দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৩৯)
by
·
Published
· Updated
পর্ব – ৩৯
১৩৮
সবিতা দাঁড়িয়ে ছিল। তার পিছনে একটা চেনা মুখ। তাকে দেখেই নিজেকে সামলে নিল শ্যামলী। তাকে দেখে শ্যামলীর বাবা মাও এগিয়ে এলেন ।
আগন্তুক বলল “নিচে আমার বাবা মা দাঁড়িয়ে আছেন।“
চকিতে লজ্জা পেয়ে বাসন্তীবালা আর সবিতা ছুটলেন অভ্যাগতদের আতিথেয়তার উদ্দেশে।
শ্যামলীর মনে পড়লো, এই আগন্তুক তাকে মিনতি করে বলেছিল একবার দেখা করতে চান। তাকে সে বলেছিল আজ তার পরীক্ষা । তো আজ সকালেই পরীক্ষার নামে যা হবার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রমানাথ যে বিকেলেই চলে আসবেন, তা তো সে ভাবতেই পারে নি। তার উপর রমানাথ বলছেন তিনি তাঁর বাবা মাকেও এনেছেন। নকুড় নন্দী মশায় বাবার গুরুভাই এবং দীর্ঘদিনের হৃদ্য সম্পর্ক ওঁদের । সেই সুবাদে তিনি তাঁর স্ত্রী ও রমানাথের বন্ধুরা এসেছিলেন বৈবাহিক দেখাশুনার কাজে । সে সময় বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সে তাঁদের সময় দিয়েছিল। কিন্তু ভদ্রভাবে বলে দিয়েছিল যে, সে এখন বিয়ের কথা ভাবছে না। সেখানে সম্পর্ক থেমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। অথচ এই নকুড় নন্দীই নিজের পুত্রবধূ হিসেবে তাকে প্রত্যাখ্যান করে এমন চিঠি লিখে পাঠালেন যে অসুস্থ বাবার কাছে তা দেখাতে পারে নি শ্যামলী। এমন কি মায়ের কাছেও নয়। নকুড় নন্দীর ওই চিঠিখানি একটা গোপন ক্ষতের মতো হয়ে আছে শ্যামলীর বুকের ভিতর।
বাবা মা, এবং সবিতা পিসি তিনজনেই নিচে চলে গিয়েছেন নকুড় নন্দী মশায়ের আপ্যায়নের উদ্দেশে। সহসা শ্যামলী খেয়াল করলো সে আর রমানাথ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ।
“কি আমায় বসতে বলবে না?” ঝকঝকে চোখে তাকিয়ে রমানাথ।
“হ্যাঁ , বসুন। এ তো আপনার বাবার গুরুভাইয়ের বাড়ি। সব কিছু সহজ করে নিন।“
“ সে তো সহজ করে নিতেই চাই। তোমাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে রোজ আলোচনা হয়। কিন্তু আমি তোমার সাথে ফোনে কথা বলতে গেলেই, তোমার হাতে আর সময় থাকে না।“
“হ্যাঁ , আমার কলেজে পরীক্ষা ছিল। তা ছাড়া, আমায় তো কারবার দেখতে হয়। অনেক লস করার পর প্রায় বন্ধ করে দেবার মুখ থেকে ফের দাঁড় করাবার লড়াই লড়ে যাচ্ছি।“
“জানি তো, কিন্তু কাল একটা খবর শুনে আমি আর স্থির থাকতে পারি নি।“
“হ্যাঁ , জানি, আমাকে পুলিশে ধরে নিয়ে গিয়েছে, এই খবর তো?”
“তা ঠিক । তারপর তোমাকে ফোন করতে তুমি যখন বললে যে আজ তোমার পরীক্ষা , তখন আর বিশেষ দুশ্চিন্তা করি নি।“
“আমার ভাগ্য ভালো বলতে হবে যে আমার মতো এক সামান্য মেয়ের জন্যে কেউ দুশ্চিন্তা করতে পারে। “
নিজের গলা দিয়ে এমন একটা কথা বেরিয়ে গেল দেখে শ্যামলী নিজেই অবাক হয়ে গেল। আরো আশ্চর্য হল যে, কই রমানাথকে দেখে এখন আর তার বুক ধুকপুক করছে না। অনেক সহজ মনে হচ্ছে।
“সামান্য বোলো না নিজেকে। সেটা ঠিক হবে না শ্যামলী।“
শ্যামলী তাকাল রমানাথের দিকে। ওঁর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে কথাটা রমানাথ ভিতর থেকে বলছেন।