ক্যাফে ধারাবাহিক উপন্যাসে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব – ১১)

শহিদ ভগৎ সিং চরিত

চতুর্থ অধ্যায় || দ্বিতীয় পর্ব

“এদিকে বাড়িতে সবাই উদগ্রীব; সর্দার কিষেন সিংজি, ‘বন্দেমাতরম’ পত্রিকায়, এই বলে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন, ‘তোমার দাদিজি,ভয়ানক অসুস্থ, শয্যাশায়ী, যেখানে থাকো, ফিরে এসো’।
বিজ্ঞাপনটা,গণেশ শংকরজি’র নজরে এলেও, তিনি কোন গুরুত্ব দেননি, কারণ, ভগৎ তো কানপুরে ‘বলবন্ত’ নামে পরিচিত। যাই হোক, বিয়ের জন্য কোন চাপ থাকবে না, এই শর্তে ভগৎ ঘরে ফিরে এসেছে; লাহোর থেকে, গ্রাম বাঙ্গায় যাচ্ছেন; দাদিজির সেবা পুরোদমে চলছে। “

“ভগৎ, এখন লাহোরে; দাদিজির সেবার সঙ্গে চলছে মস্করা;দাদিজির কথার উত্তরে বলছে, ‘ তুমি কী করে ভুলে গেলে, দাদাজি, আমাকে যজ্ঞোপবীত অনুষ্ঠানে, দেশের কাছে সমর্পণ করেছে, তোমার নাত- বৌ’র কাছে নয়,” এসব কথোপকথন সবিস্তারে, কাহিনীকার বলে চলেছে; ছেলেদের দল, গোগ্রাসে তা অবাক বিস্ময়ে গিলছে।

কাহিনীকার বলে চলেছে, “দেশে, স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে গুরুদ্বার- সংস্কার আন্দোলন
চলছে। অসাধু মহান্তরা, ঐতিহাসিক গুরুদ্বার গুলো, নিজেদের স্বার্থে পরিচালনা করছে, শিখ- ধর্মের অনুশাসনের বালাই নেই। ‘Domino Theory’ অনুযায়ী, মহান্তদের বিরূদ্ধে কিছু বলা বা করার অর্থ বিদেশী শাসনের বিরুদ্ধাচরণ করা; এ তত্ত্ব অনুসারে, ‘আজ ওদের বিরুদ্ধে, তো কাল আমাদের’। নাভা রাজ্যের (বৃটিশ আমলে) নানাকানা সাহেবের মহান্ত, অন্যায়ভাবে প্রতিবাদী শিখ ধর্মীদের উপর গুলি চালায়। ভগতের কাছে, এরকম গণহত্যা, জালিয়ানওয়ালা বাগের
হত্যার সঙ্গে তুলনীয়। তাই ৯ই সেপ্টেম্বর 1923 সালে, প্রায় পাঁচশো সত্যাগ্রহী ‘নাভা দিন’ উদযাপনে ‘জাইতো’ গুরুদ্বার অভিযান শুরু করে। বৃটিশ সরকার,ঐ মোর্চায় অংশগ্রহণ-
কারীদের 14ই সেপ্টেম্বর নির্মমভাবে হত্যা করে। প্রতিবাদে,
শিখ- ধর্ম অবলম্বনকারীদের ‘জাঠা’ পথ মধ্যে ভগৎ সি’র বাঙ্কা গ্রামে পৌঁছালে, লোকেদের থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা ( লঙ্গরখানা) ,
পিতার অনুপস্থিতিতে (সর্দার দিলবাগ সিং’র বাধা সত্ত্বেও) সব
সামলেছে ও সকলকে প্রতিবাদে
সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ভাষন দিয়েছে। ব্যস, সরকারের
বিরুদ্ধে বক্তৃতা দেওয়ায়, দিলবাগ সিং, নালিশ জানিয়ে ভগতের বিরুদ্ধে হুলিয়া বার করানোয়, ভগৎ সিংকে কিছু দিনের জন্য অন্তর্ধানে থাকতে হয়। কানপুরে থাকা কালে বন্যা বিধ্বস্ত অঞ্চলের মানুষজনের সেবারত, তাকে দেখা গেছে; ধীরে ধীরে সেবার মানসিকতায়,স্থৈর্যে,ভগৎ সিং’র ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠছে। ইতিমধ্যে, যুবকদের মধ্যে স্বাধীনতা- স্পৃহা জাগিয়ে তোলার জন্য গঠিত হয়েছে ‘ নৌ- জোয়ান
ভারত সভা’।”

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।