• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

সূর্য

আজ নিয়ে পাঁচদিন। সব বন্ধ। কোথাও কোনো সাড়াশব্দ নেই। এক মুহূর্তের জন্যেও বাইরে বের হয় নি শতদল। পাড়ার ছেলেরাই রান্না করা খাবার দিয়ে যায়। শতদল টাকা দিয়ে দেয়। কারণ এই সত্তর বছর বয়সে তার পক্ষে রান্না করে খাওয়া সম্ভব নয়।
সারা বাড়িটায় শতদল একা। যতদিন যাচ্ছে ভয়টা যেন আরও বুকের মধ্যে চেপে বসছে। চোখে দেখা যায় না একটা পোকা দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দিল মানুষের !
একটু গা গরম আর কাশি হলেই মাথায় চিন্তার পাহাড় ভেঙে পড়ে। যদি সত্যিই এইসময় কিছু একটা হয়ে যায় তাহলে বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে। শোবার ঘরের জানলাটাও তিনদিন খোলে নি শতদল। যদি কোনো ভাইরাস ঢুকে পড়ে। মুড়ি খাচ্ছিল শতদল। হঠাৎ যেন মনে হলো জানলায় শব্দ হচ্ছে। উঠে গিয়ে জানলা খুলতেই দেখে একটা বছর বারোর ছেলে। —– দাদু আমি সম্বিত। কেমন আছেন ?
—– তোমাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না বাবা।
ছেলেটা একটা ফ্ল্যাটের দিকে আঙুল দেখিয়ে  বলল —– ওই ফ্ল্যাটটার চারতলায় আমরা থাকি।
—– কিছু বলবে বাবা ?
—– এই তিন দিন আপনি এই জানলাটা খোলেন নি কেন?
—– তুমি কি করে জানলে ?
—– আপনি তো আমার সূর্য।
—– মানে ?
—– আপনি রোজ ঘড়ি ধরে সাড়ে পাঁচটায় ওঠেন। আর আমার মা বলে, সূর্য উঠে গেছে। এবার উঠে পড়। আমি তো প্রথমে বিশ্বাসই করতে চাই নি। এত ভোরে সূর্য ! একদিন মা জানলার কাছে এসে মানেটা বুঝিয়ে দিল।
কতদিন পরে শতদল আজ হাসলো। —– তোমার ভয় করছে না বাবা ? বাইরে বেরিয়েছ কেন ?
—– মা বলল, দাদুর খোঁজ নিয়ে আয়।
—– এই সময় বাইরে না বেরোনই ভালো।
—– ভয়ের কিছু নেই দাদু। প্রতিটা মানুষ তার নিজের নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাক। আর নিয়ম মেনে চলুক। তাহলেই আমরা এই বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়ে যাব। সরকারের কাজ মানুষকে সাবধান করা। মানুষের কাজ নিয়ম মেনে ঘরে থাকা। আমার কাজ ঘরে থেকে পড়ে যাওয়া। আপনার কাজ নিয়ম মেনে ঘরের জানলাগুলো খোলা।
শতদলের মনের মধ্যে যেন একটা শক্তি এলো। তার খোঁজ নেওয়ার মানুষও তাহলে আছে। শতদল দেখলো, জানলা দিয়ে আসা রোদ ঘরটাকে আলো করে দিয়েছে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।