• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ১৪)

চোদ্দ

ধ্যান ভঙ্গ হয়ে বাইরে এসে দেখি বসার ঘরে ষণ্ডা মার্কা একটা লোক সোফায় বসে। পাশে শ্রেয়ান বসে অতিরিক্ত আমাইক হওয়ার ভাঙ করে আলাপচারিতা করার চেষ্টা করছে। কথা না শুনেই বোঝা যাচ্ছে শ্রেয়ান একটু বেশি মাত্রায় ভাল সাজার চেষ্টা করছে। ওকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। অতক্ষন ধরে চোয়াল ছাড়িয়ে কান প্রর্যন্ত হাসার পাত্র ও নয়। ওর বাকি সব স্বভাবের মতো হাসিটাও তাৎক্ষণিক। পিন ফোটানো এক ধরনের বিটকেল হাসি। এক ঝলক দেখা দিয়েই মিলিয়ে যায়, যার অধিকতরই নিজের ছেঁদো কথা আর ভিতিহীন হাস্য কৌতুকের সময়েই ঘটে। যাই হোক, লোকটা কে? কালো, লম্বায় প্রায় ছ ফুট। স্বাস্থ একেবারে পেটানো, শুধু একটা মিনি ভুঁড়ি ছাড়া। মোটা গোঁফ এবং ছোট ছোট চুল। আমাকে আসতে দেখে উঠে দাঁড়াল। বলল, “নমস্কার, আপনি কি মি. চৌধুরী?” আমি প্রতি নমস্কার করে সম্মতি জানালাম। আমায় একটা খাঁকি রং এর খাম দিয়ে বলল, “ম্যাডাম পাঠিয়েছেন। আর এই চাবিটা”। পকেট থেকে চাবিটা বের করে আমার দিকে বাড়াল। অমনি শ্রেয়ান ওর হাত থেকে চাবিটা নিয়ে নিল। সঙ্গে সঙ্গে লোকটি বিদ্যুৎগতিতে আবার শ্রেয়ানের হাত থেকে চাবিটা ছোঁ মেরে নিয়ে, আমার হাতে চালান করে দিয়ে, গম্ভীর মুখে বলল, “অন্যের হাতে দেওয়ার অর্ডার নেই”। আমি বললাম, “আমি ম্যাডামকে ফোন করে জানিয়ে দেব যে এগুলো পেয়ে গেছি”। লোকটি কোন উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে গেল। সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাওয়ার শব্দ পাওয়ার পর শ্রেয়ান বলে উঠল, “কি রুড!” আমি জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। এখান থেকে মেন রাস্তাটা দেখা যায়। দেখি বাইকটা ফ্ল্যাটের গেটের বাইরে সাইড স্ট্যান্ড করে দাঁড় করানো। লোকটা বেরিয়ে রাস্তায় একটা অটো দাঁড় করিয়ে উঠে গেল। আমি শ্রেয়ানকে বললাম, “কারণটা বুঝলি? তোর বাইকটা নিয়ে এসে ফেরত দেওয়া ওর কাছে ফালতু কাজ। তারপর এখন আবার গাঁটের পয়সা খরচ করে ফিরতে হল। পুলিশি সেন্টিমেন্ট লেগেছে বাবুর”। শ্রেয়ান খ্যাক খ্যাক করে হেসে আমার কাছ থেকে চাবিটা নিয়ে নীচে নেমে গেল।
আর্যমার পাঠানো সিলড খামটা খুলতেই কয়েকটা A4 সিট বেরিয়ে এল। বোঝা যাচ্ছে এগুলো ফোটোকপি। সোফায় বসে মন দিয়ে সব কাগজগুলো পড়তে লাগলাম। না, সব তথ্যই প্রায় জানা। শুধু যে ভদ্রলোকের ভল্টটা ডাকাতি হয়েছে তার নামটা জানা গেল। ডঃ কে পি চোঙদার। সঙ্গে ঠিকানাটাও আছে। আমি শ্রেয়ানের মোবাইলে সেভ করে রাখলাম। একটা বিষয় যেটা আমার মনোযোগ আকর্ষণ করল যে তিনজন ডাকাতের মধ্যে দুজনের পিঠে ব্যাগ ছিল। একজন প্রতক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী তাদের মধ্যে একজনের ব্যাগে “লুফথানসা” এয়ার লাইনসের ট্যাগ লাগানো ছিল। পুলিশের নজরে পড়ছে কিনা জানিনা। আমার তো বেশ অবাকই লাগল। হালতু ব্যাংক ডাকাত কি জার্মানি থেকে এসেছে? না কি অন্য দেশেও এদের সার্ভিস আছে? ডাকাতেরা কি ইন্টারন্যাসানাল ফ্লায়ার? ব্যাপারটা তো সহজ ঠেকছে না। হঠাৎ দেখি শ্রেয়ান হাঁফাতে হাঁফাতে উপরে উঠে এল। বলল, “অর্কদা চল একবার নীচে”। শ্রেয়ানের পিছু পিছু তারাতাড়ি নিচে নেমে দেখি বাইকের তেল ট্যাংকের ওপর ধারালো কিছু দিয়ে রং চটিয়ে লেখা “Sie Zu Uns”। ভাষাটা আমি জানি। এটার মানে জার্মান ভাষায় লেখা Join Us.

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।