• Uncategorized
  • 0

অণুগল্পে অবিন সেন

কুমির

টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছিল। এখন থেমেছে। তবে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ সারা আকাশ জুড়ে ইতস্তত ছড়িয়ে আছে। সামনে বিদ্যাধরীর জলের উপরে সেই সব মেঘের ফাঁক দিয়ে কোন এক আশ্চর্য আলো এসে পড়েছে। বারীশ মিত্র ভাবলেন। বাতাসে ডিজেল পোড়া ধোঁয়ার নিশ্বাস ফেলে একটা জেলে নৌকা ঘাট ছেড়ে গেলো। টিম টিম করে একটা ইলেকট্রিকের বাতি জ্বলছে। ঠিক যেখানে ঘাটে নামবার সিঁড়ি তার মাথার কাছে। সেই আলোর নিচে একটিমাত্র লোক উবু হয়ে বসে জলের দিকে তাকিয়ে  আছে।
মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই যেখানে ঠিক নদীর বাঁকটা শুরু হয়েছে সেই ঢালু জমির উপর থেকে মুখ বাড়িয়ে আছে কটেজটা। প্রাইভেট কটেজ। প্রায় বছর কুড়ি আগে এখানে একবার এসেছিলেন বারীশ। এবার কেন এলেন? কিসের আশায়! সেবার এখান থেকে ফিরে গিয়ে নির্মাণ করেছিলেন তাঁর সেই বিখ্যাত ‘ক্রোকোডাইল’ সিরিজের ছবিগুলি। রাতারাতি স্ট্রাগলিং বারীশ মিত্র হয়ে গেলেন বিখ্যাত শিল্পী! তারপরে এতোগুলো বছর সেই ভাঙিয়েই চলল। দুঃসহ সৃষ্টির স্যাটিশফ্যাকশন হীনতায়। 
লোকটার চোখদুটো যেন জ্বল জ্বল করছিল। কী তীব্র সেই চাহনি। 
কি জানেন সার, বিশ বছর এই রাতের বেলা জলের ধারে বসে অপেক্ষা করছি, সেই কুমিরটা কবে আসবে! বিশ বছর আগে আমার নতুন বউটাকে, ঝপ করে জল থেকে উঠে টেনে নিয়ে গেল। 
বারীশ ভাবছিলেন কুমির কি কুড়ি বছর বাঁচে! তবু বললেন
তাকে দেখলে চিনতে পারবে কি করে?
চিনতে আর পারব না! ঠিক চিনতে পারব। আর তার পরেই…..
লোকটা হাতের অদ্ভুত ভঙ্গি করে যেন ‘দা’ চালায়। 
তখনই ঘাড় ফিরিয়ে বারীশের দিকে সে তাকায়। ঝুঁকে পড়া ঝাঁকড়া চুলের ভিতর দিয়ে শুধু চোখ দুটো ধক ধক করে জ্বলছে। বাকি সব অন্ধকার। 
বারীশ এক ঝটকায় মুখ ঘুরিয়ে দ্রুত পা চালালেন। কটেজটা প্রভাবশালী এক বন্ধুর। ঘরে ঢুকে দ্রুত তিনি স্কেচ-বুকটা টেনে নিলেন। তাঁর হাত আর পেনসিল যেন বেহিসেবী হয়ে গিয়েছে। আবার কি তবে সেই মিরাকল! বিশ বছর আগের একটা হিংস্র রাতের পরে আঁকা সেই বিখ্যাত ছবিগুলির মতো? সেবার, কেয়ারটেকার ঝগড়ু গাঁ থেকে এক তরুণী বউকে ধরে নিয়ে এসেছিল মুরগির ঝোল রান্না করার জন্যে। বারীশের ভিতরে তাঁর ছবির জন্তুগুলি ঢুকে পড়েছিল সেই রাতে। সরা রাত সেই মেয়েটির সর্বনাশ করে শেষ রাতে তার অসাড় দেহটা গড়িয়ে দিয়েছিলেন নদীর ঢাল বেয়ে।  
তার হাত আজ এমন বশ মানছে না কেন! আবার সেই বিখ্যাত কুমির! পেনসিল তার বশ মানছে না কেন! 
এ কি! কেন বার বার জানোয়ারের আদলে তার সেল্ফ পোট্রেট এঁকে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণহীন আঙুলগুলি?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।