দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৪৯)
by
·
Published
· Updated
পর্ব – ৪৯
১৪৮
দেখুন, পাল অটোমোবাইল আপনাকে মজুরি দেয়। আর ঠিক সেইজন্যই আপনি অফিসের কাজ ফেলে চলে যেতে পারেন না।
ছোড়দি, আমার খুব দরকার ছিল।
খুব দরকার থাকলে বিকল্প কিছু ব্যবস্থা করে তবে যাওয়া উচিত ছিল।
মাথাটা নিচু করে থাকে হেডমিস্ত্রি।
কি দরকার ছিল, এবার বলুন।
কথা বলে না হেডমিস্ত্রি।
শ্যামলী আবার বলে, বাড়ির কারো শরীর খারাপ?
মাথা নাড়ে লোকটি।
তাহলে?
একটা দরকার ছিল।
বাড়ির লোকের শরীর খারাপ হয়েছে শুনলে চুপ করে বসে থাকা শক্ত। কিন্তু, তা যখন হয় নি, তাহলে দায়িত্বের কাজ ছেড়ে চলে গিয়ে ঠিক করেন নি। এর আগে আমার অনেক পার্টস চুরি গিয়েছিল। অনেক মেহনত করে পাল অটোমোবাইল ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আপনার কি সেটা পছন্দ হচ্ছে না?
মাথা নিচু করে হেডমিস্ত্রি বলল, একজন ডেকে পাঠিয়েছিল, তাই যেতে হয়েছিল।
শ্যামলীর বুকটা ছাঁৎ করে উঠল। বলল, কে ডেকে পাঠিয়েছিল?
হেডমিস্ত্রি কথা বলে না। মাথা নিচু করে থাকে।
তাহলে কি আমি ধরে নেব, আপনি এমন কোনো জায়গায় গিয়ে ছিলেন, যা আপনি জানেন, মালিকপক্ষকে বলা যায় না।
তবুও লোকটি চুপ করে থাকে।
দেখুন, পাল অটো আপনাকে কাজে লাগবে বলে রেখেছে আর পালেরা আপনাকে বিনা পয়সায় খাটায় না, রীতিমতো পয়সা দিয়ে রেখেছে। মালিক পক্ষের দায়িত্ব পাল অটো পালন করছে। বিনিময়ে আপনি কিন্তু অফিস টাইমে চলে গিয়ে দায়িত্বের পরিচয় দেন নি। আর বলতেও পারছেন না যে ঠিক কোথায় গিয়েছিলেন। সম্পর্ক রক্ষা করতে হয় দুই তরফে।
মাথা নিচু করে থাকে হেডমিস্ত্রি।
শুনুন, শুধুমাত্র মাথা নিচু করে কোনো জিনিস এড়িয়ে চলতে পারবেন না। আজ হোক বা কাল, এর ফল আপনাকে পেতে হবে।
তবু হেডমিস্ত্রি মাথা তোলে না।
যান, এবার সব মজুরকে ডেকে আনুন।
মিস্ত্রি মজুররা সবাই এসে জুটলে, শ্যামলী জিজ্ঞাসা করল, সবাই হাজির আছে কিনা। তারপর হেডমিস্ত্রিকে বলল, গেটে চাবি দিয়ে আসতে।
সবাই বলল, কেন ছোড়দি, গেটে তালা আটকে দিচ্ছ কেন?
শোনো, আজ পাল অটোমোবাইল তোমাদের বোনাস দেবে। এই সময় যাতে বাইরের লোক হুজ্জুতি করতে না পারে, তাই দরজা বন্ধ রাখা দরকার।
বোনাস হবে শুনে মজুররা খুশি হয়ে উঠল। শ্যামলী নাম ধরে খাতায় একে একে সই করিয়ে নিয়ে টাকা দিতে থাকল। অন্য সবার বোনাস পাওয়া হলে হেডমিস্ত্রি প্রশ্ন করল, ছোড়দি, আমারটা?
আপনি আজকে স্টক মিলিয়ে সারাই বাবদ কালেকশন বুঝিয়ে দেবেন, তারপর আপনাকে বোনাস দেব কি না, ভাবব।
শ্যামলী অন্যদের বলল, পুজোর দিনগুলো যাতে তোমরা বউ বাচ্চার মুখে হাসি ফোটাতে পারো, তাই বোনাস।
ওরা সমস্বরে বলল, দিদি, তুমি খুব ভাল।
ওরে না না, বোনাস হল ডেফারড ওয়েজেস। এতদিন খাটলে খুটলে, কারবার মোটামুটি সামলে দিয়েছ, তাই কোম্পানি দিয়েছে। তোমরা খাটো, তাই তো কোম্পানি চলে। তোমরা যদি কাজের সময়ে দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে রেখে চলে যাও, কোম্পানি ডুববে। একবার তো দেখলে, হেলাফেলা করলে কী হয়?
এই বলে সে একবার হেডমিস্ত্রির দিকে তাকাল। রীতিমতো অপরাধ বোধে ভুগছে লোকটা।