সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব – ১৫)

শহরতলির ইতিকথা
পাড়ার এক দাদা,রাজীবকে,বাণিজ্য নিয়ে পড়ার উপদেশ দিল। সজীবও বাণিজ্য নিয়ে নৈহাটির সান্ধ্য কলেজে পড়ছে। সজীব চাকরি করে,ওর পক্ষে তো সান্ধ্য কলেজই ঠিক;আবার কোলকাতা ইউনিভার্সিটির অধীনস্থ কলেজও ওটা। রাজীবকে তো দিনের বেলা পড়তে হলে,মহসিন কলেজ অথবা চন্দননগরের দুপ্লে কলেজে পড়তে হবে;এবারে কলেজগুলো যদি ইতিমধ্যে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হয়ে যায়,তবে!
যাই হোক,বন্ধুদের সঙ্গে রাজীবও নৈহাটির ঋষিবঙ্কিম চন্দ্র কলেজে,ফর্ম নিতে এসেছে। স্টেশনের ফুট-ওভার-ব্রীজ দিয়ে নেমে পশ্চিমে দিকে, দক্ষিনমুখী কাঁঠালতলার রাস্তা ধরে সোজা কলেজ। রাস্তার বাঁ দিকে বিস্তীর্ণ খোলা মাঠ,এখানে,ওখানে ছড়ানো, রেলের দু’একটা একতলা কোয়ার্টার,ডানদিকেও রয়েছে কোয়ার্টার ও অল্প একটু দূরে ডানদিকে অগণতি রেল লাইন ,রেল-ইয়ার্ড বলা যেতে পারে;দু’একটায় দাঁড়িয়ে আছে,মালগাড়ির ওয়াগান। দূরে ,দক্ষিন দিকে কাঁঠালতলার সঙ্গে নৈহাটি শহরের সংযোগের জন্য রয়েছে রেলওয়ে-ফুট-ওভার ব্রীজ;শুরু হয়েছে, বঙ্কিমবাবুর বাড়ি সংলগ্ন এলাকা থেকে নৈহাটির দিকে, নৈহাটির জুটমিলের কাছের রাস্তায় নেমেছে।
স্টেশন থেকে কলেজ যাবার পথটা একটু উঁচু,ডানদিকে নীচু; বোধহয়,মাটি তুলে রাস্তাটা করা হয়েছে। একটু চলার পরই রাস্তার বাঁ দিকে আর্চ টাইপের একটা খিলানের উপর লেখা,ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কলেজ, তলায় দু’পাল্লার একটা বন্ধ লোহার গেট; গেটের মাঝে লোক চলাচলের জন্য একটা খাঁচার দরজার মত পথ করা আছে।অনেকেই মাথা নিচু করে ঐ পথে আসা-যাওয়া করছে। রাস্তা থেকে বাঁ দিকে কলেজ অভিমুখের সময়ই চোখে পড়ে রাস্তার উপর ডানদিকে শাল-বল্গার উপর,টিনের ছাউনি দেওয়া কাঠের পাটাতন দিয়ে তৈরি স্টেশনারী দোকান,প্রায় রাস্তার লেভেলের সমান,সমান।দোকানের পিছনের শাল-বল্গার খুঁঠিগুলো,নয়ানজুলির উপর গভীর ভাবে পোঁতা আছে, বলে বিশ্বাস। এ পারে,প্রায় শতকরা আশিজনই পুব-বাংলা থেকে উদ্বাস্ত হয়ে এসেছে;জীবন-যুদ্ধে,টিকে থাকার লড়াই -এ তৎপর।
রাজীব ও তার বন্ধুরা কলেজের গেটের মধ্যে থাকা খাঁচার দরজা দিয়ে কলেজ প্রাঙ্গনে প্রবেশ করলো। গেটের দুপাশে,অ্যাসবেসটসে ছাওয়া বেশ কয়েকটা ঘর;ওগুলো,ক্লাসরুম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রাঙ্গনের ডানদিকে রয়েছে অফিসরুম ও সংলগ্ন অধ্যাপকদের বসার জায়গা। তারপর রয়েছে, ছাত্রদের ক্যান্টিন। প্রাঙ্গণে ঘাসের চিহ্ন নেই বললেই চলে;ডানদিকে বিশাল তিনতলা বিল্ডিং, ঐখানে একতলায়, সিঁড়ির দুপাশে রয়েছে ল্যাবরেটরি ও ক্লাস রুম। মাঝে থাকা সিঁড়ি দিয়ে উঠে রয়েছে চাতাল,আবার সিঁড়ি দিয়ে ওঠে দোতলা, ও একই রকমভাবে সিঁড়ি দিয়ে তিনতলা;সেখানে রয়েছে দুপাশে সারি সারি ক্লাস রুম,লাইব্রেরি ও প্রিন্সিপাল মহাশয়ের অফিস ঘর ও সান্ধ্যবিভাগের ইনচার্জ,ভাইস-প্রিনসিপ্যাল মহাশয়ের অফিস। একতলায়,বায়োলজির ল্যাবরেটরির পাশে, বিল্ডিং’র থেকে কয়েক পা দূরে,অ্যসবেটসে ছাওয়া একটা ঘরে,ছাত্র ইউনিয়নের অফিস।
অফিস রুমের বাইরের দেওয়ালে রয়েছে নোটিশ-বোর্ড;এ বছর থেকে দিনের বেলা বাণিজ্য বিভাগ খোলা হচ্ছে,মোট ছাত্রসংখ্যা হবে একশো।সান্ধ্যবিভাগে,কেবল বাণিজ্য বিষয় নিয়েই পড়ানো হয়,সেখানে কোনোরকম ছাত্র সংখ্যার কথা বলা নেই। যাই হোক, লাইনে দাঁড়িয়ে, মার্কসিট দেখিয়ে ফর্ম নেওয়া চলছে। অফিস-রুমের এক কোনে,একটা টেবিলে ছাত্রদের জটলা চলছে; পরে জানা গেল,ঐটা বড়বাবুর টেবিল। রাজীবের টার্ন এলে, দিনের বেলায় বাণিজ্য বিভাগের ফর্ম চাইতেই,অফিসের লোকটি মার্কসিট নিয়ে,দেখে,ফর্ম নিয়ে রাজীবকে ডেকে নিয়ে, একটা টেবিলে বসে থাকা একজনের কাছে গেল।বসে থাকা ভদ্রলোক বললেন, “দেখ,আমরা এ বছর থেকে বাণিজ্য বিভাগ, দিনের বেলা চালু করছি;তুমি যদি চাও, সরাসরি আজকেই ভর্তি হয়ে যেতে পারো।তুমি,এখন টাকা দিয়ে ভর্তি হও,পরে ফ্রি-স্টুডেন্টশিপ হয়ে গেলে টাকা ফেরৎ পাবে বা অন্যভাবে অ্যাডজাষ্ট হবে।
” আমি তো টাকা আনিনি,আমি আজ ফর্ম নিতে এসেছি”,বলে রাজীব।
“বেশ, তোমার ফর্মের উপর লিখে দিই,তুমি ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছ”,
বলে,টেবিলে বসা ভদ্রলোক,সিলেক্টেড ফর এঅ্যাডমিশন লিখে , ফর্মটা রাজীবকে দিয়ে বলেন,”আই-এ ক্লাসে ভর্তি হবে,কম্বিনেশন কেবল চেঞ্জ হবে,
আই-কম বলে কোনো কোর্স নেই. গ্রাজুয়েশনে গিয়ে বাণিজ্য পৃথকভাবে দেখানো হবে।”
ফর্ম নিয়ে রাজীব বাড়ি ফিরে এসেছে;ওর দাদাও তো পড়ে,তব রাতে।
দু’দিন পরে,কলেজে গিয়ে ভর্তি হল;ভর্তির দিন, কলেজের সামনে থাকা রেলের কোয়ার্টারের একটি ছেলের সঙ্গে আলাপ হল,দুজনের রোল নং পরপর হয়েছে।ভর্তির পর, ওদের কোয়ার্টার- এ গেলে,কোয়ার্টারের নং দেখে হেসেই খুন,
“হ্যারে রমিত,তোদের বাসস্থানের নং —-“।
“হ্যারে,এই জন্য তো কাউকে কোয়ার্টারে আনতে লজ্জা পাই, তবে,
‘চারশো-বিশ ‘ আমরা নই”বলেই রমিত লজ্জায় লাল হল।এই রমিতই ওর আই-এ ক্লাসের এক এবং অনন্য বন্ধু।
চলবে