• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৩০)

পর্ব – ৩০

১২৯

কারখানায় যখন পৌঁছল শ্যামলী, তখন সূর্য ডুবে গিয়েছে। কিন্তু দিনের আলো পুরোপুরি হারিয়ে যায় নি। শ্যামলী কারখানায় ঢুকে দেখলো কতকগুলো শ্রমিক একসাথে মিলে মুড়ি খাচ্ছে। সে ঢুকতেই ওরা শশব্যস্তে উঠে দাঁড়াল । শ্যামলী হেসে বললো “আরে খেতে খেতে উঠে দাঁড়ানোর কি আছে। এটা আমার ভাল লাগে না।”
একটা শ্রমিক তার ময়লা ঢোলা প্যান্টের ভেতর থেকে একটা খাম বের করে তার হাতে দিয়ে বললো – “ছোড়দি, থানা থেকে বড়বাবু এটা পাঠিয়ে দিয়েছে।” খামটা হাতে নিয়েই শ্যামলী বুঝলো তাতে টাকা আছে। গম্ভীর মুখে নিজের চেম্বারে গিয়ে চেয়ারে বসতে বসতে সে খাম খুলে দেখলো যে তার অনুমান সঠিক। টাকা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কে পাঠিয়েছেন, কেন পাঠিয়েছেন, এসব উল্লেখ করে কিছুমাত্র লেখা নেই।
শ্যামলী , তুমি কি পুলিশ প্রশাসনের কাছে ক’টা টাকা ভিক্ষা করতে গিয়েছিলে? তোমার বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া অপরাধের কোনো প্রতিকার চাও নি তুমি? জোর খাটানোর বিরুদ্ধে তুমি কি গলা তুলতে চাও নি? এই টাকা ক’টাই কি তোমার জয়ের স্মারক?
মন খারাপ হতে থাকে। আর মনে পড়তে থাকে একটি সুদর্শন মানুষকে, যার আলমারিতে সে রম্যা রল্যার বই দেখে মুগ্ধ হয়েছিল। তিনি কি পারতেন না দু কলম লিখতে?
খামের ওপর নামটাও খুব সাধারণ ভাবে লেখা। ভাবতে গিয়ে হেসে ফেলল শ্যামলী । আশ্চর্য , সে কি ডিএস পি স্তরের পুলিশ অফিসারের কাছে প্রেম পত্র আশা করছে? ছি ছি, তিনি যদি কোনো পত্র দিতেন, তাহলেই সেটা বেমানান কাজ হত। তাহলে তিনি কি সহানুভুতি দেখালেন? বন্ধুত্ব দিতে পারতেন না?
এমন সময়ে ফোন বেজে উঠলো।
“হ্যালো, …”
“কে, শ্যামলী বলছো?”
“হ্যাঁ , কে আপনি?”
“তুমি ঠিক আছো তো?”
বিরক্তি বোধ করলো শ্যামলী । কে লোকটা ? তুমি সম্বোধন করছে কেন?
একটা দুষ্টুমি বুদ্ধি খেলে গেল শ্যামলীর মাথায়। বললো – “হ্যাঁ , বলুন পাল অটোমোবাইলস আপনাকে কি সার্ভিস দিতে পারে?”
” শ্যামলী, আমি যেন শুনলাম, তোমায় পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে?”
বেশ অপ্রস্তুত লাগল শ্যামলীর । ওপারের গলাটা ঠিক অভদ্রের মতো নয়। তার গলায় আপনজনের উদবেগ আকুলতা । কি বলবে সে ?
” আপনি কে বলছেন একটু বলবেন?”
” আমি রমানাথ বলছি। নকুড় নন্দীর ছেলে ।”
নকুড় নন্দীর ছেলে? রমানাথ? কেন, কি চান তিনি ?
সতর্ক গলায় বলে শ্যামলী ” আপাতত আমাদের পাল অটো মোবাইলসের কোনো সমস্যা নেই। নিশ্চিন্ত থাকুন ।
ও তাই ? আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। শুনেছিলাম, রাস্তায় গোলমালের জন্যে পুলিশ তোমায় ধরে নিয়ে গিয়েছে।
” আর কিছু বলবেন?”
“তোমার সাথে একদিন কথা বলতে চাই । তুমি একদিন সময় দেবে?”
“আচ্ছা।” বলে ঠক করে নামিয়ে রাখল সে । বুঝতে পারল ভেতরে তার একটা অশান্ত ঘোড়া লাফাচ্ছে।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।