• Uncategorized
  • 0

অণুগল্পে মিলন চট্টোপাধ্যায়

অমল হয়ে বসে আছি

অনেক দিন পর নীল আকাশ দেখলো অমল।এই শহরে ভরা বসন্তে যে কোকিল ডাকে শোনা হয়নি তো।হয়তো খেয়াল করে নি,কিংবা চারিদিক গাড়ির আওয়াজ আর মানুষের কোলাহলে তা শোনা যায় না।কিন্তু আজ বেশ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে কোকিলের কুহু ডাক।ওদিকে ফাঁকা রাস্তায় কারা যেন বলছে,বাইরে কেন ঘরে ঢুকে পড়ূন,নাহলে লাঠি চালাবো।অমল সেদিকে তাকায় ,মনেমনে ভাবে, রাস্তা তো কারো একার নয়,তাহলে ওরা বারণ করে কেন?
দূর গ্রাম থেকে দুধ দিয়ে যায় গয়লানী মাসি।সকালে উঠে অফিস যাওয়ার তাড়া থাকায় কথা বলার ফুসরত নেই।আজ অমলের মনে হলো একবার মাসি বসিয়ে গল্প করলে কেমন হয়?
অমল বলে,মাসি তোমরা সব কেমন আছো গো?তোমাদের গ্রামটা অনেক দিন দেখি নি। একদিন তোমাদের গ্রামে আমাকে নিয়ে যেও তো ।আমি দুচোখ ভরে গ্রাম দেখতে চাই।গ্রামের সবুজটুকু হৃদয় ভরে উপলব্ধি করতে চাই।আমাকে সবুজ দেখাতে নিয়ে যাবে?
গয়লানী মাসি অবাক হয়ে বলে,কিন্তু এখন কি করে যাবে এখন তো যাওয়া বারণ।অমল বোঝে না,কেন গ্রামে যাওয়া বারণ।গয়লানী মাসী চলে যাওয়ার পরেও অমল জানালার ধারে বসে ভাবতে থাকে এইভাবে কতদিন জানালার ধারে বসি নি ।দূরের নীল আকাশে একঝাঁক পরিযায়ী পাখি উড়ে যায়,অমল সেদিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে।আজ প্রথম অমলের পাখিগুলোকে দেখে হিংসা হলো‌।মনে হলো,ওরা যখন খুশি যেখানে খুশি উড়ে যেতে পারে কিন্তু আমরা পারি না কেন?
অমল মনে করার চেষ্টা করে ঠিক কতদিন আগে ঘরে বসে সবার সঙ্গে গল্প করে সময় কাটিয়েছে।ভাবতে বসে হিসাবটা শুধুই ভুল হয়।অঙ্কটা প্রায় মিলতে যাবে এমন সময় ফোনের রিংটোনটা বেজে ওঠে।অমল দেখে অফিসের বন্ধু শ্রীনিবাস ফোন করেছে।অমল ইচ্ছে করেই ফোনটা কেটে দেয়,আজ আর কারো সাথেই ফোনে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।ফোন নেট এসব নিয়েই তো জীবনের অনেক টা সময় কেটে গেল তার চেয়ে আজ আকাশ দেখি,নীল আকাশ ।কোন ছোটবেলায় ঠাকুর মার মুখে গল্প শুনতে শুনতে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।সেসব দিনের কথা আজ সবচেয়ে বেশী মনে পড়ছে অমলের। মনে হচ্ছে পৃথিবীটা আজ বদলে যাচ্ছে, জীবন ধারা,হয়তোবা এটাই ভবিতব‍্য।অনুরাধা অমলের পিঠে আলতো ছোঁয়া দিয়ে বলে,কি ভাবছো?
আমল অনুরাধার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।