• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ১)

এক

আজ অনেকটা দেরি হয়ে গেল। এখন বাজে রাত পৌনে দশটা। ট্যাক্সি পেলে হয়। আরে, ওই তো একটা দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে এগিয়ে আসছে। ‘কসবা’ বলেই দরজা খুলে ট্যাক্সিতে চড়ে বসলাম। ভীষণ ক্লান্ত আজ, তাই উঠেই সিটে শরীরটা এলিয়ে দিলাম! হঠাৎ ড্রাইভারের সিটের পিছনে লেখা ট্যাক্সির নাম্বারট চোখে পড়ল। সদ্য লেখা কাঁচা রঙ সিটের গা বেয়ে নীচে গড়িয়ে পড়ছে। এতক্ষন ধরে নাকে আসা গন্ধটা যে এই রঙেরই তা বুঝলাম। নাম্বারটা কিন্তু মানানসই নয়। নাম্বারটা হল DY21 SY8287। হঠাৎ আমার মাথায় বিদ্যুৎ চমকের মতো খেলে গেল। আরে! এটা তো কোনো ‘সাইফার টেক্সট’! অর্থাৎ  সাংকেতিক বার্তা। আমি মনে মনে নিশ্চিত হলাম আলবাত্ এটা সাইফার টেক্সট। ক্রিপ্টোগ্রাফি আমার সাবজেক্ট। পিনাকেল ব্যাঙ্কের সাইবার সিকিউরিটির জোনাল হেড আমি। নানারখম কোড, এনক্রিপশন, পাশওয়ার্ড সিকিউরিটি নিয়ে রোজই মাথা ঘামাতে হয়। তাই নাম্বারটা দেখে গোত্র চিনতে এবং চমকে উঠতে বেশি সময় লাগল না।
স্বভাব অনুযায়ী বারকয়েক পড়ে মুখস্থ করে নিলাম। নিয়ম মাফিক নানা রখম সম্ভাবনা গুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এই ধাঁধার সমাধান বের করতে হবে। আচ্ছা DY যদি WB কোথায়? এ তো খুব সহজ মনে হচ্ছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে মাথায় খেলে গেল যে সংখ্যার দিক থেকে 0 থেকে 9 এবং ইংরেজি অ্যালফাবেটকে উল্টো করে সাজিয়ে কোডিং করা হয়েছে। অর্থাৎ a মানে z, b মানে y, c মানে x ইত্যাদি এবং 0 মানে 9, 1 মানে 8 ইত্যাদি  আবার উল্টোভাবেও তাই। তাহলে সংকেতটা দাঁড়াচ্ছে WB78HB1712।
কিন্তু সংকেতটা কিসের? মোবাইলে গুগলটা খুলে একটা সম্ভাবনা ঝালিয়ে দেখলাম। কলকাতা 78 –এর মধ্যে কোন কোন ব্যাংক আছে। অনেকগুলোই আছে। যেটা খুঁজছিলাম সেটাও আছে। হিন্দুস্থান ব্যাংক । HB তাহলে হিন্দুস্থান ব্যাংক আর 78 বলতে হালতু ব্রাঞ্চ বোঝানো হয়েছে। আর 1712 কি হতে পারে? ব্যাঙ্কের লকার নাম্বার?

এইসব এলোমেলো ভাবনার মধ্যাই হঠাৎ খেয়াল হল যে রাতের অন্ধকার চিরে ট্যাক্সিটা ছুটে চলেছে আমায় নিয়ে। রক্তচক্ষু হেডলাইট ট্যাক্সির সামনের জমাট অন্ধকারকে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু তাছাড়া মেঘলা অমাবস্যার রাতে চারিদিকে আর কোথাও একবিন্দু ফোটন কণার হদিশ পাওয়া দায়। সামনে বসা ড্রাইভার আর হেল্পার নিশ্চুপ আর নিথর, যেন পাথরের মূর্তি। একই গতিতে এক নাগারে সোজা রাস্তায় ছুটে চলেছি আমরা। আরে, এ কোন রাস্তা? এতক্ষন ধাঁধার মধ্যে মশগুল ছিলাম বলে খেয়াল করিনি। কিন্তু এখন ধাঁধানি কাটিয়ে সম্বিত ফিরে পেতেই ট্যাক্সির দুটি শাণিত ফলার মতো আলোর বিমের সাহায্যে বুঝলাম এ রাস্তা আমার একেবারে অচেনা। সঙ্গে সঙ্গেই ঝাঁঝিয়ে উঠলাম, “এই গাড়ি রোকো”। কিছু বোঝার আগেই হেল্পার মুখে কেউ কিছু একটা চেপে ধরল। খানিক প্রতিরোধ করতে গিয়েই বুঝলাম আমি জ্ঞান হারাচ্ছি তীব্র ক্লোরোফর্মের গন্ধে।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।