শ্যামলী বলল, কি আছে প্যাকেটে?
সবিতা বললেন, কি আছে নিজের ঘরে গিয়ে দেখবি। এখন খেতে বোস।
প্যাকেট ফাঁক করে শ্যামলী টের পেল খামে করে চিঠি এসেছে। চটপট একটা খাম টেনে দেখল প্রবাল সেন চিঠি পাঠিয়েছেন। আমস্টারডাম থেকে। আশ্চর্য! দু মাস হয়ে গেছে। খামের মুখ খোলা। তার মানে কেউ খুলেছিল। অন্য খামগুলিও বের করে দেখল শ্যামলী। সবই প্রবাল পাঠিয়েছেন। আর সবই খোলা হয়েছে।
শ্যামলী সবিতাকে বলল, পিসি, আমার চিঠি কে খুলেছে?
কে খুলেছে, কে পড়েছে, অতসব আমি জানব কি করে শুনি? একদিন কাজের মেয়েটা আসে নি। আমি ভাবলাম যাই, ছেলেদের ঘরটা পরিষ্কার করে দিই গে। খাটের তলাটা পরিষ্কার করতে যেতেই শান্তু হাঁ হাঁ করে উঠল। বললাম, বাইরের লোক দিয়ে কি ঠিক মতো সাফ সুতরো হয় রে বাপু? তা কিছুতেই শুনবে না। খাটের নিচে কত যে হাবিজাবি জিনিস ফেলে দিয়েছে, সে আর কি বলব! দুটো জামা, একটা তোয়ালে দলা মোচড়া করে রেখে দিয়েছিল… একদিন যেই দেখেছি ওরা দু ভাই কেউ ঘরে নেই, অমনি ফাঁকতালে..
সবিতাকে থামিয়ে শ্যামলী বলল, পিসি, শর্টে কথা বলতে শেখো। আমি জানতে চাই, আমাকে লেখা চিঠি কে খুলেছে, আর এতদিন ধরে কোথায় পড়েছিল?
সবিতা বলল, সেই কথাই তো বলছি, একটা দুটো নয়, অতগুলো চিঠি, সব কুড়িয়ে আমি প্যাকেটে পুরে রেখেছি। রোজ ভাবি, আজই তোকে দিয়ে দেব। তা তুই কোথায় কোথায় ঘুরিস। আর বাড়ি ফিরলি যদি, এক একদিন এক একটা গণ্ডগোল পাকাস্, সব আমার তালগোল পাকিয়ে যায় বাপু। তোমার সম্পত্তি তোমার হাতে তুলে দিলুম, এবার তুমি কি করবে, তা করো।
শ্যামলী বলল, তাহলে আমার চিঠি বাড়িতে আসার পর খাম খোলা অবস্থায় দাদার খাটের নিচে পড়েছিল, এই তো?
সবিতা বলল, এই সহজ কথাটা বুঝতে তোর এত সময় লাগল? হাসালি তুই!
সবিতাপিসির মন্তব্যের কোনো উত্তর না দিয়ে, শ্যামলী মায়ের দিকে ফিরে বলল, দ্যাখো মা, ন্যূনতম ভদ্রতা বলে একটা ব্যাপার আছে। একটা অ্যাডাল্ট লোকের নামে চিঠি এলে সেটা অন্য কেউ তাকে না জানিয়ে পড়তে পারে না। ফেলে রাখতেও পারে না। খামে যখন আমার নাম লেখা, তখন সেটা আমার প্রাইভেট চিঠি। চিঠি এলে আমার কাছে সেটা পৌঁছবে, এটাই নিয়ম। তা না হয়ে এমন হল কেন, মা, তোমার কাছে আমি এর একটা বিহিত চাইছি।
মা কাকুতি মিনতি করে বললেন, এখন ওরা ঘুমিয়ে পড়েছে। আর গোলমাল পাকাস নি মা। আর আমার শরীর চলছে না। খেয়ে নিয়ে আমায় ছুটি দে।
শ্যামলী মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বলল, মা, তোমাদের কথা শুনলে মনে হয়, বাড়িতে যত গোলমাল আমিই পাকাই! আমি কতটুকু সময় বাড়ি থাকি? কই আমি তো কারও পারসোনাল ব্যাপারে মাথা ঘামাই না? সর্বদা নিজের কাজে ডুবে থাকি? তবুও দেখি তোমরা বলছ আমি না কি রোজ গোলমাল পাকাই?
সবিতা বললেন, আচ্ছা আচ্ছা, আমার ঘাট হয়েছে। আজকের মত এইখানেই ক্ষ্যামা দে বাপু। এ দেখছি নোংরা পরিষ্কার করতে গিয়ে আরো ময়লা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল। সব যদি টান মেরে ফেলে দিতুম, তো কিচ্ছুটি জানতে পারতিস না, আর তখন বকাবকি করতে পারতিস না?
শ্যামলী পিসিকে জড়িয়ে ধরে বলল, না না পিসি, তুমি রাগ কোরো না। তুমি টেনে বের করলে বলে তবে না পেলাম! ভাগ্যিস তুমি ইংরেজি পড়তে পারো। নইলে, না বুঝে ফেলে দিলে, আমি কি আর পেতাম?
সবিতা বললেন, ছাড়্ ছাড়্, এই মাঝ রাত্তিরে আমাকে নিয়ে আর আদিখ্যেতা করতে হবে না। যা মেজাজ তোর, লাট সায়েবের মতো। এই ম্যাজিস্টারের মতো জেরা করছে, তো ওই বাচ্চাদের মতো জড়িয়ে আদর করছে। তোমার খেয়াল খুশির নাগাল পাওয়া ভার।
শ্যামলী তার পিসিকে বলল, লাট সাহেব দেখেছ না কি?
সবিতাপিসি বললেন, আর দেখে কাজ নেই বাপু। তোরা যা দেখাচ্ছিস, তাতেই চিত্তির। আর আমার কিছুই চাই না।
মা বললেন, হাতটা সাবান দিয়ে খুব ভালো করে ধো।
শ্যামলী বলল, হ্যাঁ মা, এই যে ধুই।
খেতে বসে সবিতা প্রশ্ন করল, হ্যাঁ রে, তোর যে বন্ধুর কথা বলছিলি, সে কেমন আছে?
শ্যামলী বলল, পিসি, ওর চোখ দুটো দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তাকিয়ে আছে ফ্যালফ্যাল করে, যেন কি হচ্ছে চারপাশে, কিছুই বুঝতে পারছে না!
বাসন্তীবালা বললেন, কী হয়েছে ওদের?
শ্যামলী বলল, কলকাতার ধর্মতলায় এক কাকার বড় দোকান। টিভি ফ্রিজ দামি দামি জিনিসের দোকান। গুণ্ডারা ওর কাকার মাথায় বাড়ি মেরে দোকান লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে। মাথায় ভাল রকম চোট পেয়ে ওর কাকার জ্ঞান আসছে যাচ্ছে। আর ওর বাবার কারবার দিল্লিতে। তাকে নাকি গুণ্ডারা তরোয়াল দিয়ে কুচিয়েছে।
বাসন্তীবালা বললেন, আহা রে! কিন্তু কেন এমন করল?
শ্যামলী বলল, সেটাই তো বুঝতে পারছে না গুরশরণ। কেন এমন হল?
সবিতা জানতে চাইলেন, হ্যাঁ রে, ইন্দিরা গান্ধীকে না কি বাড়ির কাজের লোকেরাই মেরে দিয়েছে। সত্যি না কি রে?
শ্যামলী বলল, আমি ভাবতেই পারছি না, দেশের গোয়েন্দারা এত বড় খবরটা পেল না কেন?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন