• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় রুমা পণ্ডিত

লকডাউন

লকডাউনের আজ দ্বিতীয় দিন,করোনা ভাইরাস বলে কি এক রোগ এসেছে, মাথা খারাপ হবার জোগার কাজুর, সব্জী বিক্রি করেই সংসার চলে ওর, দিনের বেলায় সাইকেলে সব্জির ঝুড়ি বেঁধে বাড়ি বাড়ি যায় বিক্রি করতে।বিকেল দিকে একটা চপের দোকানে চপ ভাজে। এই লকডাউনে তো সব বন্ধ! কি করে চলবে দিন! পাইকারি বাজার থেকে আনা কিছু সব্জী এখনও ঘরে আছে, তাই নিয়েই বেরোলো কাজু।পাইকারি বাজারে এখন ভালোই দাম হবে সব্জির, তার চেয়ে একটু রাত থাকতে উঠে বলাইদার মাঠ থেকে যদি সব্জী আনা যায় তাহলে এই কদিনে বেশ দু পয়সা বাড়তি রোজগার করা যাবে।এসব ভাবতে ভাবতে সাইকেলের প্যাটেলে পা রাখলো কাজু।
বাজার মোড়টা পেরোতেই একটা পুলিশের গাড়ি দেখতে পেলো কাজু, চার পাঁচজন পুলিশ, সবাইকেই আটকাচ্ছে।সাইকেল থেকে নেমে দাঁড়ালো কাজু, একটা পুলিশ সাইকেলটা ভালো করে চেক করে, বললো দুপুর বারোটার মধ্যে ঘরে ঢুকে যেতে, আর মুখে গামছা বেঁধে নিতে।যাক বাবা কিছু পয়সা নিয়ে ফিরতে পারবে, চাল ডাল তেল আলুটা মধুদার দোকান থেকে নিয়ে নিতে হবে।
“মনোরম ” আবাসন, এখানে ঢুকলে কাজুর বেশ অনেকটাই বিক্রি হয়ে যায়।সব বৌদিরাই কিছু না কিছু নেয়, এক শুধু ওই দোতলার বুড়িটা তেমন কিছু তো নেয়ই না, যদি বা দু একদিন নেয় তো পরের দিনই সেই সব্জী কতটা পঁচা ছিল, বীচ ছিল, স্বাদ ছিল না এমন গন্ডা খানেক অভিযোগ করে।আজ তো তার সাইকেল ঢোকা মাত্র ছেঁকে ধরেছে আবাসনের প্রায় সব্বাই, আজ মনে হচ্ছে এখানেই সব শেষ হয়ে যাবে, সুযোগ বুঝে কাজুও প্রায় দ্বিগুণ দাম নিতে শুরু করলো।তাতেও ঝুড়ি খালি।
দোতলার বুড়ির শুধু কাঁচা লঙ্কা লাগবে, উনি আবার বাতের রুগি, ওপরে গিয়েই দিয়ে আসতে হবে।এক রাশ বিরক্তি নিয়ে একশ গ্রাম লঙ্কা নিয়ে ওপরে উঠলো কাজু।আজ বেশ ভালোই রোজগার হয়েছে, সংসারে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস আজ ঘর ঢুকিয়ে নিতে হবে, এই লকডাউন কতো দিন চলবে কে জানে!
বুড়ির কাছে দাম বেশি নেওয়া খুব কঠিন, এক পয়সা বেশি দিতে বুড়ির গা জ্বলে যায়, কিন্তু আজ কাজু দ্বিগুণ দাম নিয়েই ছাড়বে, নয়তো লঙ্কা দেবেই না।কিন্তু কাজু অবাক হয়ে গেলো,  আজ একটা কথাও বললো না বুড়ি, যা দাম চাইলো তাই দিল।
তারপর একটু দাঁড়াতে বলে ভেতরে গেলো,  উফফ এদিকে বারোটার পর রাস্তায় দেখলে পুলিশে ঠ্যাঙাবে,”কই গো মাসিমা কি বলবে বলো তাড়াতাড়ি “ব্যস্ত হয়ে কাজু চ্যাঁচ্যাঁতে লাগলো। বুড়ি খোঁড়াতে খোঁড়াতে এসে হাত বাড়িয়ে বললো,” এই নে কাজু, রাস্তায় বেরোলে এটা পরে বেরোবি,দোকানে তো পাওয়া যাচ্ছে না, তাই নিজেই বানিয়েছি কয়েকটা”।কাজু দেখলো একটা মুখে বাঁধার, কি যেন বলে ওগুলো মাক্স নাকি, টিভিতে দেখেছে সবাই পড়ছে এখন।কাজুর বুকটা কেমন করে উঠলো,চোখে জল এসে গেলো, পাছে বুড়ি দেখে নেয়, ও তাড়াতাড়ি নেমে গেলো সিঁড়ি দিয়ে।আবাসনের সুইপার নিতাইদা সিঁড়ি ঝাঁট দিচ্ছিল, ওর দিকে তাকিয়ে হেঁসে  বললো,”আমাকেও দিয়েছে”। পেছন থেকে বুড়ি তখনও  চ্যাঁচ্যাঁচ্ছে,”এই হতভাগা মুখটা ঢেকে নে”।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।