু দাঁড়ায় নি, যে বলব।
তার বাবা বললেন, তুই কি হেডমিস্ত্রির ব‍্যাপারে উকিলবাড়ি গিয়েছিলি?
শ‍্যামলী বলল, হ‍্যাঁ।
শশাঙ্ক পাল বললেন, সে কি রে? এসব সামান্য ব‍্যাপারে মামলা মোকদ্দমায় জড়াতে নেই।
শ‍্যামলী বলল, বাবা, আমি যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার আগে সে ব‍্যাপারে ভাল মন্দ খতিয়ে দেখি। হেডমিস্ত্রি ক‍্যাশ আর স্টক আলগা ফেলে চলে গেছে, এটা আমি হালকা ভাবে নিতে পারিনি। তার উপর এমন একজনের ডাকে সাড়া দিতে সে ওভাবে চলে গিয়েছে, যাকে আমি ভীষণ অপছন্দ করি।
আর, সে নিয়ে লুকোছাপা জিনিসটাও আমার ভাল লাগে নি। তাই আমি উকিল বাড়ি গিয়েছিলাম পরামর্শ করতে। উকিলের সাথে পরামর্শ করা আর মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়া, দুটো এক নয়।
শশাঙ্ক পাল বললেন, ওরে, তুই উকিলদের চিনিস না। ওরা তোকে একবার মামলায় জড়িয়ে দেবে। তারপর দিনের পর দিন ডেট ফেলতে থাকবে আর ফি এর নাম ক‍রে টাকা খিঁচবে।
শ‍্যামলী বলল, বাবা, এই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে যদি বলতে চাও, তাহলে তোমাকে খুঁটিয়ে দেখতে হবে, অনসূয়াদি যে মামলা লড়ে আমায় জিতিয়ে দিয়েছেন, সে বাবদে তিনি একটাও পয়সা নিয়েছেন কি, না। আর‌ও দেখতে হবে যে অনসূয়াদি মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন কি না। আমি বলছি, দুটোরই উত্তর হল, না। অর্থাৎ, অনসূয়াদি গত মামলায় ফিজ নেন নি। এবারেও মামলা করতে বারণ করলেন।
শশাঙ্ক পাল উৎসাহিত হয়ে বললেন, তা বেশ, তা বেশ, এসব তুচ্ছ ঘটনাকে নিয়ে মামলা করতে বারণ করে উনি ঠিকই করেছেন।
শ‍্যামলী বলল, বাবা, তাতে আমাদের উচ্ছ্বসিত হবার কোনোই কারণ নেই। উনি ধরে ধরে চিরে দেখিয়ে দিয়েছেন, পাল অটোর ম‍্যানেজমেন্ট ভীষণ কাঁচা আর সেকেলে। এত মান্ধাতা আমলের ম‍্যানেজমেন্ট কোনো অপোনেন্ট উকিলের জেরার সামনে নিজের কোনো পয়েন্টকেই জাস্টিফাই করতে পারবে না। মুখ থুবড়ে পড়বে।
বাসন্তীবালা রেগে উঠে বললেন, হ‍্যাঁ নিজের বাবার দোষ অন‍্যকে ধরতে দেখে তুই মাথা নেড়ে সায় দিয়ে এলি!
শ‍্যামলী মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বলল, আমি যেচে বলতে চাই নি মা। বাবা আমায় জেদ করে জানতে চাইলে আমি কি করব বলতে পারো?
শশাঙ্ক পাল বললেন, সে যাক গে। তুই যে মামলা ঠুকে আসিস নি, সেটা ভাল করেছিস। আর শোন্, ওই রামনারায়ণটার সঙ্গে লাগতে যাস না। সাক্ষাৎ গুণ্ডা একটা।
শ‍্যামলী বলল, বাবা, অন‍্যায়কে ঘাড় পেতে মেনে নিলে অত‍্যাচারের মাত্রা কমে না। তবে ক্ষ‍্যাপার মতো লড়াইয়ে আমি রাজি ন‌ই। এমন কিছু কখনোই করব না, যাতে তোমার সম্মান নষ্ট হয়। তারপর বলল, আমি বেরোলাম বাবা।
মা বললেন, বেরোলাম বলতে নেই। বল্ আসছি।
মেয়ে মুখ টিপে হেসে বলল, মা আমি আসছি।
বাসন্তীবালা বললেন, আয়। দুর্গা দুর্গতিনাশিনী। তারপর কপালে হাত ঠেকিয়ে অদৃশ্যের উদ্দেশে প্রণাম করলেন।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।