সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব – ৫)

শহরতলির ইতিকথা

     রমা-শান্তিরা, নিজেদের বাড়িতে আসার পর পরই নিভাননী দেবীর সর্ম্পকীয় ওপাড়ার দাদার ছেলে, মানে ওদের  মামাতো ভাই, বিরূপাক্ষের আনাগোনা শুরু হয়েছে; এক রকম সেই  ওদের সংসারের  হাল ধরেছে।নিভাননী দেবী, কোলকাতার  মেয়ে, আর রমা-শান্তিরাও বহুদিন এ মফঃস্বল শহর ছেড়ে কোলকাতার  বাসিন্দা ছিল; বলতে গেলে, এ শহরের হালচাল প্রায় অজানাই তাদের কাছে; আবার  রয়েছে, মফঃস্বলের  মানুষের প্রতি উন্নাসিকতা, তা তো  কথাবার্তায় স্পষ্ট; কারে পড়ে, তারা কোলকাতা ছেড়ে, এ মফস্বল-শহরে আসতে বাধ্য হয়েছে।
     বিরূপাক্ষ ঘোষ, সুন্দর আড়বাঁশি বাজায়। রঞ্জনরা, গ্রিষ্মকালের রাতে  প্রায়দিনই তার বাঁশির সুমধুর ধ্বনি শুনতে পেত। গ্রীষ্মের  রাতে বিরূপাক্ষ, গভীর রাত পর্যন্ত  বাঁশি বাজাতো; রঞ্জনদের কাছে সে ‘ভাইয়া’ নামে পরিচিত; দেখতে খুব একটা সুদর্শন না হলেও, যৌবনের চাকচিক্যে সে যে সুপুরুষ তা বলা যেতেই  পারে।
সে এখন, সন্ধ্যার  পর বেশ অনেকক্ষণ ওদের ঘরে থাকে; ছেলেদের জোরে জোরে পড়তে বলে, ধর্মদাস  মশাই  ও স্ত্রী নিজেদের মধ্যে ওদের নিয়ে কথাবার্তা বলাবলি করে। ঘরে দুই  সমর্থ মেয়েকে রেখে, নিভাননী দেবী, হাতে হ্যারিকেন নিয়ে, বাইরে থেকে সদর দরজার খিল, হাতল দিয়ে ঘুরিয়ে বন্ধ করে একটু দূরের বাড়িতে সময় কাটাতে যান। রাস্তায় মিউনিসিপ্যালিটির  আলো থাকলেও, তা এত দূর দূর অন্তর ল্যাম্পপোষ্টে আছে, তাতে আর যাই হোক, রাস্তার  অন্ধকার দূর হয় না। শহরে, সন্ধ্যার পরে বাড়িতে তাঁর হাঁফ ধরে যায়; কোলকাতায়, সন্ধ্যায় তো লোকে বাইরে বেড়াতে বেড়োয়, আর এই শহরে—। নাঃ, তিনি, দম বন্ধ  হয়ে না মরে, সন্ধ্যায় একটা হরিনামের আসরে সময় কাটান; আসেন সেই  রাত সাড়ে ন’টা-দশটা নাগাদ। এভাবেই  চলছে, এ শহরে আসার কয়েক সপ্তাহ পর থেকেই। তাঁর আত্মীয়দের  সঙ্গে সদ্ভাব থাকলেও, মনে তো রয়েছে উন্নাসিকতা, হয়তো তাই অন্য কোথাও প্রাণের রসদ খুঁজতে বের হন।
    ধর্মদাসবাবু  খুব শীঘ্রই  নিজের একটা আস্তানা করতে তৎপর হয়েছেন। জায়গা তো কেনা হয়েছে, কিন্ত, ঘর তৈরি করতে তো টাকা লাগবে, সেটা আসবে কোথা থেকে, সেই  চিন্তায়, তিনি উদ্বিগ্ন। নিজেদের গঙ্গার ঘাটের বিহারী ইট খোলার মালিক, কিস্তিতে ইট দিতে রাজি হয়েছে, কিন্ত সিমেন্ট  তো কন্ট্রোলে; সরকারের  কাছে দরখাস্ত  করে কবে যে আসবে, তা একরকম  অনিশ্চিত। এদিকে ঘরের ওপাশ থেকে যা উদ্ভিন্ন যৌবনের উচ্ছ্বাস  ভেসে আসে, তা হাজরা দম্পতির মনে পুত্র দের নিয়ে আতঙ্কের কারন হয়ে উঠেছে।
চলবে
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।