সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব – ৬)

হরেকৃষ্ণ ঘোষালের বংশধারার আর এক গোষ্ঠী, প্রাসাদের দু’ আনার অংশীদার, রাজেন্দ্র ঘোষালের ছেলেরাও ব্যবসা- বাণিজ্য ও লেখাপড়া শিখে সমাজে বেশ প্রতিষ্ঠিত। তাদের মধ্যে বড়, নারায়ণ ঘোষালও রাঘবেন্দ্রের সমবয়সী। নারায়ণ বাবুরা ছ’ভাই। সে, নিজে প্রত্যক্ষ- ভাবে রাজনীতির সঙ্গে না জড়ালেও, মেজ- ভাই মাধব, ঠিকেদারি ব্যবসার সংগে রাজনীতিতেও বেশ জড়িয়ে আছে। তৃতীয় ও চতুর্থ জন পড়াশোনায় খুবই ভালো; সেজ- জন, কোলকাতার শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ছে ও পরের জন মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি ভর্তি হয়েছে।আর, পরের দু’ ভাই, ধুরন্ধর ঘোষাল ও বদ্যিনাথ ঘোষাল, স্কুল- ছুট হয়ে দাদা, নারায়ণের কাছে ব্যবসায় কিছুকাল শিক্ষানবিশ থেকে, এখন নিজেদের ব্যবসা উদ্যোগে তৎপর। ওঁনাদের বিধবা মা এখনও জীবিত; তিনি খুবই ব্যক্তিত্ব সম্পন্না; সব ছেলেই মাকে খুব সম্মান করে, মা’র কথাই, তাদের কাছে শেষ কথা। বাবার মৃত্যুর পর তাঁরা ভগ্নপ্রায় প্রাসাদ ত্যাগ করে, শহরের মাঝে, বাবার তৈরি অর্ধ- সমাপ্ত বাড়ি, সম্পূর্ন করে উঠে এসেছেন। নারায়ণ ঘোষালের বাবা, চাকুরি- জীবী ছিলেন; আর্থিক- অবস্থা, মোটেই ভালো ছিল না। তাই নারায়ণ ঘোষালকে ম্যাট্রিক পরীক্ষার পরই ব্যবসায় নামতে হয়েছে;ইতিমধ্যে, বেশ কিছুকাল শয্যাশায়ী থাকার পর পিতার মৃত্যু ঘটেছে। ভাই’রা ছোট, আবার পড়াশোনা করছে; তার খরচ ও এত বড় সংসারের ব্যয়ভার সামলাতে নারায়ণ ঘোষালকে উদয়াস্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে। মা, ইন্দুমতী, ছেলেদের নিয়ে বুদ্ধিমত্তায় সংসার সামলেছেন। জীবনসংগ্রামে সফল হলে মা, নারায়ণকে সংসারী করেন। নতুন বাড়িতে উঠে এলে, বেশ ধুম- ধামের মধ্যে, মাধবের বিয়ে সুসম্পন্ন হয়েছে। নারায়ণবাবুর প্রথম সন্তান,কন্যা, অপরিণত; উঠতে, বসতে পারে না। শুধু শুয়ে থাকে;তাঁকে দেখলেই খিলখিল করে হাসে। এই মেয়েই তাঁর ঘরে লক্ষ্মী রূপে এসেছে; এ হওয়ার পরই তাঁর আর্থিক অবস্থা ফিরেছে। এর যাতে কোনরকম অনাদর না হয়, তার জন্য,সব সময়ের জন্য দু’টো আয়া রেখেছেন। তিনি জানেন, লক্ষ্মী বড়ই চঞ্চলা, কখনও এক জায়গায় বেশিদিন অধিষ্ঠান করেন না। তাই কোথাও যাবার আগে মেয়ের হাসি দেখে বেরোন।
নারায়ণবাবু, জীবনের শুরুতে বিভিন্ন ব্যবসায় ভাগ্য ফেরানোর চেষ্টা করলেও, খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেননি। অন্য গোষ্ঠীর রাঘবেন্দ্রবাবুকে ধরে,
সেজ- ভাই কিঙ্করকে প্রায় ফ্রিতে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। ন’ভাই প্রাণকৃষ্ণ, কোলকাতায় ডাক্তারি পড়ছে, তার খরচও বিশাল–সেটা, তাঁকেই ব্যবসার আয় থেকেই সামলাতে হয়েছে। এখন তিনি পরিবহন ব্যবসায়ে সফল হয়েছেন; বেশ কয়েকটা তাঁর লরী, স্থানীয় কারখানাগুলোতে খাটছে; রয়েছে দু’খানা ট্যুরিস্ট বাস; সেগুলো, প্রায়ই, আসাম, উত্তর- প্রদেশ, নেপাল, ভুটান ও হিমাচল প্রদেশে
ট্যুরিস্ট নিয়ে যায়। নিজের সাদা আ্যমবাসাডর গাড়ি নিয়ে দু’তিন মাস অন্তর, প্রায় দিন-দশেকের মত, তিনি ব্যবসায়িক কাজে নেপাল, ভুটান প্রভৃতি অঞ্চলে কাটিয়ে আসেন; বিশ্বস্ত নেপালী ড্রাইভার ,বাহাদুর,তখন তাঁর কেবল সঙ্গী।ফিরে এলে স্থানীয় ইটখোলার মালিক ও একটা ঘড়ির দোকানদার ,ওনার সঙ্গে দেখা করতে আসেন; গভীর- রাত্রি পর্যন্ত,তাঁরা আলাপ- আলোচনায় মগ্ন থাকেন; ঐ সময়, ঘরে কারও ঢোকার অনুমতি নেই, যদিও নারায়ণবাবুর ব্যবসার সঙ্গে, ওদের ব্যবসার আপাতদৃষ্টিতে কোন যোগ থাকার কথা নয়।
আনাচে-কানাচে কান পাতলে, শোনা যায়, তাঁর ব্যবসার গোপন কথা; ভাই’রা কেউই তা গ্রাহ্য করে না, বাঙ্গালীর ঈর্ষাপরাণতা তো সুবিদিত।
মেজ- জন,মাধবঘোষালও, অন্যগোষ্ঠীর শিবশংকরের মত একই কারখানায় ঠিকাদারি ব্যবসা করে; রাজনীতির দাদাদের
সংগে প্রত্যক্ষ যোগ, সুতরাং বেশ
ক্ষমতাশালীও বলা চলে। দাদা নারায়ণের সঙ্গে রাঘবেন্দ্র বাবুর
সুসম্পর্ক থাকলেও শিবশংকরের সংগে মাধবের ‘ সাপে- নেউলে’ সম্পর্ক; ব্যবসায়িক রেষারেষিই একমাত্র কারণ।
চলবে