• Uncategorized
  • 0

“আজও রবি দিন” -এ নিবেদিতা ঘোষ মার্জিত

তিনি যখন কেবল আমার

ছোটবেলায় আমার সুরসাধক বাবা খুব চেষ্টা করেছিলেন গান শেখাবার। হারমোনিয়ামে রিড টিপে শিখেছিলাম “সকল গর্ব দূর করি দিব তোমার গর্ব ছাড়িব না।”এর অর্থ বোঝার বয়স আমার ছিল না। এখন পরিস্থিতি, সমাজ, জীবন, পরিবার তা থেকে যত সুখ, দুঃখ,কষ্ট আনন্দ পাওয়ার পরে এই গানের দুটো লাইন বড্ড আপনার হয়ে যায়। “যত মান আমি পেয়েছি যে কাজে সেদিন সকলি যাবে দূরে…” যখন সব পাওয়া থেকে একা হতে হয় তখন … ভালোবাসা আর অপমান দুই ধুয়ে ফেলে আবার কাজে নামতে হয়।
সুখে থাকতে তাঁকে দরকার হয়? হয়তো হয়… আমার ব্যক্তিগত সুখে তাঁকে ব্যবহার করি বাহবা পাবার জন্যে । আহা কি লিখেছিলেন, তিনি কেমন সুর দিয়েছিলেন, তাল সমন্ধে কি জ্ঞান তাঁর… এসব বলে আমি আসলে বুঝিয়ে দিই “আমি কতটা জানি”।
সুখ আসলে মনের অন্ধকার দেখায় না। বিপদ, শোক, হেরে যাওয়া তে সুরক্ষা বলয় যখন নষ্ট হয় … একা কেবল একা দাঁড়াতে হয় তখন আসলে কতটা সরস আমি, কতটা শক্তিশালী আমি, কতটা মানবিক আমি সেটা বুঝতে পারা যায়। নিজের ব্যক্তিগত জীবনের মনের অন্ধকারের গভীর ক্ষত চিনহে তিনি বোরলীন দেন। এক মহান স্রষ্টা সারা জীবন ধরে শোক পেয়েছেন। তাঁর সেই শোক প্রকাশ কোথাও উচ্চকিত নয়। অপূর্ব ভাবে সুন্দর। আর সৃজনময়। যে রাতে দুয়ার ভেঙ্গে যায়…। ঘর ভরা শূন্যতার সামনে দাঁড়াতে হয়… সেদিন মানুষ অন্য ভাবে পূর্ণ হয়।
তিনি খুব গভীর শোকে আমার হাত এই গান দিয়ে ধরেছেন। শোকের মুহূর্ত কে ধারণ করতে হয়। দুঃখ পাওয়াও একটা পাওয়া। শোক কে ভয় পাওয়া নয়… অনুভব করা…
একটি অত্যাধুনিক গান আছে … অনুপম রায়ের লেখা গাওয়া… “সব পেলে নষ্ট জীবন”… আধুনিক জীবনে সব সুখের মাঝে এটা অতি মাত্রায় দার্শনিক। আমি অবাক হলাম রবি ঠাকুর আমার জন্যে আগেই তা লিখে গিয়েছিলেন।
“ না চেয়ে যা পেলে
তার যত দায় পুরাতে পার না তাও,
কেমনে বহিবে চাও যত কিছু
সব যদি তার পাও।”
কত পেয়েছি আমি… এই হিসেব করতে গিয়ে নিজেই অবাক হলাম…
আমার সব ইন্দ্রিয় আছে… যা দিয়ে জীবনের সব রস আমি আমি নিতে পারি। আমি তার থেকে যা পাই… ফেরত কি কিছু দিতে পারি? আমি বাবা, মা, ভাই, দিদি, বন্ধু, সন্তান, সন্তানের বাবা… সকলের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত কত ভালোবাসা পাই…তার বদলে ফেরত কি দিতে পেরেছি?
আর মনের গভীরে অসম্ভব যে সব চাহিদা আছে… সে গুলো যদি পূর্ণ হয়… আমি কি সে গুলো ধারণ করার ক্ষমতা রাখি।
যখন নিজেকে বাঁধতে হয় এমন এক সময়ে দেখতে পাই… “কি দিবে তোমারে ধর্ম?” তার উত্তরে দেবী গান্ধারীর মুখে বসালেন, “দুঃখ নব নব…।” মাতা হয়ে সন্তান কে ত্যাগ করতে বলছেন… স্নেহান্ধ ধৃতরাষ্ট্রর সামনে … যেন এক তীব্র আলো। ঈশ্বর কে ভয় পেয়ে নয়। সত্য কে ‘সত্যের’ জন্যে ধারণ করতে হবে।
রবি ঠাকুর… হেরে যাবার দিন… ফেল করার দিন… ভুল করার দিন… আমার বড্ড কাছে এসে উঠে দাঁড়াতে বলেন… “আমারে তুমি অশেষ করেছ… এমনি লীলা তব।” আমি তাঁর লেখা গুলো জীবনের ক্ষতে উপশম হিসাবে ব্যবহার করি… তাঁকে প্রনাম।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।