• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ১৪১)

পর্ব – ১৪১

দুপুরের খাওয়া হতে শ‍্যামলী ঝোঁক তুলল, পিসি, বড়ি দেব।
মা ধমক দিয়ে বললেন, বড়ি দেব বললেই হল? ডাল আগে থেকে ভিজিয়ে রাখতে হয়, তারপর চালকুমড়ো যোগাড় নেই। ডাল এখন বাটবে কে? তোর যতো উৎপটাং বুদ্ধি!
শ‍্যামলী বলল, পিসি, চলো তাহলে তোমার আচারের বয়ামগুলো রোদে দিই।
বাসন্তীবালা বললেন, এই এত বেলা হয়েছে, এখন কোথায় একটু শোবো, তা না তোর হাজার ফৈজৎ। যা তো, তুই তোর ঘরে যা।  সবিতা একটু বিশ্রাম নিক।
শ‍্যামলী পিসিকে মিনতি করে বলল, তুমি যাবে না, তাই না?
সবিতা বললেন, তুই যদি শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত পড়ে শোনাস্, তাহলে যাই।
শ‍্যামলী বলল, আমি অনেকদিন আগে একটা প্রাইজ পেয়েছিলাম। কয়েকটা ব‌ই দিয়েছিল। তাতে শ্রীকান্তও ছিল। অনেকদিন ধরে আর আমার আলমারিতে দেখতে পাইনি।
সবিতা চট্ করে নিজের ঘর থেকে একটা ব‌ই বের করে এনে বললেন, এই তোমার ব‌ই।
শ‍্যামলী বলল, তুমি পড়তে নিয়েছ? তা পড়ো না। ব‌ই তো পড়ার জন‍্যেই।
সবিতা হেসে বললেন, ব‌ই পড়ব ভাবি। কিন্তু পড়তে গেলেই চোখে আঠার মতো ঘুম জড়িয়ে আসে। বসে থাকা দায় হয়ে যায়। সর্বাঙ্গ এলিয়ে যায়। ব‌ই রেখে দাও। ব‍্যস আর ঘুম নেই। রাজ‍্যের চিন্তা। তোদের কি ভাবে সুখী রেখে চোখ বুজব, সেই ভাবনা।
শ‍্যামলী বলল, আশ্চর্য ভাবনা তো! মানুষ কি করে সুখী হয় পিসি?
সবিতা বললেন, এই তোর সাথে রমানাথের বিয়েটা হয়ে যাক্ আর…
বাসন্তীবালা সবিতার উপর রাগ দেখিয়ে বললেন, তুই আর কথা পেলি না? গতকালই তার বাবার শ্রাদ্ধ গেল। আজ ব্রাহ্মণ ভোজন। কাল আত্মীয় কুটুমের খাওন দাওন। পরশু কাঙালি ভোজন। তার পর এক বছর ধরে কালাশৌচ। ওর বাবা মায়ের তো শ‍্যামলিমাকে ঘরের বৌ করতে খুব পছন্দ ছিল। হঠাৎ কোন্ খেয়ালে কার পাল্লায় পড়ে একটা উদ্ভট চিঠি লিখে বসে র‌ইলেন। ব‍্যস! মেয়ের রাগ হয়ে গেল। তাও তো রমা বলেছিল, আমার বাবা লেখাপড়া জানে না। তুমি কিছু মনে কোরো না। তখন মেয়ে জেদ ধরল চিঠিটা কে লিখে দিয়েছে বলো। নকুড়দাদাও বলল না কিছুতেই। জেদাজেদি করতে করতেই মানুষটা ফুরিয়ে গেল।
শ‍্যামলী হেসে বলল, জানো পিসি, রমানাথের বাড়ির লোকজন আমাকে ডাইনি বলেছে।
বাসন্তীবালা বললেন, ও কি কথা? লোকের মেয়েকে ডাইনী বলবে কেন? তুই কিছু প্রতিবাদ করলি না? এ তো ভাল কথা নয়!
শ‍্যামলী বলল, কি প্রতিবাদ করব মা? বিদ‍্যাসাগর মশায়ের মতো করে বলব কাণাকে কাণা বলিও না, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না, ডাইনীকে ডাইনী বলিও না!
সবিতা রাগ করে বললেন, তোর মতো মেয়েকে যে ডাইনী বলে সে চোখের মাথা খেয়েছে।
 শ‍্যামলী বলল, মা, ডাইনীর গল্প শুনেছ?
বাসন্তীবালা বললেন, আর ডাইনীর গল্প শুনিয়ে কাজ নেই।
শ‍্যামলী বলল, কিন্তু মা, আমার যে বড্ড ডাইনীর গল্প মনে পড়ছে। বলি না?
বাসন্তীবালা বললেন, রক্ষে করো, তোর কাছে গল্প শোনা তো নয়, গায়ে বিছুটিপাতা ঘসে দিয়ে বলা, মোটেও চুলকাবে না। তোর কাছে গল্প শুনে আমার কাজ নেই।
শ‍্যামলী বলল, একদিন ডাইনী সেজে দেখব, কেমন দেখতে লাগে।
সবিতা বললেন, ওদের কথায়  বড্ড দুঃখু পেয়েছিস্ না রে? ভুলে যা। যে যাকে পছন্দ করে না, তাকে একটা ভুলভাল কিছু বলে। সে সব মনে রাখতে নেই। ভাল জিনিসটা মনে রাখবে। খারাপ যা কিছু, তাকে পাত্তা দিতে নেই। লোক না পোক। নিজের ডাঁটে থাকবি। তোর এমন চমৎকার গড়ন, এত ঝকঝকে বুদ্ধি, দরকার পড়লে এত রাশভারী, এই বয়সে কটা মেয়ের এমন হয়?
শ‍্যামলী সবিতাকে বলল, সত‍্যি সত্যি ডাইনীর গল্প শুনবে না?
সবিতা রাগ করে বললেন, হ‍্যাঁ ডাইনীর গল্প শুনি, আর রাতে জল সরতে যেতে ভ‌য় পাই আর কি? তোর মতো তো অ্যাটাচ বাথরুম আমার নেই।
শ‍্যামলী আবদার করে বলল, ও পিসি শোনো না, আজ রাতে না হয় আমার কাছেই শুলে। আমি কাছে থাকলে তোমার আর ভয় কিসের!
সবিতা বললেন, তোর যত আদিখ্যেতা। রোজ রোজ বুঝি তোর কাছে শুতে দিবি? না রে, আমি যা আছি, ভাল আছি।
ঠোঁটে অভিমান ঝুলিয়ে শ‍্যামলী বলল, ডাইনীর গল্প বলতে ইচ্ছে করছে, তা তোমাদের নাকি আমার গল্প শুনতে ভাল লাগে না।
বাসন্তীবালা ফল কাটতে কাটতে বললেন, তোর বাবার জন‍্যে ফল কটা নিয়ে যা। তারপর আমি যাচ্ছি। তারপর তোর গল্প শুনব’খন। শ‍্যামলী ফলের পাত্র নিয়ে বাবার কাছে গেল।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।