• Uncategorized
  • 0

গল্পবাজে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (প্রথম পর্ব)

অথ ভূত কথা

ভূত নিয়ে আলোচনা আমার ধাতে সয় না। সেই ঘুরে ফিরে ছোট বেলার ‘ ভূত কোথাকার’ শব্দ- বন্ধ
আমাকে তাড়া দিয়ে চলেছে। হয়তো বা সেই তাড়নে-ই এই ‘ অথ ভূত কথা’। ভূত আছে কী নেই, তা আমার বিবেচ্য নয়, তবে ভূতেরা যে আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। ধরা যাক, সত্যজিৎ মশাই’র গুপী- বাঘার রমরমার কথা; ঐ ভূতের রাজার নেক- নজরে না পড়লে কী গুপী- বাঘার জীবনের দৈন্যদশা ঘুচতো? না, ভূতেরা সব ভূত, ভবিষ্যৎ জানে; আমাদের জীবনে দৃশ্য, অদৃশ্য ভাবে কত কিছুই ঘটিয়ে থাকে, কল্পনার জগতটাকে যে কতটা বিস্তৃত করে রেখেছে, তা কেবলমাত্র ভূক্তভোগীরা
সেটা অনুভব করতে পারে। যাক, আর ধান ভানতে শিবের গীত গাইতে পারবো না, সরাসরি আসল কথাতে ঢুকে পড়ি।
আমার বয়স তখন কত আর হবে, এই বড়জোর পাঁচ- ছ’বছর।
মামার খুবই ন্যাওটা ; মামা ম্যাট্রিক পরীক্ষার্থী, উবুড় হয়ে শুয়ে দিন- রাত পড়াশোনা করে, কাছেই কালির দোয়াতটা একরকম খোলাই থাকে, পাশেই শুয়ে থাকে কলম, মাঝে মাঝে মামা কলম দোয়াতে ডুবিয়ে কী সব লেখে। আমার কিন্তু ঐ দোয়াতের প্রতি আকর্ষণটাই বেশি। গুটি গুটি মামার পাশে শুয়ে দোয়াতের দিকে হাত বাড়াই; যথারীতি সেটা আমার প্রতি সদয় হয়ে নিমেষে আমাকে সুসজ্জ্বিত করে; মা’র ‘ভূত- সম্বোধন’টা ঐ থেকে শুরু। কখনো, কখনও মামাও আমাকে সুলেখা- রঞ্জিত করে রঘু ডাকাত বা বিধু ডাকাতে রূপান্তরিত করে ভূত শব্দে পাকাপোক্ত করে বাড়ি মাত করতো। আমি মামার -বাড়ি আসবার আগেই শহর থেকে বেশ কিছু সুলেখা-কালির বড়ি মামা আনিয়ে রেখেছে, ভাগ্নের সুলেখা প্রীতি, মামা বিশেষ ভাবে
অবগত। সুতরাং, আনন্দেই দিন কেটেছে আমার ভূতানন্দের দিনগুলো।
রাতে আমার বড়- বাইরের বেগটা চাগাড় দেয়, তাই ঘুমের ব্যাঘাতের জন্য মাও আমাকে রাতে মামার কাছে চালান করে বোধ হয় স্বস্তি বোধ করে থাকতে পারে। যাই হোক, সময় এগিয়ে চলেছে।
শীতকাল, গভীর নিশুতি রাত।
মামা হ্যারিকেনের আলোয় পড়ছে, আমার বড়- বাইরের বেগ উঠেছে; বলতেই মামা হ্যারিকেন হাতে বাড়ি র সদর দরজার দাওয়ায় বসে আছে ,আর আমি একটু দূরে কাঁচা ড্রেনে হেঁট হয়ে নিজেকে হাল্কা করছি, ভিতরের বেগটাকে মোটামুটি প্রশমিত করে চলেছি, এমন সময় ,একটা শোঁ, শোঁ —–
পাড়া গাঁ। গ্রামের মাঝখান দিয়ে প্রধান রাস্তা গ্রামান্তরে চলে গেছে, লোকে এটাকে বলে ‘কুলি’; কয়েক টা বাড়ি পর পর এই কুলি থেকে দু’দিকে বাঁ, ডাঁ- এ রাস্তা চলে গেছে। এক এক রাস্তায় এক এক পাড়া, আমার মামার বাড়িটা সামন্ত পাড়ায়, সামন্তদের গোষ্ঠীর আধিক্য; আর আমি কুলির অনতিদূরে সামন্ত পাড়ার কাঁচা ড্রেনে রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে নিজেকে হাল্কা করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এবার শোঁ, শোঁ শব্দটা প্রবলবেগে কুলির দিক থেকে সামন্ত পাড়ার দিকে ধেয়ে আসছে, আমার পাশ দিয়ে কী যেন চলে গেল, তারপর ধুলো উড়িয়ে প্রবলবেগে কী যেন চলে গেল; মামা, ভয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি বললাম, ” মামা, ওটা কী গেল? ”
মামা, তাড়াতাড়ি দরজা খুলে আমায় হিড়হিড় করে টেনে দরজা বন্ধ করে দিয়ে হাঁফাচ্ছে। প্রশ্নোত্তরে মামা বললো, ‘ গো- দানা, গোভূত’। আমি ভাবলাম, ভূত যখন, তখন ভয় নেই, কারন যতই হোক স্ব- জাতি তো! আমি ছোট বলে আমায় ওরা এড়িয়ে গেছে। মামা, বড় তো, তাই ভয় পেয়েছে।
পরেরদিন, গ্রামে রাষ্ট্র হয়েছে, যে মন্ডল পাড়ার একজনের সদ্যোজাত বকনা বাছুর কীভাবে ছাড়া পেয়ে ছুট লাগিয়েছে, আর তার গো- মাতাও বৎসের পিছনে ঝড়ের বেগে ধাওয়া করেছে, চারদিকে খোঁজ, খোঁজ; শেষে সবৎসা গো- মাতাকে মাঠের ঝিলের ধারে কচি কচি ঘাস চিবোতে দেখা গেছে, আর বকনা র চোখে মুখে আনন্দ, রাতের সব দুধটা সে খেতে পেয়েছে, ‘মাতা সাথে খেলে বকনা, সানন্দে করি
দাপাদাপি। ‘

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।