জন্ম ১৯৭৮, কলকাতা। প্রকাশিত কবিতার বই ৪টি। বৌদ্ধলেখমালা ও অন্যান্য শ্রমণ কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্য আকাদেমির যুব পুরস্কার, পেয়েছেন মল্লিকা সেনগুপ্ত পুরস্কারও। স্পেনে পেয়েছেন আন্তোনিও মাচাদো কবিতাবৃত্তি, পোয়েতাস দে ওত্রোস মুন্দোস সম্মাননা। স্পেনে তিনটি কবিতার বই প্রকাশ পেয়েছে। ডাক পেয়েছেন মেদেইয়িন আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব ও এক্সপোয়েসিয়া, জয়পুর লিটেরারি মিট সহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবে। অংশ নিয়েছেন Poetry connections India-Wales প্রকল্পে।
অসাড়লিপি ১৮
স্বাধীনতা মানে তোমার সঙ্গে কাটাতে চাওয়া একটা দুপুর
পাকা শরীরের গম কর্কশ মাখিয়ে রেখেছে জিভে
আমি তার স্বর ভাঙতে চেয়েছি
বাক্য ও বিন্যাস জুড়ে ফেলে দিতে চেয়েছি ইতিহাসের চূর্ণ শহরের কণা
তুমি জানো নৃতত্ব আসলে একতা ভাঁওতা
সামনে পড়ে থাকা স্কুল পাঠ্য বই থেকে তুমি ব্লেড দিয়ে
কেটে নিয়েছো কোনও অখ্যাত যুদ্ধের বিকেল
তাকেই সুরতহাল বলে জেনেছি
প্রতিদিন সাদা রং আমাদের ভয় দেখায়
কোনও জায়গায় শান্তি দেয় না
কেউ উত্তর দিতে পারে না কেন পাঠ্য বইগুল সবার কথা বলে না
কেন আচমকা ঝাঁকুনির মত ছিটকে যায়
ইউরোপের রেনেসাঁস সমান্তরাল ঔপনিবেশিকতা
তুমি স্পষ্ট করে দাও সব
স্পষ্টতাই পাথরে মিশে থাকা হাড়ের টুকরো
তুমি গবেষণার ছলে ছায়া ফেলেছো প্রত্যেকটা অক্ষরের বাঁকে
তারপর আমার ভিক্ষা শেষ
পরিব্রাজনের মুখে উশকে ওঠা সম্ভাব্য বিকেল-কফি
ঘ্যানঘ্যানে শিশুর মত আলো
আমরা প্রত্যাখ্যান করতে শিখে যাব
বাড়ি কোথায় বুঝে গেছি গেছি দ্বীপ ও বালির ঘোরে
যে রাস্তায় কখনও একসঙ্গে হাঁটিনি আমরা
যে সব শিথিল কথায় এড়িয়েছি পুরনোকে
অথচ তাদেরই আক্রমণে রক্তাক্ত হয়েছে জিভ
ভিন্ন ভাষায় পালিয়েছি আমরা
এক ধরনের অজুহাত রাস্তা রাত হাইওয়ে আলো ও সমুদ্র পাঠ
আমাদের চুম্বন ও জিভের মধ্যে পাকিয়ে ওঠা পুরনো তাড়না-উঠোনে
বাড়ি আসলে একটা হাজার বছরের ইতিহাস
আমাদের স্পর্শ করার সমস্ত চাহিদা
জ্বালিয়ে দিয়েছে ক্লান্তি
আমরা বিদ্রোহ করিনি
পরপর আছড়ে পড়েছে ডাক্তারি রিপোর্ট
আমরা দাঁড়িয়ে থেকেছি অসম্ভবের মধ্যে
একধরণের ধুলোর মিনার
আমরা শব্দ ছড়িয়ে হেঁটে গেছি
পরপর ঘোষণাগুলো আছড়ে পড়েছে
পরপর স্বরগুলো ভেঙে এসেছে
গানের শরীরে জমা হয়েছে পরস্পর বিরোধী কিছু ছবি
আসলে কোথাও একটা সমুদ্র আছে
ভাবতে ভাল লাগে
সেখানে জমা হয়েছে কিছু মানুষ
ছড়িয়ে দিয়েছে দাবীপত্র
এতদিন না জানানো হিংস্রতা ভাল লাগে
আমরা স্থির এখনও জানানোর মত কথা তৈরি হয়নি
অথচ আমরা জানি আমাদের ভাষা
অতি সহজেই মুছে যাবে
কোত্থাও কেউ পড়বে না
শুধু বলার কথায় থেকে যাবে
এখনও বুঝতে পারিনি আমরা
একসঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকার অর্থ
একটা গাড়িহীন লালা সিগনালে
মধ্যরাতের জেব্রা ক্রসিং
যেভাবে একটা চলে যাওয়া ভাষা
তার ধারণাগুলো রেখে যায় অভ্যাসে
নতুন ভাষার আবছায়া স্বপ্নের ঘোরে
স্পষ্ট জীবাশ্মের ছাপ
আমি বুঝি বাড়ি ফেরার মানে
উজ্জ্বল লাইকেন আর পাথরের টেবিলের দ্বিরালাপ
আরেকটু এগোলেই বুঝি শুকনো ডাল
সমুদ্রপিঠের উপর
বুঝি সকাল কখন আবেগ
মৃদু কম্পন প্রসারিত হচ্ছে হাতে
একটু আগেই ছিল ভাসা ভাসা শিশু শব্দ
এখন শুধু ঢেউ আর ইউক্যালিপ্টাস
অথচ সমস্তই অচেনা
নিঃশ্বাস থেকে কিছু দূরে ভিড় করে
এই অতলান্তিকের দ্বীপজ অক্টোবর
এখানেই উন্মুক্ত হৃৎপিণ্ড
কখন কোথায় সাপ খুবলে দিয়েছে সিগালের বুক
সামান্য মেঘেও ভয়
বৃষ্টি এলে ১৬ শতকের পথ
জটিল এক রাস্তা হয়ে যাবে
তৃষ্ণা ও জলের মধ্যে থেকে যাবে তোমার শান্ত আঙুল
এভাবে দেশের মানে ঠিকরে ওঠে
আমি বুঝতে পারিনা কেন এত বেশি দৈব-নির্ভর
শুধু ফানুশ দুপুরে দেবস্থানে বিত্তবান মানুষের ভিড় দেখে ভয় করে
আমিতো মারদিকে সরে আসি
পাশফের বার অঙ্ক আঙুলে জ্বলে ওঠা অসম্ভব ছোট ফুল
চিৎকার করতে ইচ্ছে করে “ওঠ শুয়োর! এই ডেলা হয়ে থাকা অসাড়তোর কেউ নয়। দেখ কীভাবে এই প্রসারিত করছে শ্বাস, বাড়ি আর কোনও মেটা ফর নয়।লেখ, ক্রমশ শূন্যের দিকে মিলিয়ে যাওয়া ঘরের চাবি তুই হারিয়ে ফেলেছিস।এখন শুধুই বিস্মরণ কুঠুরি। ইতিহাস গিলে বুঁদ হয়ে থাকা গ্রাম গুলোকে আঁচড়ে দিয়েছে শহর। প্রতি নিয়ত আরও বড় হয়ে উঠছে যে সমস্ত অসাড়-বাক্সতাদের ভেঙেদে। এই সকাল রঙের কালির ভিতর ডুবে যাক যাবতীয় আঁচড়ও বিশ্বাস…
ক্রমশ এগিয়ে আসছি দুটো দ্বীপকে জুড়ে রাখা সেতু মধ্য যুগ
কয়েক শতাব্দি আগেত্রবাদুর নিষিদ্ধ মাতৃভাষায় গান লিখেছিলেন এখানে
এইসান সিমোনদ্বীপে অতলান্তিকের বাতাসও আমার পায়ের শব্দে
মিলিয়ে গেছে ভাষাহীন তার জ্ঞান ভাষা হারানোর ক্ষোভ
অথচ এখানেই একটা কনসেন্ট্রেশান ক্যাম্পছিলো ফ্রাঙ্কোর
আমার সমস্ত ছবি তৈরি করার নেশা বরাবর বেড়ে উঠছে একটা রাস্তা
নিজের ভিতরের সমস্ত মধ্য যুগ ফাটিয়ে দেবে
যেভাবে নৈশপতঙ্গ এড়িয়ে চলে সরীসৃপ
যেভাবে কবিতা ধর্মস্থান পেরিয়ে ধরে রাখে প্রাচীন শীতঘুমের প্রতিধ্বনি
যেভাবে সমুদ্রের নুনে ঝলসে যাওয়া নীল আগুনে
ধাতব সুরব সেযায় প্রতিটা স্নায়ুতে
যেভাবে জ্যৈষ্ঠ জোড়ানো হাওয়া
তুমি রেখে দাও বাড়ির নাম-ফলকে
আর এখানেই আচমকা কেউ ভাষা কেড়ে নেয়
দরজায় জোরালো আঘাত করে প্রশ্ন করে খাদ্যাভ্যাস
মাংস কাটা ছুরি দাঁড়িয়ে থাকে জিভের উপর
আমরা কি সমস্ত কাটা জিভের ভাষা আপন করে নিতে পারি?
যেমন খুন হওয়া গ্রাম-সাংবাদিকের প্লাস্টিকের কলম…
সেখানেই আমাদের শহর শেষ
বহুদিন বৃষ্টি না হওয়া বালি রাস্তা
গুটিয়ে থাকা দুপুরের ঘুমও কুকুর
দৃশ্য নির্মাণের গায়ে ধেবড়ে দিয়েছে
কষ্ট-কল্পনা-লতা
দূরের ঘাটে নাদ্য সন্ধ্যারতির ঝাপসা হলুদ
আমরা ফুসফুসে পুরে নিই
বাতাসে ভেসে থাকা কাচের গুঁড়ো
চোখ ধাঁধানো হাইওয়ের আলো
কোনও কাগজেই রক্তের দাগ নেই
শুধু পায়ের পাতায় বিঁধে আছে
আলপিনের মত ধারালো অভ্যাস