T3 || আমি ও রবীন্দ্রনাথ || বিশেষ সংখ্যায় ঋতশ্রী মান্না
by
·
Published
· Updated
পঁচিশে বৈশাখ
পঁচিশে বৈশাখ।সন্ধেবেলা।রীণামাসির বাড়ি এসেছিলাম।সেদিন কারেন্ট ছিলোনা বহুক্ষণ… ঝড় উঠেছিল।একটা মোমবাতির মৃদুভাষী আলো, আমি রীণামাসি আর রবীন্দ্রনাথ… মেঝের ওপর রীণামাসির সুনিপুণ তুলির টানে ফুটে ওঠা আল্পনার ওপর এসে থমকেছিল মোমশিখাটি…
মেসোর সাথে রীণামাসির সম্পর্কটা তিক্ত না হোক,অন্ততঃ মধুর ছিলোনা।মাসি স্থিরস্বরে মেসোর ঘরের সামনে গিয়ে দরজাটা টেনে দিতে দিতে বলেছিল,”তোমার অসুবিধে হবে।দরজাটা বন্ধই থাক।”
পাড়ার মহিলাদের আড্ডা জমে উঠলে বিন্তিপিসি,রিংকিদির মা সক্কলে একবাক্যে বলত,”ওই রাবীন্দ্রিক চিন্তা,দর্শন দিয়ে সংসার হয়না।আরে, সংসারটা হল আলাদা জিনিস!করতে জানতে হয়।”
রীণামাসি সংসার করতে জানতনা। গান জানত।
ঝড়ে তছনছ একটা সংসার দরজার ওপারে রেখে গান গাইছিল মাসি,”আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার,পরানসখা বন্ধু হে আমার!”
রীণামাসির ঘরের কোণে একটা ছোট গোল টেবিল ছিল,সেগুন কাঠের।তার ওপর একটা আবক্ষ বুদ্ধমূর্তি ছিল।”গৃহস্থ ঘরে বুদ্ধমূর্তি রেখেছ কেন রীণা,সরিয়ে দিও
ওটা,–ওবাড়িতে গেলে মা প্রায়ই বলতেন রীণামাসিকে।মাসি কিছু বলতনা,হাসত।মাসির ছেলে,দ্বৈপায়নদা হঠাৎই সন্ন্যাস নিয়ে গৃহত্যাগ করেছিল। মা খবরটা পেয়ে বলেছিল,”হবেনা? কতবার সাবধান করেছি।ঘরে বুদ্ধমূর্তি রাখলে ছেলে সন্ন্যাসী হয়ে যায়।কে আর শোনে…”
সেদিন বুদ্ধদেবের ওপর অকারণ রাগ,ক্ষোভ হচ্ছিল আমার। চুরমার করে ফেলতে ইচ্ছে করছিল সব।
সেবছরই পঁচিশে বৈশাখ রীণামাসির বাড়িতে আমরা ‘চন্ডালিকা’ করেছিলাম।দ্বৈপায়নদা আনন্দ সেজেছিল।আমি প্রকৃতি।গেরুয়া বসনে এত অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল দ্বৈপায়নদাকে ! চোখ ফেরানো যাচ্ছিলোনা!
…আসবে সে,আসবে সে আসবে
আমার জীবন-মৃত্যু সীমানায় আসবে
নিবিড় রাত্রে এসে পৌঁছাবে পান্থ,
বুকের জ্বালা দিয়ে আমি
জ্বালিয়ে দিব দীপখানি–
সে আসবে।
পঁচিশে বৈশাখ,বুদ্ধপূর্ণিমা একইদিনে পড়েছিল। সেদিন আসলে আমরা কি উদযাপন করেছিলাম?ব্যথা?শোক?প্রেম? পূজা? ত্যাগ?মুক্তি না বন্ধন?
আমি জানিনা। রীনামাসিও সম্ভবত জানেনা। হয়ত রবীন্দ্রনাথ বলতে পারতেন।