কবিতায় সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়
by
TechTouchTalk Admin
·
Published
· Updated
১. লকডাউনের ডায়রী থেকে ৪
শূন্যতায় রাস্তায় আছরে পড়ছে হাওয়া
ত্রস্ত মানুষ আজ অন্ধ কোটরে।
দৃশ্য থেকে বহুদূরে, আলোহীন কূপের ভেতর
বাড়ছে দেহের উত্তাপ।
ক্ষুধার্ত বাতাস…
মুখোশের আড়ালে লাল হয়ে ওঠা চোখ
হাহুতাশ করছে ঈশ্বরের কাছে!
মৃত্যুভয় নিয়ে চলেছি এক অদৃশ্য কবরে।
ভাতের গন্ধ নেই। স্পর্শ নেই।
ছিনিয়ে নিচ্ছি শুধু আমাদের ভাগ
যারা পাচ্ছে না তারা তো আমাদের কেউ নয়!
বুকে পাথর রেখে বাড়িয়ে চলেছি নিষ্ঠুরতা।
একদিন যারা তৈরী করেছিল এ শহর
কাঁদছে তারাই বাড়ি ফেরার টানে
ভেজা চোখ। অস্ফুট চিৎকার…
তবু আমদের স্বস্তির নিঃশ্বাস তাদেরই ঘর্মাক্ত
মৃতদেহের ওপর!
২. লকডাউনের ডায়রী থেকে ৬
ব্যাগটা কিনেছিলাম শখ করে
ঝকঝকে শপিং মলের ব্রান্ডেড দোকান।
আলমারির হাতলে ঝুলে আছে আজ
শরীরে খিদের আগুন
শুকনো ত্রস্ত জিভ আর
ফ্যাকাশে দুর্বোধ্য দুই চোখ।
কিছুই বলার নেই
এরকম কতকি তো টুকিটাকি,
হিসাবের বাইরে পড়েছে আজ।
প্রয়োজন বলতে শুধু চাল ডাল আর একটু প্রোটিন।
অসংগঠিত সমাজ
বুকের ভেতর শুধু যুদ্ধ শেষের কাতরতা!
যত চালাকই হোও
পৃথিবীর কিচ্ছু এসে যায় না তাতে।
দু চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে সে,
আমরা আসলে,
অন্ধ টানেলের ভেতর দৌড়ে মরা ইঁদুর
ভাবছি নিরাপদ ,
অথচ জানিনা পৃথিবীর আয়ু ফুরিয়ে আসছে ক্রমশ !
৩. লকডাউনের ডায়রী থেকে ৭
কত প্রশ্নের ভেতরেও নিজেকে শান্ত রাখি
হয়ত পাওনি দরকারী মেসেজ
হয়তবা পেয়েছ তবু অসুবিধায় দিতে পারোনি উত্তর
জানি, এসবই বাহানা হয়ত।
ভুলিয়ে রাখার কারসাজি।
ভালো থাকতে হবে আমাদের।
রাখতে হবে।
লকডাউনের দিনে ধরে রাখতে হবে মনোবল।
তবু কি করে বলো, মেনে নিই আবার
প্রয়োজনে তুমি গুটিয়ে নিয়েছ হাত!
পাহাড়ের গা থেকে পড়তে পড়তে খাদে
মিলিয়ে যাচ্ছি ক্রমশ,
অথচ দাঁড়িয়ে দেখছ,
ভাবলেশহীন
পকেটে গোটানো হাত।
সমস্ত আর্তনাদ চক্কর কাটছে উপত্যকা জুড়ে
তোমার দুকানে হেডফোন।
অচেনা পথিকের মতো দুঃস্বপ্ন ভেবে কুড়িয়ে নিচ্ছো
দুষ্প্রাপ্য অর্কিড !
৪. লকডাউনের ডায়রী থেকে ৮
এখন কালো সময়
গর্তে বেড়ে ওঠা পোকাদের চলাচল
ক্ষীণ হয়ে আসা গলার স্বর
বারান্দা জুড়ে মনভোলানো হাততালি
আর কিইবা পারি!
দূষনহীন একটা আকাশ
মাঝরাতে হঠাৎ ডেকে ওঠা কোকিল
কিংবা নিঃসঙ্গ পাহাড়ে চক্কর কাটা হাওয়া,
ভাবতে পারোনি যা কোনদিন, তেমনই
হঠাৎ থমকে গেছে সভ্যতা।
দৃশ্যহীনতায় ভুগতে ভুগতে
নিজের ভেতর দেখি।
শুধু জল, ডুবে যায় শরীর।
ফুলে ওঠে, ভেসে ওঠে তবু ভোলা যায় না।
ভালো লাগে না আর।
কথা বলোনি বিগত একমাস
যতই গুটিয়ে থাকো, আমি জানি
যেভাবে শিলং এর সেভেন সিস্টার ফলসের সামনে
চিৎকার করে ডেকেছিলাম, ক্রিস্টোফার
তাকি আজ মনে পড়েনা একবারও
নিঝুম নিঃসঙ্গতায়?