আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বিশেষ সংখ্যায় তপন সাহা
by
·
Published
· Updated
আমার ভাষা তোমার ভাষা মাতৃ ভাষা
আকার ও ইঙ্গিতের মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করতে করতে (যদিও ভিন্নমত আছে) বিবর্তিত মানুষই একদিন তার দুর্ভেদ্য বুলিকে গ্রহনযোগ্য ও সহজবোধ্য শব্দ ভান্ডারে পরিণত করে। যার প্রকাশ রুপটির নামই ভাষা। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে অর্থাৎ হাজার সাতেক বছরের বনজ আদিম শব্দগুলো ইন্দো – ইউরোপীয় ভাষায় পরিচিত হয়ে উঠেছে ততদিনে। সময় গলে যাবার সাথে সাথে মানুষের বিস্তৃতিতেই একে অপরের হাত ধরে বদলে যেতে থাকে প্রতিনিয়ত সেই ভাষা। পরবর্তী দেড় হাজার বছরের মধ্যেই দুইমুখী হয়ে পড়ে তা। পশ্চিমমুখী কেস্তম ভাষার বর্তমান রূপ ইংলিশ, ইতালীয়, জার্মান ও স্পেনিশ আর পূর্বমুখী ভাষা শতমের সাথে জড়িয়ে পড়ে বাংলা আর উর্দু। সময় গড়ায়। সময়ের পরিক্রমায় ১০০০বছরের মধ্যে রাস্ট্রভাষার দাবার চালে জড়িয়ে পড়ে ভাষা।
শব্দের খেলায় দাবার কিস্তিমাতও চলে। একবার ওকে পাল্টাই তো আর একবার একে। ১৯৪৭ সালের ১২ ডিসেম্বর ভাষাসংগ্রামের ইতিহাসের প্রথম হামলাটি হবার পর তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ১৯৪৮ সালে বাংলা রাষ্ট্রভাষার দাবি মেনে নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তারপর ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে উর্দুভাষাকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসাবে ঘোষনা করলে ভাষার আকাশে বিশ্বাসঘাতকতার মেঘ জমে ওঠে। সেই কালো মেঘ সরাতেই মাত্র ২৬ দিনের মাথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুসংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে প্রতিবাদ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর অবাধে গুলি চালাতে থাকেন।
গুলিতে বুক পেতে দেন মৌলভী শামসুজ্জোহার পুত্র আবুল বরকত, গ্রামীণ কর্মজীবী মানুষ আবদুল জব্বার,রফিক উদ্দীন আহমদ,মরহুম মো. ফাজিল মিয়া, শফিউর রহমান, আবদুল আউয়াল, মো. অহিউল্লাহ সহ আরও অনেকে। ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথ রক্তে ভেসে গেলে শোকদিবস হিসাবে পরিগণিত হয়। চোখের নোনাজল মানেনি শাসন, মানেনি বারণ। পদ্মার জল গঙ্গায় এসে মিশেছে অনেক আগেই। সেই জলে বইছে ভাষার জোয়ার। বাংলা ভাষার। কাঁটাতারের বেঁড়া দিয়ে রক্ত ফোঁটা বের করা যায়নি দুই বাংলার। শুধু এপার- ওপার নয়, নয় একটি দু’টিও। বিশ্বের ১৮৮টি দেশে ইউনেস্কোর স্বীকৃতিতে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ রূপে পালনের মধ্য দিয়ে আপন আপন দুই হাতের আদরে- ভালোবাসায় ভাষার সুখ কুড়োতে কুড়োতে আমরা আসলে ব্রহ্মকেই অভিবাদন করি প্রতিনিয়ত। আগলে রাখি চোখের মণির মতো যত্নআত্তিতে।