“আমি ও রবীন্দ্রনাথ” বিশেষ সংখ্যায় পাপিয়া মণ্ডল
২৫শে বৈশাখ
পোস্ট কার্ড রঙ মলাটে লালে আঁকা আর লেখা “সহজ পাঠ/ প্রথম ভাগ”…
বাবা এনে হাতে দিয়েছিলেন।
সদ্য পাওয়া বইটির গন্ধ শুঁকেছিলাম অনেকক্ষণ।
তখন আমি চিনতাম না ” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর”কে।
বইটাও “ছোট খোকা” বই বলতাম।
স্কুলে একদিন বড় মাস্টার বললেন- “কাল সবাই রবি ঠাকুরের একটা করে ছড়া মুখস্থ করে আসবি। কাল রবীন্দ্রজয়ন্তী।”
ঘরে এসে বাবার কাছে সেই প্রথম শোনা,
প্রিন্স দ্বারকানাথ, দেবেন্দ্রনাথ, জোড়াসাঁকো,
শান্তিনিকেতন, রবীন্দ্রনাথ আর পঁচিশে বৈশাখ।
তখনও আমি খুব ভালো চিনি নি ওনাকে।
কিছু পরে বুঝেছিলাম উনি ঈশ্বর তুল্য।
শুধুমাত্র পঁচিশে বৈশাখ নয়, যে কোন সাংস্কৃতিক
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী আর সমাপ্তি সঙ্গীতে ওনার গীতিই প্রযোজ্য।
এমনকি নবীনবরণ আর বিদায় সম্বর্ধনায়ও ওনার রচনার অনুরণন।
তখনও আমি চিনতে পারি নি সত্যি!
কৈশোরের পর ধীরে ধীরে যখন জীবনে ঘাত-প্রতিঘাতের আগমন হল,
কেমন করে জানিনা উনি আমার পরমাত্মীয় হয়ে উঠলেন।
সুখে, দুঃখে প্রতিনিয়তই আশ্রয় নিলাম তাঁর কাছে।
যে কোন অনুভূতির এমন পুংখানুপুংখ বিবরণ উনি কি করে লিখেছেন, প্রশ্নটা ঘনীভূত হয়েই গেছে।
ওনার কাছে এমনভাবে আশ্রয় নিয়েও,
ওনাকে কখনোই চিনে ওঠা হয় নি।
আসলে ওনাকে চেনা যায় না। ওনার ব্যপকতা, ওনার ঔদার্য, ওনার চেতনা, ওনার মনন…
নাহ! আমরা কেউই তেমন করে পারি নি ওনাকে ছুঁতে।
ওনার আদর্শকে সামনে রেখে এগোতে গিয়েও ওনার গৌরবকে কলুষিত করি বারবার।
বিশ্ব জয় করে আনা “নোবেল” চুরি হয়।
ওনার গান, কবিতার লাইন বিকৃত করা হয়।
এতেই প্রমাণিত, আমরা সত্যিই তাঁকে চিনি নি।