সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলে বিডিও হয়ে এসেছি গত এক মাস। এ এলাকা আয়লায় তছনছ হয়ে গেছে গত দশ বছর। সমস্ত আবাদি জমি সমুদ্রের লোনা জলে নষ্ট হয়েগেছে। একদিকে বাঘ অন্যদিকে কুমির ছাড়াও রয়েছে বিষাক্ত সাপের উৎপাত। আমাকে সরানোর দরকার ছিল আগের পোস্টিং থেকে। অনেকের বাড়া ভাতে ছাই পড়ছিল। তাই পাঠিয়ে দিলো এখানে । সমস্যা নেই, ইয়ং ব্লাড ও একা মানুষ আমি।
এসে থেকে দেখছি এ গ্রামের দৈন্যতা। ছেলেরা জন খাটতে গেছে ভিন রাজ্যে। পড়ে আছে ভিটে মাটি আগলে শিশু বৃদ্ধ ও মহিলারা। শুধু সীমাহীন দারিদ্র। এখানে নতুন উৎপাত বাদা অন্ঞলের গাছ কেটে গোপনে চালান। নজরদারি বাড়িয়ে শক্ত হাতে আটকাতে এখানেও আমাকে নিয়ে বেশ কিছু মানুষের সমস্যা দেখা দিয়েছে।
গতকাল কাঠের ঠিকাদার ভূদেব মন্ডল আমার উঠোনে এসে শাসিয়ে গেল “কাজটা তুমি ভালো করছোনি সাহেব। এ তোমাদের কলকেতা নয়। এখানে লাশ গুম হলে লোকে বলে হয় ‘বাগে’ খেয়েচে নয়তো কুমিরে”। বলেই খ্যাংড়াকাঠি হাতে হলদেটে নোংরা রুমালে নাক ঝেড়ে পরিষ্কার করল। স্পষ্টতই হুমকি। বুঝতে পারছি পাঞ্চায়েত থেকে থানা সবাইকেই তুষ্ট করা আছে।
সন্ধের মুখে নিজের কোয়ার্টারে ঢুকছি দেখি সেই বাইশ বছরের সুন্দরী যৌবনবতী কালো তীক্ষ্ণচক্ষু মেয়েটি। মেয়েটার চোখে কী যেন আছে। মনে হয় মেয়েটা দূর থেকে সবসময় আমাকে লক্ষ্য করছে ।
একদিন বৃদ্ধ রান্নার ঠাকুরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম মেয়েটির কথা। বলেছিল ও ‘গয়না’। অনাথ। ওর বাপ মা ভাই বোন আয়লায় মাটির ঘর চাপা পড়ে মরেছে। ও বেঁচে গেছে।
রাত বারোটা, মনে হল জানলার বাইরে পায়ের আওয়াজ। ইংরেজ আমলের এ কোয়ার্টারে জানলার খড়খড়ি যে কেউ বাইরে থেকে টেনে তুলতে পারে। বের হলাম। কেউ নেই। টর্চের আলোয় দেখলাম জানলার নীচ থেকে আড়াআড়ি দূরে একটা নাইনএমএম পিস্তল পড়ে। অবাক হলাম। রুমালে জড়িয়ে তুলে আনলাম।