• Uncategorized
  • 0

জন্ম শতবর্ষে শিশির বসু

আত্মনির্ঘোষের এই যুগে ক্রমশ ভাবাই কঠিন যে, এমন মানুষেরা কিছু দিন আগেই এই বঙ্গে ছিলেন, যাঁরা একাগ্রমনে কাজ করতেন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, কোনও জনপ্রিয়তা বা সঙ্কীর্ণ স্বার্থের চিন্তা ছাড়াই। শিশির কুমার বসুর জন্মশতবর্ষে (১৯২০-২০০০) সেই বিগত সমাজের জন্য আবারও কষ্টবোধ হয়। পেশাগত ভাবে ব্যস্ত ও নিবেদিতপ্রাণ শিশু-চিকিৎসক, নিরলস প্রতিষ্ঠান-নির্মাতা শিশির বসু নিশ্চয় বুঝেছিলেন তাঁর বাবা শরৎচন্দ্র বসু ও রাঙাকাকাবাবু নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যে দেশটি স্বাধীন করার কাজে তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, স্বাধীনতার পর সেই দেশের প্রয়োজন— কর্মী মানুষের কর্ম। নেতাজি ও আজাদ হিন্দ ফৌজ বিষয়ক সমস্ত লেখাপত্র এক জায়গায় আনতে শিশির বসু যখন তৈরি করছিলেন নেতাজি রিসার্চ বুরো, প্রথম দিকে তিনি কোনও সরকারি সাহায্যও পাননি। প্রথমে ভাই অমিয় বসু, এবং পরে সহধর্মিণী কৃষ্ণা বসু ও পুত্রদ্বয় সুগত বসু ও সুমন্ত্র বসু সাহায্য করেছেন তাঁকে।
কেমন ভাবে কাজ করায় বিশ্বাস ছিল তাঁর, তার চমৎকার ছবি মেলে লেনার্ড গর্ডনের স্মৃতিচারণে। ইতিহাসবিদ গর্ডন গবেষণা করেছিলেন নেতাজি ভবনে, একাধিক বই লিখেছিলেন সুভাষচন্দ্র ও শরৎচন্দ্রের উপর। কাজের সূত্রে বুঝলেন তিনি, নেতাজির বন্দিজীবনের বেশ কিছু লেখাপত্র পরিবারের অন্য কেউ নিয়ে গিয়ে আর ফেরত দেননি। হতাশ গবেষক আক্ষেপ শুরু করলেন, ওই লেখাগুলি পেলে কতই-না ভাল হত তাঁর বই। শিশির বসু সংক্ষেপে বললেন, ‘‘চিন্তা কোরো না। অনেকটাই পেয়েছ তুমি। তাই দিয়ে কাজ শুরু করো, লিখে ফেলো।’’ গর্ডন কোনও দিন ভোলেননি, তাঁর অস্থির মন কত শান্ত হয়েছিল স্থিত-সংযত সেই পরামর্শে। শান্ত আত্মপ্রত্যয়ী শিশির জানতেন, খেদ কিংবা সঙ্কীর্ণতা বিদ্যালাভে সাহায্য করে না, কর্মব্রতে তো নয়ই।
সুভাষচন্দ্রের সেই নেতাজি-জীবনের অজানা অভিযানে ভ্রাতুষ্পুত্র শিশির বসুই ছিলেন প্রথম পর্বের বিশ্বস্ত সঙ্গী। বিশ্ব-রাজনীতির সঙ্গে সে দিন এক নতুন বন্ধনে যুক্ত হয়েছিল ভারতের রাজনীতি। নতুন, তবে আকস্মিক নয়। ভারতীয় বিপ্লবীরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছিলেন সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী কাজের সূত্রে। ২ ফেব্রুয়ারি নেতাজি রিসার্চ বুরো আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাই কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির টিমোথি নর্মান হার্পারের বক্তৃতার বিষয় ছিল: ইন্ডিয়া’জ় অ্যান্টি-কলোনিয়াল রেভলিউশনারিজ় অ্যাক্রস এশিয়া অ্যান্ড টু ওয়ার্ল্ড ওয়ার্স। তার পর প্রমিতা মল্লিক ও সৌরেন্দ্র-সৌম্যজিৎ-এর সঙ্গীত। আর, সেই নীরব কর্মী মানুষটির ব্রোঞ্জ-প্রতিকৃতি উন্মোচন, যাঁকে ছাড়া ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের নেতাজি-পর্বটি সুসম্পন্ন ও সুরক্ষিত হত না। সঙ্গে বাঁ দিকে ১৯৪৫ সালে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর শিশির বসু, আর ডান দিকের ছবিটি ২০০০ সালে তোলা।
শ্রেয়সী কাঞ্জিলাল
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।