সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব – ২৩)

সাদা মিহি বালি
তৃতীয় অধ্যায় ৫ পর্ব
বিয়ের জাঁক- জমক শেষ হয়েছে। সাঁনাই’র মুর্চ্ছনা অন্তর্হিত। আত্মীয়- স্বজন, যে যার বাড়ি ফিরে গেছে; এবার সবাই এখন বাস্তব পটভূমিতে। বাড়িতে অফিস চলছে পুরোদমে। রমেন্দের স্ত্রী, ইন্দর ও পুত্র গুঞ্জনও তাদের পুরোনো বাড়িতে ফিরে গেছে। এখন এই নতুন বাড়িতে রয়েছে রাঘবেন্দ্রবাবু ও স্ত্রী রমনী, আর অমরেন্দ্র ও নতুন বৌ মনোরমা। রোহনের ঘরটা বিয়ের সময় খোলা হলেও, পরে তা আবার তালা-বন্ধ করা হয়েছে।
অমরেন্দ্র, সেই সকাল বেলায় টিফিন খেয়ে ইট- খোলায় চলে যায়; ওখানে দুপুর- বেলায় খাওয়া- দাওয়ার ব্যবস্থা আছে; ফিরতে, ফিরতে তা প্রায় রাত আটটা- সাড়ে আট-টা হয়ে যায়। রমনী, একদিন, এনিয়ে রাঘবেন্দ্রবাবুর কাছে বেশ অনুযোগ করে বলে, ” নতুন বৌ, তাকে একটু অমরের সময় দেওয়া
উচিত; তা না করে চব্বিশ- ঘণ্টার
মধ্যে, অধিকাংশ সময় যদি বাড়ির বাইরে কাটায়, তবে দু’জনের বোঝা পড়া, কখন হবে শুনি! স্বামী- স্ত্রী’র মধ্যে রসায়নটা গড়ে উঠতে সময় দিতে হবে। আজকালকার ছেলে- মেয়েরা যেন কী রকম! ওদের আমি বুঝতে পারি না। শ্বশুর মশাই- শ্বাশুড়ী মা যখন চলে গেলেন, তখন, এই অমর ও শিবানীকে আমিই তো কোলে- পিঠে করে মানুষ করেছি; পরে তো রোহন এলো। কিন্তু আজ, সেই অমরকে আমি চিনতে পারছি না; আমার বুঝতে কোথায় ভুল হচ্ছে। আপনি অমরকে একটু বলুন; মনোরমাকে
একটু বেশি করে সময় দেওয়া দরকার। “
রাঘবেন্দ্রবাবুও অমরকে পুত্র- স্নেহে মানুষ করেছেন; তার প্রতি কঠোর মনোভাব নিতে পারেন না। ইট- খোলাটা, কাগজে কলমে অমরের নামে থাকলেও তিনি সেটা অমরকে বলেননি, পাছে, অমর, নিজের ইচ্ছা মত খোলা চালিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনে; ব্যবসায়ে, এখনও পরিপক্কতা আসেনি। এবার দায়িত্ব ঘাড়ে চেপেছে, আশা করা যায়, শীঘ্রই সে পরিণত ব্যবসায়ী হয়ে উঠবে, ততোদিন নিয়ন্ত্রণ রাখা দরকার। ‘ঘর পোড়া গরু, সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়’—একবার নিয়ন্ত্রনের রশি আলগা করায় কয়লা- খনি হাতছাড়া হয়েছে, তাই
তিনি প্রত্যেক কারবারের আলাদা আলাদা তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন
প্রতি মাসে তৈরি করান; তা থেকে রাঘবেন্দ্র বাবু, প্রত্যেক ব্যবসায়ের
হাল- হকিকৎ বুঝে, নিয়ন্ত্রন করে থাকেন; প্রয়োজনে, সেই ভাই’র সঙ্গে কথা বলেন,সমস্যা থাকলে, সমাধানের পথ বাতলান। বাবা- মাকে কথা দিয়েছেন, বুক দিয়ে সব ভাই- বোনকে আগলে রাখবেন, কিন্তু, না,হয়তো পারেননি, তাই শিবানীটা——–।
” অমর এলে, রাতে একবার আমার সঙ্গে দেখা করতে বলবে”, বলে রাঘবেন্দ্রবাবু, নিচের তলায় নেমে, অফিস ঘরের দিকে গেলেন। তিনি একটু চিন্তিত, বয়সের ভারে অবসন্ন।
অমরটা ছোট থেকেই একটু অন্যরকম, কোন বিষয়ই গভীর ভাবে চিন্তা- ভাবনা করে না; হয়তো, তাঁদের আস্কারেতেই এরকম হয়েছে। পড়াশোনাটা
করলো না বলেই তো, ওকে ব্যবসায়ে নামালেন। শিবানীটা——– তবু পড়াশোনায় ভালো ছিল; দু’বার ক্লাস নাইনে ফেল করে, রোহনের সঙ্গে এক ক্লাসে পড়তে হবে বলে, অমর স্কুল যেতে হল গররাজি; এখন, স্ত্রী, মনোরমার সঙ্গে মানসিক ভাবে খাপ খাইয়ে চলতে না পারলে তিনি তো নিজেকেও ক্ষমা করতে পারবেন না, এসব রাঘবেন্দ্রবাবুর মাথায় ঘোরপাক করছে ;শিব-শংকররের সাবধানী কথা- বার্তা তাঁর মনে পড়ে; যাই হোক, অমর এলে, ওদের দু’জনকে কোথাও বেড়াতে পাঠিয়ে দেবেন, তাহলে হয়তো ওরা পরস্পরকে ঠিক বুঝতে পারবে, নিজেদের মধ্যে রসায়নটাও বেশ গাঢ় হয়ে উঠবে। কিন্তু, যদি তা না হয়——।
চলবে