• Uncategorized
  • 0

“আমি ও রবীন্দ্রনাথ” বিশেষ সংখ্যায় নিবেদিতা

রবে নীরবে

আজ বিকেলে যখন বৃষ্টি নামল….আমার ঘর থেকে আকাশ রাস্তা কিছুই দেখা যায় না, কিন্তু গন্ধ পাওয়া যায়। গরম সিমেন্টের উপর বৃষ্টির ফোঁটার গন্ধ। এই গন্ধটায় আমি ইউনিভার্সিটির হার্ডিঞ্চ বিল্ডিং এর ছাদে চলে যাই। একটা ফুরিয়ে আসা বিকেলে কালো মেঘ আর আবছা হয়ে যাওয়া কিছু গল্প খুঁজে আনি। পেন্সিলের লেখা মুছে দিলেও যেমন ছাপ রয়ে যায়…
জীবনে প্রতিটা গন্ধের সঙ্গে যেমন একটা স্মৃতি আষ্টেপৃষ্টে থাকে, তেমনই প্রতিটা মুহূর্ত বেঁচে থাকে রবি ঠাকুরের গানে।
প্রথম প্রেমের মাধুর্য নিয়ে যারা তাত্ত্বিক আলোচনা করেন, তাঁদের বলি, সেই প্রেমই সেরা যার কোনও এক্সপায়রি ডেট নেই। অন্য কাউকে ভালবাসলেও যার অস্তিত্ব মনের গভীরে অনুরণিত হয়। সেই প্রেমই হল রবীন্দ্রনাথ। জীবনে আমার এমন কোনো প্রেম বা বিচ্ছেদ আসেনি, যেখানে রবি ঠাকুর হাজির ছিলেন না। আসবেও না।
প্রতিবার ভালবাসতে গেলেই তো মনে হয়….”কী করিলে বলো পাইব তোমারে রাখিব আঁখিতে-আঁখিতে”। জানি রবি ঠাকুর এই গান ঈশ্বর ভাবনা থেকে লিখেছিলেন। তবু আমার তো এখনও মনে হয়….কাউকে ভালবাসতে গেলে, ভালবাসার কথা বলতে গেলে, “হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে, হৃদয়ে রয়েছ গোপনে “র থেকে ভালো লাইন হয় না।
আবার গ্রন্থিটা যখন মাঝপথে আলগা হয়ে যায়, তখনও দাড়ি বুড়ো পিছু ছাড়েন না…”মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে।”
আবার প্রতিদিন সাংসারিক আবর্তে ঘুরপাক খেতে খেতে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ি…তখনো তিনি শক্তি জোগান… “নয়, নয় এ মধুর খেলা; তোমায় আমায় সারাজীবন সকাল সন্ধ‍্যাবেলা”…ওই যে শেষে তিনি কয়ে রেখেছেন “তোমার প্রেমে আঘাত আছে, নাইকো অবহেলা” ।
একটা মজার কথা মনে পড়ে গেল। যেদিন বিয়ে করে নতুন বাড়িতে আসি, আমি সঙ্গে যে ট্রলি ব‍্যাগটি এনেছিলাম, তাতে অত‍্যন্ত জরুরি জিনিসের মধ্যে একটি ছিল গীতবিতান। এমন নয় যে আমি রোজ সকালে তানপুরা নিয়ে গলা সাধতে বসি, তবু মনে হয়েছিল এটা ছেড়ে আমি সংসার করতে যাব কী করে।
সেদিন সবাই আমাকে একটা গান শোনাতে বলছিল। নিজের বাড়ি ছেড়ে এলে কারো গান গাইতে সাধ হয় না। তবুও গেয়েছিলাম, রবীন্দ্রসঙ্গীতই… “টুকরো করে কাছি, আমি ডুবতে রাজি আছি”….
তবে গাইতে ইচ্ছে করছিল…. “এলেম নতুন দেশে……..অচিন মনের ভাষা শোনাবে অপূর্ব কোন্ আশা,
বোনাবে রঙিন সুতোয় দুঃখসুখের জাল,
বাজবে প্রাণে নতুন গানের তাল–
নতুন বেদনায় ফিরব কেঁদে হেসে॥”
এভাবেই আমার শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, প্রেম-অপ্রেম-বিচ্ছেদ জুড়ে রবি ঠাকুরের গান। এমনকী বিক্ষোভ বিপ্লব দীর্ঘশ্বাসেও তিনি।
ছোট থেকে কত দেশাত্মবোধক গান তো শেখানো হয়েছে আমাকে। তবুও আমার এখন তেরঙ্গা দেখলে একটাই গান গাইতে ইচ্ছে করে….”এরা তোমায় কিছু দেবে না, দেবে না, মিথ্যা কহে শুধু কত কী ভাণে।”
আরও অনেক কথা বলা বাকি রয়ে গেল। আসলে জীবন জুড়ে যাঁর অস্তিত্ব, যাঁর পরশ তাঁকে শব্দসংখ‍্যায় বাঁধি কী করে।
শেষ করি আজ যে সুরটা, কথাটা কোনো কারণে বারবার আসছে….
“মিলাব নয়ন তব নয়নের সাথে, মিলাব এ হাত তব দক্ষিণ হাতে– প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো।”
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।