• Uncategorized
  • 0

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বিশেষ সংখ্যায় নিবেদিতা ঘোষ মার্জিত

উই দ্যা বাঙালী ……

(একটা গুলিয়ে যাওয়া লেখা। তাই নিজের দায়িত্বে পড়বেন।)
গেছোদাদা কে মনে আছে?নেই? ছাড়ান  দেন?আমি বরং আসল কথাতেই যায়। প্রথমতঃ গেছো দাদার হিসাব অনুযায়ী,দেখতে হবে বাঙালী কারা? বাংলা ভাষায় কথা বলে যারা, তারা! না হে, ‘বাংলা ভাষায় কথা বলে তারা বাঙালী’—না,না ধুর তাই হয় নাকি?এতো সহজে বাঙালীত্ব অজ্জন করা যায়? রবি ঠাকুর, বিবেকানন্দ,বিদ্যাসাগর,রামমোহন রায়,নেতাজি এই সব মহীরুহ কে নিয়ে দেদার কপচাতে হবে। মাইক পেলে  এই বিষয়ে যা ইচ্ছা বলার ক্ষমতাতেই বাঙালীত্ব মহান হয়ে রয়েছে। এটার দক্ষতা দিন দিন বাড়তে থাকবে আপনি যদি সঠিক ‘বাঙালী’ হন। রাজনীতি, সিনেমা, ফুটবল… আপনার সামনে যে থাকবে, তাকে শুনিয়ে ছাড়বেন, তবে আপনি বাঙালী।সম্প্রতি এই লিস্টি তে ‘অত্থোনীতি’ যোগ হয়েছে। বাঙালী এখন এই ব্যাপারেও বিস্তর ডিম পাড়িতে সক্ষম। সর্বদা পঁক পঁক করে হোয়া আর ফেসবুকে এই নিয়ে ডিম দিয়ে ছেয়ে ফেলে।(এই সকল বাঙালী বাংলা মিডিয়াম ইস্কুলে বাড়ির বাচ্চাদের পড়াতে পাঠায় না।)সেই জন্যে বাঙালা ভাষায় কথা বলবার ক্ষমতা দিয়ে বাঙালীত্ব লাভ করা যায় না।যেমন ধরুন,রিক্সাওয়ালা কৃষ্ণ প্রামানিক,আয়া মাসি পূর্ণিমা পাল, সাফাইওয়ালা বীরু হরিজন,সব্জী বিক্রেতা হাসিম চাচা,টাটকা মাছ নিয়ে আসা ছবি মণ্ডল,তবলার ঠেকা দেওয়া মাস্টার অনিরুদ্ধ নিয়োগী,মুদীর দোকানী নিশানাথ বনিক,গ্রাম থেকে বাড়ি ভাঙ্গার কাজ করতে আসা ছকু শেখ,ওষুধের দোকানে কাজ করা উত্তম কামিল্যা, রিসেপ্সনিস্ট পিয়া মজুমদার, টেলার মাস্টার পলাশ গুপ্ত,ছোট বাচ্চাদের ফুটবলের কোচ মহীন সেন,দোকানে দোকানে ঠাকুরের পুজো করা সন্ধ্যাকর আচার্য … এরা আদৌ বাঙালী? না , মানে আমরা এদের বাঙালী বলে মনে করি?এরা নিজের কাজ মন দিয়ে করে যায় (করে যেতে বাধ্য হয়)।কিন্তু এরা কেন বাঙালী নয়?
 যে কালে বাঙালী ‘বাঙালী’ হয়ে গড়ে উঠছিল তখন কিছু মহীরুহ ছিলেন। সেই মহীরুহ কে চিরকাল দেখে দেখে নিজেকে বাঙালী  তাই মনে করতে শুরু করেছে। এছাড়া চোখে বাঙালী কম দেখতে পায়। তাই নিজের অবস্থান টাও ঠিক বুঝতে অক্ষম।
-‘আমার দাদুর বিরাট বড় বাড়ি ছিল’ (আরে বাবা, তোর তো নেই)
-‘আমার ছোট দিদার মেজ জামাই বাবু ডি লিট পেয়েছিলেন’ (আরে তোর জামাই বাবু তো একা প্লেন ট্রাভেল করতে গিয়ে বিপি বাড়িয়ে ফেলেন)
– ‘আমার মা গান্ধীজীর সামনে গান করেছিলেন’ (পাড়ার মাচাতে গান করে আয় না। ওখানে নেতারা আসেন।এতো দেমাক কিসের)।এই সব যারা ভাবেন তারা নিজেদের বাঙালী মনে করেন।
গুলিয়ে যাচ্ছে তো। আমিও মাথায় হিজিবিজি হয়ে বসে আছি।জটটা খুলবে বলে মনে হচ্ছে না। তাই গোড়া থেকে কেটে ফেল্লাম। পোস্কার মাথা খানিক চুল্কে বুঝলাম ‘সীমাবদ্ধতা’।আমাদের মিডিয়া, ইন্টেলেকচুয়াল প্যারামিটার তাদের দিকে তাকিয়ে দ্যাখে না… রবি ঠাকুরের গান না জেনে, বিদ্যাসাগরের কথা না বুঝে, বাঙালা সাহিত্য খায় না মাথায় মাখে …এরা দিব্বি বাংলা ভাষায় কথা বলে চলেছে। সিরিয়াল দেখে, শনি মন্দির আশ্রিত ভক্তি নিয়ে,হাতে গুচ্ছের গ্রহ-নক্ষত্র বশ করার আংটি ধারণ করে,বাড্ডে পালন করে, তারা দিব্বি তীব্র স্রোতে জীবন কাটাচ্ছে… তারা বাঙালী ? হ্যাঁ গো দিদিমনি – দাদামনি এরা বাঙালী। ওটাই আসল স্রোত।
ছোটবেলায় বাড়িতে গ্রাম থেকে আসা মুনিসদের কাছ থেকে একটা গান শিখেছিলাম… “হাড় মুর জ্বলিয়া গ্যালো, দেওরা রে”। অতি অসব্য গান টা মা গাইতে বারণ করতেন। ওটা বাংলায় লেখা গান। এখন পাড়ায় অসব্য গান বাজে ভোজপুরি ভাষায়… গরীব বাঙালী আর এই সব রচনা করে না ।টুনির মা,দাদুর লাল টমেটো অবশ্য আছে।কিন্তু ওটা যে ওপার বাংলার।ভাষা যদি শুধু ভদ্র হয়…তার গতি হারিয়ে যায়।(জানি না এই কথা লিখবার পর আমাকে মেরে ফেলতেও পারে লোকে)… রোদ্দুর রায়ের গান চালিয়ে একটি কলেজে প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী নেচেছে।সাধারণ কথা বলতে গেলেই তো আজকাল  কেবল ‘ব’ চন্দোবিন্দু আকার দিয়ে চার অক্ষর না বললে ঠিক বাক্য তৈরি হয় না।খারাপ শব্দ দিয়ে কথা বলার মধ্যে একটা পাওয়ার কিংবা জোস থাকে মনে হয়।সেখানে রবি ঠাকুরের চিরায়ত সুরে নিজেদের বিকার গ্রস্ত ভাষা বসিয়ে ফুত্তি করা কেমন স্বাভাবিক হয়ে যায়…। প্যারোডি ভালো নাকি মন্দ ,কে জানে।
 আগে এতোটা ‘না জানা’ ছিল না। কারণ গণ এন্টারটেনমেন্ট ছিল খুব ‘দামী’ আর ‘দুর্লভ’ ।রেডিও তে কনিকা বন্দোপাধ্যায় এর পাশে খুব দামী নাটক ছিল,সলিল চৌধুরির গান ছিল। লোকশিক্ষে হবার যে মাধ্যম গুলো বাড়তে শুরু করল তখন থেকেই মুশকিল শুরু হল।যত ভালো ইস্কুলেই পড়ান ভালো রেজাল্ট করার জন্যে যেমন আজকাল বুঝিয়ে দেবার, কান মুলে দেবার একজন কে রাখতে হয় তেমনি রবি ঠাকুরের গান, ভালো গল্প, ভালো ভাব আর সহজ লভ্য নয়।সেটা অন্য ধরণের শিক্ষা হিসাবে আসে। আর সাধারণ ভোগ্য নয়।
   তবে কি খুব কোণঠাসা অবোস্তা? না মশাই…অত টা হাল ছেড়ে দিচ্ছি না।সেদিন লালগোলা প্যাসেঞ্জারে বাঁশি বাজিয়ে টাকা চাওয়া লোকটি ‘তোমার পূজার ছলে’ বাজাচ্ছিল।কি যে সুন্দর। কপালে গেরুয়া টিপ পরা, উবের চালক  দেখলাম… শুনছে “তারে বলে দিও, সে যেন আসে না আমার দ্বারে”।ফুরফুর করে ইংরেজিতে রাজনীতি নিয়ে কথা বলছিল মেয়েটি ফোনে। যতই ইংরেজিতে বলুক মোনভাব? হি হি বাঙালী। কাজের মেয়ের ছেলে নতুন ফোন কিনে হোয়া তে রিকু পাঠাল।ইংরেজি অক্ষরে রোজ স্ট্যাটাস বদলায়…নানান ধরণের কাজ করে সে।
‘কব্জির  জোরে ভাই, এ জীবন জিততে চাই’/
ভালো হওয়া ভালো,হিংসা খুব কালো/
সে আজ হেসেছে,আমার কথা রেখেছে
…… আমার স্থির বিশ্বাস একটু ঘষে মেজে নিলে এ ছেলে বিজ্ঞাপনের জিঙ্গল লিখবে।
কিপটে,অলস,ছিটগ্রস্ত,গরীব,কলহ প্রবণ বাঙালী সহ্য হয়,অরসিক আর অমানবিক? না … যতই বাংলা বলুক। পেটে আমাশার ভুট ভাট,মার্ক্স আর বিবেকানন্দ নিয়ে সব জান্তা হবার চেষ্টা, এইসব খারাপ গুনের সাথে… কোথায়… একটু অন্য রকম। অন্য ভাবে।আসলে নিজের ওপর আশা ছাড়ি কি করে!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।