টুকটুকি মাকে গুঁতো দিলো; সনকার সাড়া নেই, আবার পাশ ফিরলো।
–মা দেখো দেখো, আজ থেকে লকডাউন উঠে যাবে।
আলো ফুটেছে, সনকা চোখ কচলালো।
–যাহ!
–সত্যি, বাইরে এসে দেখোনা?
কদিন আগেও এইসময়ে গাড়ির আওয়াজেই ঘুম ভেঙে যেত। প্লাস্টিকের পর্দা সরিয়ে বাইরে মুখ বাড়াল সনকা। প্রায় দশবছর এই ফুটপাথের বাসিন্দা ওরা মা আর মেয়ে। ধু-ধু করছে রাস্তা, আগের ছদিনের মতই।
–এপ্রিল ফুল!
টুকটুকির দিকে হাত তুলতেই ও দৌড়ে পালালো। রাগে একদলা থুতু ফেললো ও। একটু দূরে কোমরে হাত দিয়ে মেয়েটা বললো
–মা, রাস্তায় থুতু ফেলা বারণ!
সনকা বিছানা গুটিয়ে নিল। সকালে পেটে কিল মেরে থাকা ছাড়া উপায় নেই। কাল মুড়িও জোটেনি। টুকটুকির জন্য মনটা খারাপ, মেয়েটা কর্পোরেশন-স্কুলে ক্লাস সিক্সে উঠবে। সনকা ঠিকে কাজ করে ছটা বাড়িতে। লকডাউনের জন্যে ছুটি দিয়েছে পাঁচটা বাড়ি। তিনটে বলেছে মাইনে কাটবে না। বাকি দুটো বাড়িতে ছুটি, তবে আদ্ধেক মাইনে – গেলে ঢুকতেও দেবে না। সরকার বাড়ির বুড়ো কত্তা-গিন্নী যেতে বলেছে। সেখানে হাত-পা-মুখ সাবান দিয়ে ধুয়ে মাস্ক পড়ে কাজ করতে হয়। টুকটুকির স্কুল ছুটি, ভাবছে ওকেও নিয়ে যাবে আজ।
তাড়াতাড়ি খিচুড়ি চাপিয়ে দেবে। কাজ থেকে ফিরেই দুজনে খেয়ে নেবে। অবশ্য সরকার গিন্নী কিছু খেতে দিতেও পারে মেয়েটাকে… দোটানাতে চাল-ডাল বার করার সময় ফোন এলো সরকার বাবুর – দোকান খোলা থাকলে পাঁচশো ছাতু এনো।
দোকানে লাইন দিয়ে ছাতু কিনে মা-মেয়ে ঢুকলো সরকার-বাড়িতে। মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে দেখে গিন্নী একটু অসন্তুষ্ট হলেন মনে হলো। কিন্তু মুখে কিছু বললেন না, সদ্য চান করেছেন, মুখে ইষ্টনাম, হাতে ধূপ, গঙ্গাজল। কত্তা এসে টুকটুকিকেও আলাদা মাস্ক দিলেন; তারপর বললেন,
–সনকা, তুমি আর মেয়ে লকডাউনের বাকি দিনগুলো এখানেই থেকে যেও।